অপেক্ষা । রাজু আহম্মেদ প্রান্ত

রাজু আহম্মেদ প্রান্ত: প্রেম আর ভালবাসার মাঝে নাকি এক অদ্ভূত ধরনের পার্থক্য রয়েছে। সেই পার্থক্য বোঝার মত জ্ঞান কিংবা শক্তি কোনোটাই আমার মধ্যে নেই। আর থাকবেই বা কিভাবে, কোনোকিছু জানার মত ইচ্ছে কিংবা আখাঙ্কা আমার ছিলো না বললেই চলে। সকল কাজে মনের কথাটাই বেশি প্রাধন্য দিয়েছি। মন যখন যা বলে তাই করতাম। বিবেক আর বুদ্ধি আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে বেরায়। বিবেক আর বুদ্ধির কাছে পরাজয় শিকার করে নেওয়ার মত ছেলে আমি নই। লাভ কিংবা ক্ষতি কোনোটাই আমাকে মনের ইচ্ছে থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি। কিন্তু একটা মেয়ের জন্য আমি নিজের বিবেকের কাছে পরাজয় শিকার করেছি। নিজের ইচ্ছেকে তার জন্য ভুলে গিয়েছি। আমি আজ সেই গল্পটাই বলতে চাই তোমাদের কাছে।

জীবনে চলার পথে কত মেয়ের সাথেই তো দেখা হলো। কেউ ফর্সা, কেউ কালো, কেউ বা শ্যামা। বর্তমানের ছেলে-মেয়েদের তৈরি করা একটা নিয়ম আছে। সেটা হলো লাভ প্রপোজ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে প্রেমের প্রস্তাব। সুন্দর কিংবা কুৎসিত, যাই হোক না কেনো। মনের সাথে মন মিলে গেলে নিয়মের ব্যবহার করতে ছেলে-মেয়েরা ভোলে না। আমি এই বিষয়টাকে খুব একটা অনুচিত হিসেবে দেখি না। বিশাল এই পৃথিবীতে একা থাকার চেয়ে কাউকে নিয়ে থাকা ভালো। তবে আমার সমস্যা একটাই। প্রেম ভালোবাসার প্রতি ইচ্ছে আমার কোনোদিন ছিলো না। হয়তো নিজের ঢোল নিজেরই পেটানো হবে তবুও বলতে হয়, অনেক মেয়েই তো ভালোবাসার রেড সিগন্যাল দিলো তবে আমার তো পথ চলা বন্ধ হলো না।

নাচ-গান, অভিনয় করতেই বেশি পছন্দ করতাম। স্কুল-কলেজ জীবন শেষ করে কর্ম জীবনে পা। আজও কোনো রেড সিগন্যাল পথ চলা থামাতে পারলো না। হঠাৎ ফেসবুকের একটি আইডি আমার পথ চলা থামিয়ে দিলো। কোনোদিন ভাবিনি আমার রেড সিগন্যাল এই ভাবে আমার পথ চলা থামিয়ে দেবে। ফেসবুকে একটা মেয়ের নামে আইডি বারবার বিরক্ত করতো। সারাক্ষণ ম্যাসেজ দিতো। একটু পর পর আমার ছবি চাইতো।

এমনিতেই অপরিচিতো মেয়েদের সাথে বিনা কারণে কথা বলার অভ্যাসটা আমার খুবই কম। তারপর আইডিটা আমার কাছে ফেক মনে হতো। আমাকে কোনো প্রকার ম্যাসেজ জানো না করে সেই কথা ভালভাবে বুঝিয়ে বললাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অনেক বুঝানোর পরেও আমার একটিও কথাও শুনলো না। দিন বোঝে না, রাত বোঝে না সব সময় ম্যাসেজ দিতেই থাকতো। মেয়েটির জন্য কোনো কাজেই মন দিতে পারছিলাম না। সহ্য করতে না পেরে মেয়েটিকে ফেসবুক থেকে ব্লক দিতে হলো। ভেবেছিলাম এখন হয়তো একটু শান্তিতে থাকতে পারবো। অফিসের কাজগুলো মনদিয়ে করতে পারবো। কিন্তু তা হয়তো আমার কপালে নেই।

