আমার রাসুল মুহাম্মাদ (সা.)

- Advertisement -
- Advertisement -

হাসান মাহমুদ : অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আকাশের বিমল উজ্জ্বল দ্বাদশী চাঁদের চেয়েও যিনি বেশি সুন্দর, তিনি আমাদের রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রাসুলের উপমা শুধুই তিনি। এই বসুধায় অগণিত  সৃষ্টির ভিড়ে যাকে নিয়ে উপমার পর উপমা দিয়ে তাঁর সৌন্দর্যের শেষ হয় না। তাঁকে নিয়ে উপমার পসরা সাজালেও উপমা শেষ হয়ে  যায় তাঁর রূপবিভার সৌন্দর্যের বর্ণনা শেষ করা যায় না। আল্লাহ তায়ালা নিপুণ করে আমাদের রাসুলকে সৌন্দর্যের উমপা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। প্রিয় রাসুলের অনুপম সৌন্দর্যে জোছনা অবগাহন করে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। রাসুলের নুর ছিল তাঁর সুন্দর সিফাত। এই সৌন্দর্য রাসুলের অনন্য বৈশিষ্ট্য। রাসুল ছিলেন আল-আমিন। তিনি ছিলেন পথহারা মানুষের আস্থার সঙ্গী। তিনি ছিলেন মানুষের পরম বন্ধু।

রাসুলের দেহসৌষ্ঠবে সৌন্দর্যের যে আলো  ছিল তা দেখে দিকভ্রান্ত মানুষ খুঁজে পেত আলোর দিশা। রাসুল ছিলেন আলোর দিশারী। যে চোখ একাগ্রতায় রাসুলের মুখশ্রীর নুর দেখেছে, সে মরণ অবধি ভুলতে পারে  নি অনুপম সেই সৌন্দর্যের নন্দন। রাসুল ছিলেন হেদায়েতের অনির্বাণ আলো। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) প্রথম জীবনে ছিলেন ইহুদি পণ্ডিত। তাওরাতের সকল জ্ঞান ছিল তাঁর নখদর্পনে। রাসুলের অবয়ব দেখে তিনি সত্যের আলো খুঁজে পান। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে এলেন, মদিনার সবাই ছুটে এলো রাসুলকে দেখার জন্য। সবার সাথে আমিও এলাম রাসুলকে দেখার জন্য। আমি যখন রাসুলের অবয়বের দিকে গভীর দৃষ্টিতে  তাকালাম, তখন মনে হলো এই চেহারা কোনো সাধারণ মানুষের নয়। রাসুল ছিলেন সব সৌন্দর্যের পাত্র। তাঁর পবিত্র শরীর থেকে খুশবু ছড়াতো প্রস্ফুটিত ফুলের মতো। রাসুলের শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া শ্বেত বিন্দু তা সুরভি বিলাত মেশকের ঘ্রাণ। সেই সুবাস বের হতো আরও প্রাণ সঞ্চারী আরও তাজা খুশবু হয়ে। তাঁর রূপ-লাবণ্যে বিমোহিত হয়ে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) দেখতে চাইতেন রাসুলের সৌন্দর্যের পরিধি। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) গভীর দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে থাকতেন রাসুলের দিকে। একবার তাকাতেন চাঁদের দিকে, আবার তাকাতেন রাসুলের দিকে।

সাহাবাদের হৃদয়ে স্বগতোক্তি উদয় হতো, চাঁদের চেয়েও সুন্দর আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁরা রাসুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বলতেন, রাসুল সৌন্দর্যে সবার সেরা। তিনি নক্ষত্রের চেয়েও উজ্জ্বল। রাসুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, রাসুল বিশ্বস্ত আর মঙ্গলকামী রাসুল যেন ভরা পূর্ণিমার চাঁদ। এই পঙক্তি  হজরত আবু বকর (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এই উপমা দিয়েছিলেন। তিনি এই উপমা দিয়ে কবিতার পঙক্তি আবৃত্তি করতেন। আবু বকর (রা.) যুহাইর ইবনে সুলাইমের এই কবিতার পঙক্তিও আবৃত্তি করতেন, হতে যদি প্রিয় তুমি মানুষ ছাড়া অন্য কিছু, পূর্ণিমার চন্দ্র-শশী তোমার কাছ থেকে আলো নিত৷ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানার্থে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার  ৪৮নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোরআন মাজিদকে আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি, যা সত্যতার গুণে বিভূষিত। এই কিতাব পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যতা প্রমাণ করেছে।

