মুহাম্মদ আবু আদিল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ দেশজুড়ে আলোচিত হওয়া একটি ভয়ংকর অপরাধের ঘটনায় ব্যথিত, ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত টেলিভিশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটির মুখপাত্র মুহাম্মদ আবু আবিদ। সম্প্রতি তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে করা এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে তিনি সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তিনি লেখেন, “আমার ভয় হচ্ছে, আল্লাহর কাছে যেয়ে যদি আছিয়া সব বলে দেয়, যদি তার আর্তনাদে গজব পড়ে আমাদের সকলের উপর। হে আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করো। হে আল্লাহ, আমার বোন আছিয়াসহ ধর্ষনের শিকারে মৃত্যুবরনকারী সকলে জান্নাত নসিব করো। হে আল্লাহ, আমারা আমরা সকলেই লজ্জিত, তোমার অভিশাপের অন্তভূক্ত আমাদের করিও না।”
আছিয়া ছিল এক নিষ্পাপ কিশোরী। যে স্বপ্ন দেখত পড়াশোনা করে একদিন বড় হবে, পরিবারের দুঃখ ঘোচাবে। কিন্তু নরপশুরা তাকে সে সুযোগ দিল না। তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল নিষ্ঠুরতম বর্বরতা। তার আর্তচিৎকার বাতাসে মিলিয়ে গেল, কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত, মৃত্যু তাকে নিয়ে গেল এমন এক জগতে, যেখানে কোনো জুলুম নেই, নেই কোনো ভয়।
এ বিষয়ে মুহাম্মদ আবু আবিদ এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমরা সবাই দোষী। আমরা যদি প্রতিবাদ করতাম, যদি প্রতিরোধ গড়ে তুলতাম, তবে হয়তো আছিয়া আজ আমাদের মাঝে থাকত। আমাদের ভয়ের কিছু নেই, যদি আমরা সত্যের পথে থাকি। কিন্তু আজ আমরা সবাই ভয় পাচ্ছি, কারণ আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থ।”
আছিয়ার হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনগুলো একসঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছে— “আমরা আর কোনো আছিয়াকে হারাতে চাই না!”
অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মুহাম্মদ আবু আবিদ বলেন, “যদি এই পাষণ্ডদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও নিরাপদ থাকবে না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি চলতে দেওয়া যায় না।”
আছিয়ার মতো নিষ্পাপ প্রাণ যাতে আর হারিয়ে না যায়, সেজন্য পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রতিটি অভিভাবককে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে, প্রতিটি স্কুল-কলেজে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে।
মুহাম্মদ আবু আবিদ এর প্রশ্ন— “কবে আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে পারব, যেখানে কোনো মেয়েকে আর্তনাদ করে মরতে হবে না? কবে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখব, যেখানে আছিয়ারা নির্ভয়ে বড় হবে, স্বপ্ন দেখবে, বাঁচবে?”
আছিয়ার মতো নিষ্পাপ কিশোরীদের স্মরণে, তাদের প্রতি ন্যায়বিচারের দাবিতে, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা বন্ধ করতে আমাদের শপথ নিতে হবে— অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব, নীরব থাকব না, প্রতিবাদ করব, প্রতিরোধ গড়ে তুলব। হয়তো তখনই, আছিয়ারা স্বপ্ন দেখতে পারবে। হয়তো তখনই, আমরা আল্লাহর গজব থেকে বাঁচতে পারব।