মেয়েটি অন্য আরেকটি ফেসবুক আইডি খুললো আর আমাকে ম্যাসেজ দিতে লাগলো। আমার ভাগ্যটা এতটাই খারাপ ছিলো যে ফেসবুক প্রোফাইলে আমার মোবাইল নাম্বারটা ভুল করে পাবলিক করা ছিলো। তাই নাম্বারটা সবাই দেখতে পেতো। মেয়েটি সেখান থেকে আমার নাম্বারটা নিয়ে নেয়। তারপর শুরু হয় নতুন যন্ত্রনা। সারাদিন ফোন করতে থাকে। মাঝ রাতে ঘুমাবো সেই উপায় নেই। মেয়েটিও ঘুমাতো না আর আমাকেও ঘুমাতে দিতো না। সারা রাত ফোন করতো। যতক্ষণ না আমি ফোন রিসিভ করবো সে ফোন করতেই থাকবে।

আমি অনেক বার বলেছি, আমাকে বিরক্ত করো কেনো? তার উত্তর ছিলো আমাকে দেখতে নাকি তার পরিচিত মনে হয়। আমাকে তার ভালো লাগে। আমি তাকে বলতাম আমাদের কোনোদিন কি দেখা হয়েছে যে আমাকে আপনার পরিচিত মনে হয়?
মেয়েটি বলতো, দেখা কোনোদিন হয়নি কিন্তু আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনি আমার অনেক কাছের মানুষ। আপনাকে পরিচিত মনে হয়। কতবার বলেছি আমার অপরিচিত মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না। আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না। আপনি আমাকে আর বিরক্ত করবেন না।

মেয়েটি আমার কথা শুনে উত্তরে শুধু বলতো, আমরা পরিচিত হয়ে নেই। তাহলে তো কথা বলতে আর কোনো সমস্যা নেই। মেয়েটির কথাটা সঠিক মনে হলো। তাই নিজের পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে তার পরিচয়টাও জেনে নিলাম। মেয়েটির নাম, কোথায় থাকে, কি করে, আরো অনেক কিছু। ধীরে ধীরে মেয়েটির সাথে কথা বলা শুরু হলো। কয়েক মাস পার হয়ে গেলো।

আমি মেয়েটিকে মাঝেই মাঝেই একটা প্রশ্ন করি, এত ছেলে থাকতে তুমি আমার সাথে এত কথা বলো কেনো। মেয়েটির একটাই উত্তর ছিলো। আমি নাকি দেখলে তার খুব পরিচিত।

হঠাৎ একদিন সে বলে ফেললো আমাকে নাকি সে ভালোবাসে। আমি মেয়েটিকে আগেই বলেছিলাম আমার প্রেম ভালবাসার উপর কোনো আগ্রহ কিংবা ইচ্ছে কোনোটাই নেই। তুমি আমার বন্ধু হয়ে থাকতে পারো। কিন্তু সে বন্ধুত্ব সম্পর্ক থেকে আরো কাছে আসার চেষ্টা শুরু করলো। আমি তাকে বুঝালাম, আমি পারবো না তোমাকে ভালোবাসতে। মেয়েটি তখন বলতো, ঠিক আছে। তুমি আমাকে বন্ধু ভেবেই কথা বলো। আমিও তাই করতাম। অনেক মাস, অনেক দিন এই ভাবে চলে যেতে লাগলো। মেয়েটিকে গান শুনাতাম। মেয়েটি মাঝ রাতে আমাকে ফোন করে কান্না করতো। আর বলতো তার মন খারাপ। মেয়েটি অন্য কাউকে ভালবাসতো সেটা আমার বুঝতে বাকি রইলো না। কিন্তু সে আমার কাছে তা অস্বিকার করতো। আমি অনেক বার বলেছি, তুমি কি কাউকে ভালোবাসো? মেয়েটি বলতো, না! আমি কাউকে ভালবাসি না। আম্মু আমাকে বকা দিছে তাই মন খারাপ।

আমি ও তেমন কিছু আর জানার ইচ্ছে দেখাইনি। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্নও আর করতাম না। কারণ আমি বুঝতাম মেয়েটি মিথ্যা বলছে। মেয়েটি অন্য কোনো ছেলেকে ভালোবাসে আর সেই ছেলেটি তাকে সব সময় কষ্ট দেয়।

একদিন মাঝ রাতে মেয়েটি আমাকে ফোন করে বললো, আমি তোমাকে ভালবাসি। অনেক কান্না করতেছে মেয়েটি। কিন্তু এত রাতে ফোন করাতে আমি বিরক্ত হয়ে যাই। মেয়েটিকে কান্না করছে তবুও আমি ফোনটা কেটে দিলাম। বারবার ফোন করছে মেয়েটি। আমি ফোন রিসিভ করছি না। আমি ফোন রিসিভ না করায় মেয়েটি রাত ৩টার সময় আমার আম্মুর ফোনে কল দিলো। এতে আমার রাগটা আরো বেরে গেলো।

মেয়েটিকে আমার ফোনে যখন কল দিলো তখন আমি তাকে রেগে গিয়ে বললাম, কোনো দিন আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। মেয়েটিও আমার উপর রেগে গিয়ে বললো, আমার চোখ দিয়ে যদি আর এক ফোঁটা পানি বের করিস তোর খবর আছে।

আমি বললাম, কি করবি! মেয়েটি বললো আমার বাবা মাকে নাকি তুলে নিয়ে যাবে। মেয়েটির কান্না থামিয়ে বললাম যাও ঘুমাতে যাও। সকালে আমার অফিস আছে। এখন আমি ঘুমাতে না পারলে সকালে অফিসে যেতে পারবো না। মেয়েটিকে একটা গান শুনালাম। আর মেয়েটিও একটু শান্ত হলো। দু’জন ফোন রেখে ঘুমাতে গেলাম।

আমি বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম, মেয়েটিকে এত বারণ করি তবুও কেনো আমার পিছে এই ভাবে লেগে থাকে? কেনো আমাকে এত ভালোবাসে। তার বিষয়ে আরো কিছু জানতে হবে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। সকাল হতে না হতেই সেই মেয়েটি আমাকে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলো। একটু কথা বলে অফিস চলে আসলাম। এই দিকে আমার মাথায় একটা বিষয় ঘুরতে লাগলো। যেভাবেই হোক! মেয়েটির এই রকম পাগলামী করার কারনটা আমার জনাতে হবে। মেয়েটি যতই আমার কাছে মিথ্যে বলুক আমি এই বিষয়টা জেনেই ছারবো।

আমি জানি মেয়েটিকে রাগ দেখিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না। যদি আমি তাকে মিষ্টি করে কথা বলি তবেই সে আমার কথা শুনবে। তাই আমি তাকে মিথ্যে ভালোবাসার অযুহাত দেখালাম। মেয়েটিকে বললাম, তুমি আমাকে ভালোবাসো আমি জানি, আর আমিও তোমাকে ভালোবাসতে চাই। তবে তার আগে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্নে উত্তর দিতে পারলে আমিও আজ থেকে তোমাকে আপন করে নেবো। কারণ তোমাকে ভালোবাসতে হলে তোমার সব কিছু আমাকে জানতে হবে।

মেয়েটি খুশি হয়ে বললো, কি জানতে চাও তুমি? তুমি যা জানতে চাও আমি বলবো। আমি বললাম, তুমি আমার সাথে কথা বলার জন্য এই রকম পাগলের মত করো কেনো? ফেসবুকের পরিচয় তোমার সাথে। এত পাগলামী তো তারাই করবে যারা অনেক বছরের পরিচিত। তুমি এমন কেনো করতেছো।

তখন মেয়েটির আর কোনো কথা বলেনা। মেয়েটি কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলো। আমি বুঝলাম না মেয়েটি এমন কেনো করলো। হঠাৎ সেই দিন রাতেই মেয়েটি আমাকে ফোন করলো। আর বললো, আমি তোমাকে সব কিছু বলতে চাই। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝে ছেরে যাবে না তো? আমি মেয়েকে বুঝালাম, আমি তোমাকে ছেরে যাবো না। তুমি আমাকে সব খুলে বলো।

মেয়েটি বললো, আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসতাম। সে আমাকে ছেরে চলে গেছে। আমাদের ১ বছরের সম্পর্ক ছিলো, কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করতো না। সব সময় আমাকে কষ্ট দেয়। তোমার ছবি আমি কেনো বারবার চাই জানো? কারন তুমি দেখতে সেই ছেলেটির মত দেখতে। মেয়েটির এই কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার মত দেখতে কোনো ছেলে এই পৃথিবীতে আছে নাকি। মেয়েটি তার সেই ছেলেটির একটি ছবি আমাকে ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিলো। আমি তো ছবিটা দেখে অবাক। ছেলেটি দেখতে ঠিক আমার মতন। আমার মতন চুলের স্টাইল, আমার মতন মুখ। আর আমার জামার মতন একটা জামা পরে আছে।

আমি সেই ছেলেটিকে দেখে অবাক হয়েছি আর সাথে সাথে এটাও বুঝতে পেরেছি মেয়েটি সত্যি অনেক কষ্টে আছে। মেয়েটি আমাকে বললো, আমি সেই ছেলেটির কতা সারা রাত ভাবি। ছেলেটির সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু ছেলেটা আমার সাথে কথা বলেনা। ঠিক তখন তোমার কথা মনে হয় আর তোমাকে ফোন করি। কারণ আমি তোমাকে দেখলে আমার ভালবাসার সেই স্বার্থপর ছেলেটিকে দেখতে পাই। মেয়েটি এসব কথা বলার পর অনেক কান্না করলো। এই রকম কান্না আমি কোনোদিন কোনো মেয়েকে করতে দেখিনি। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটি সত্যি অনেক ভালবাসতো সেই ছেলেকে। কিন্তু সেই ছেলেটা তার ভালবাসার মূল্য দিতে পারেনি। এই পৃথিবীটাই এমন। কেউ সত্যিকারের ভালবাসা পাওয়ার জন্য কাঁদে আবার কেউ সত্যিকারের ভালোবাসাকে পেয়েও বোঝার চেষ্টা করে না। মেয়েটা আমাকে বললো, তুমি আমার সাথে আর কথা বলবে না তাই না?

আমি নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। আমি তো মেয়েটিকে ভালোবাসি না তবে মেয়েটির কান্নার শব্দে আমার চোখ দিয়ে কেনো পানি বের হতে লাগলো। কেনোই বা মেয়েটির জন্য আমার বুকের মাঝে অন্যরকম এক কষ্ট অনুভব করতে লাগলাম। জানি না কি হচ্ছে এসব। কিছু না বুঝেই ফোনটা রেখে দেওয়ার সময় একটা কথাই বললাম, তোমাকে আজকের পর থেকে আর কাঁদতে হবে না। কারণ আমি তোমার হাঁসি হয়ে বেঁচে রবো। যতদিন তোমার মুখে হাসি রবে, মনে করো আমি বেঁচে আছি। আর যেদিন তোমার মুখের হাসিটা আর নেই ভেবে নিও আমি আর এই পৃথিবীতে নেই।

সেই দিন বুঝতে পেরেছিলাম ভালোবাসার জন্য একটি মানুষকে কতটা কাঁদতে হয়। মেয়েটির উপর অন্যরকম এক মায়া কাজ করতে লাগলো। ধীরে-ধীরে দু’জন দুজনকে ভালোবেসেও ফেললাম। কিন্তু প্রথম দিকে মেয়েটির উপর মায়া হয়তো বেশি ছিলো কিন্তু ভালোবাসাটা তেমন গভীর ছিলো না। শুরুর দিকে ভেবেছিলাম মেয়েটার অতিতের কষ্ট-বেদনার ভূবন থেকে করে আনবো। যে ছেলেটিকে তাকে কষ্ট দিয়ে তা ভুলিয়ে দেবো। মেয়েটি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে নষ্ট করছে তাই তার জীবনটা আগে সাজিয়ে দেবো। তারপর যদি মেয়েটিকে ভুলে যেতে হয় যাবো কিংবা তার অতিতের ভালোবাসা ফিরে আসলে তার কাছে না হয় ফিরে যাবে। আর আমি আমার মত আগের সেই মানুষ হয়ে যাবো।

কিন্তু তাকে সুখে রাখার দায়িত্বটা কবে যে সত্যিকারের ভালোবাসায় পরিণত হয়ে গেলো সেটা বুঝতেই পারি নি। এই মেয়েটি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা হয়ে দাড়ালো। মেয়েটিকে সুখ আর হাসির কারণটা আমি হয়ে গেলাম। মেয়েটির হাসির মাঝে আমিও হারিয়ে গেলাম। সত্যিকারের ভালোবেসে ফেললাম। এখন মনে হয় মেয়েটিকে ছাড়া কি একা থাকতে পারবো না।

এই ভাবে আরো কয়েকটি মাস পার হয়ে গেলো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমি প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করতাম না আর আমি সেই মেয়েটির প্রেমে পাগল হয়ে বসে আছি। রাতদিন শুধু সেই মেয়ের কথাই ভাবতে থাকি। সারাদিন ভাবতাম কি বললে মেয়েটিকে হাসবে, কি করলে মেয়েটি খুশি হবে। সারাক্ষণ গান কিংবা মজার মজার কথা বলে মেয়েটিকে হাসাতাম।

মেয়েটিও আমাকে পাগলের মতন ভালোবাসতো। কখনো ভাবিনি, ফেসবুকের সেই অপরিচিত মেয়েটি আজ আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা হয়ে যাবে। মেয়েটি আমাকে দেখার জন্য পাগলামী শুরু করলো। যেভাবেই হোক তার সাথে দেখা করতে হবে। মেয়েটির সাথে দেখা না করলে সে পড়াশোনা করবে না। সামনে পরিক্ষা তাও দেবেনা। যেভাবে হোক তার সাথে দেখা করতে হবেই হবে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা মেয়েটি থাকতো অনেক দূরে। বলতে গেলে আমি কোনোদিন এত দূরে যাইনি কারো সাথে দেখা করতে। কিভাবে তার সাথে দেখা করবো। মেয়েটি যে শহরে থাকে তা আমার কাছে একদম নতুন । গিয়ে কই থাকবো, কি খাবো, রাস্তাঘাট তো কিছুই চিনবো না। কিভাবে যাবো তার সাথে দেখা করতে।

কোনো কিছু না ভেবেই অফিস থেকে বের হয়ে পড়লাম। রাতের বেলায় বাস স্ট্যান্ডে চলে গেলাম টিকিট কাটতে। চলে গেলাম মেয়েটির শহরের। সারা রাত বাসে করে গিয়ে সকাল বেলা তার কাছে পৌঁছালাম। মেয়েটি আমাকে দেখে খুবই খুশি হলো। কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে এই ভাবে দেখা করিনি তো তাই সত্যি বলতে খুবই লজ্জা করছিলো। মেয়েটিকে দেখে কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। মেয়েটি আমাকে দেখে এই কথা সেই কথা বলতে লাগলো। আমি চুপচাপ তার কথা শুনতে লাগলাম।

সে একটা রিক্সা ডাক দিয়ে উঠে পড়লো, আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে বললো, কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? রিক্সায় ওঠো। আমিও তার কথা মতো রিক্সায় উঠলাম। অচেনা রাস্তা। জানি না এই রিক্সা কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে। রিক্সার মাঝে মেয়েটি আমার প্রথম হাত ধরলো। আমাকে মেয়েটি বললো, কি ব্যাপার কোনো কথা বলছো না কেনো? ফোনে তো খুব কথা বলতে আর এখন চুপ কেনো।

আমি কি করে বুঝাবো তাকে, তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা, আর এই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে এক রিক্সায়। তারপর হঠাৎ মনে হলো আম্মু-আব্বু কে না বলেই চলে এসেছি। তাদের কি বলবো? হঠাৎ একটা বাসার সামনে গিয়ে রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা থামাতে বললো। বিক্সাওয়ালকে ভাড়া দিয়ে দিলো। মেয়েটি আমাকে বললো, এটা আমার এক ছেলে বন্ধুর বাসা। তোমাকে এই খানে ২ দিন থাকতে হবে। কারণ মেয়েটির বাসায় তো আমাকে নেওয়া যাবে না। তার বন্ধু আমাকে বাসায় নিয়ে গেলো আর যাওয়ার সময় মেয়েটি বললো আজকে দুপুরে আমরা এক সাথে বাহিরে খাবো।

এক ভোর বেলা সে আমাকে নতুন এক জায়গায় নিয়ে গেলো। চারিদিকে কাঁশফুল। বাতাসে কাঁশফুল গুলো এলো মেলো হয়ে ভাসছে। মাটির ঘাস গুলো শিশিরের ফোটায় ভিজে আছে।

এমন পরিবেশে খুব ভালো লাগছে। মেয়েটাকে আমি বললাম, আমি তোমার কাছে ৩টা জিনিস চাইবো। তুমি কি দেবে? মেয়েটি বললো, বলো কি চাও তুমি?

আমি বললাম, কোনো দিন অন্য ছেলের জন্য চোখের অশ্রু ফেলবে না, কোনোদিন বাবা মাকে কষ্ট দেবে না, কোনো দিন নিজেকে বন্ধী করে রাখবে না। মেয়েটি আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আমার হাত ধরে সে বললো তুমি অনেক ভালো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার এই কথাগুলো আমি সারজীবন মনে রাখবো। আর পালন করবো।

সারাদিন মেয়েটির সাথে ঘুরতাম আর তার হলে তার বন্ধুর বাসায় ঘুমাতাম। এই ভাবে কেঁটৈ গেলো ২ দিন। এখন আমার চলে যেতে হবে। এখানে আর বেশি দিন থাকলে আম্মু আব্বু দূশ্চিন্তা করবে। তাই তার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আমাকে গাড়িতে তুলে দিলো আর একটা কথা বললো, আমাকে ভুলে যেওনা। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। আমার কষ্টের সম্রদ্রে তোমার বালুচড়ে পেয়েছি ঠায়। আমি সেই বালুচড়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।

চলে আসার সময় মেয়েটির ছবি আমার মনের আকাশে বারবার ভেসে উঠছিলো। শুধু মনে হচ্ছিলো যদি সারাজীবন এই ভাবে তার কাছে থেকে যেতে পারতাম। কিন্তু চাইলেই তো আর সবকিছু পাওয়া সম্ভব নয়। যাওয়ার সময় নিজেই নিজের  মনের সাথে  অনেক কথা বললাম। আবার আসবো এই অচেনা শহরে। আবার আসবো তোমাকে দেখতে। আবার আসবো তোমার সুখের ভাগিদার হতে। আবার দেখা হবে। ভালো থেকে তুমি। তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here