অতঃপর ওই কিতাবগুলোর অভিভাবকরূপে কাজ করছে। রাসুল ছিলেন সততার রূপক। সততা তাঁর ভূষণ। রাসুলের ক্ষমা, অনুগ্রহ, আর উত্তম চরিত্রে পুরো জগতের মানুষকে দীনের অনুপম সৌন্দর্য দেখিয়েছেন। রাসুল ছিলেন সবার দৃষ্টিতে অনন্য সুন্দর। তাঁর মুখমণ্ডল ছিল পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝলমলে। তাঁর গড়ন ছিল মাঝারি। মস্তক মোবারক ছিল সুষম বৃহৎ। রাসুলের চুল মোবারক ছিল ঈষৎ কুঞ্চিত। চুল বেশি বড়।হলে কানের লতি অতিক্রম করে যেত। পায়ের রং ছিল দারুণ উজ্জ্বল। ললাট ছিল প্রশস্ত। তাঁর ভ্রূ ছিল বাঁকানো সরু ও ঘন।।উভয় ভ্রূ আলাদা আলাদা ছিল, সংযুক্ত ছিলনা। উভয়ের মাঝখানে একটি শিরা ছিল, রাসুলের ক্রোধের সময় শিরাটি স্ফীত হয়ে ওঠতো। নাসিকা উন্নত ছিল, ছিল নুরুজ্জ্বল। প্রথম সাক্ষাতে রাসুলের নাসিকা মোবারক বেশ উঁচু মনে হতো। গভীর দৃষ্টিতে তাকালে বিমল উজ্জ্বলতা আর সৌন্দর্যের কারণেই রাসুলের নাসিকা উঁচু মনে হতো। প্রকৃতপক্ষে তিনি বেশি উঁচু ছিলেন না। আবার খাটোও ছিলেন না। রাসুল ছিলেন মাঝারি গড়নের। রাসুলের দাড়ি মোবারক ছিল ঘন ও চিবুক ছিল দাড়িতে ভরপুর। তাঁর চোখের পুতলি মোবারক ছিল কালো। হালকা ধরনের ছিল গণ্ডদেশ, সুন্দর সুষম ও প্রশস্ত মুখ। চিকন ও মসৃণ ছিল দন্তরাজি। সম্মুখভাগের দন্তপাটিতে হালকা ফাঁক খচিত ছিল। বুক মোবারক থেকে নাভি পর্যন্ত ছিল চুলের একটি হালকা রেখা। তাঁর গ্রীবা মোবারক ছিল সুশ্রী ও সরু। গায়ের রং ছিল রৌপ্যময়। সমুদয় অঙ্গ-প্রতঙ্গ ছিল মাংসল, সুষম-সুঠাম। পেট ও বুক ছিল সমতল। বুক মোবারক ছিল উদার ও প্রশস্ত। উভয় কাঁধের মাঝখানে ছিল বিশাল ব্যবধান। গ্রন্থির অস্থিসমূহ ছিল শক্ত ও বড়। মুক্ত দেহে রাসুলকে ভীষণ উজ্জ্বল মনে হতো। তাছাড়া তাঁর সীনা ও পেট ছিল কেশমুক্ত। উভয় বাহু, কাঁধ ও বুকের উপরিভাগে ছিল হালকা লোম। হাতের কব্জি ছিল দীর্ঘ, হাতের তালু ছিল প্রশস্ত। হাতের তালু ও পা ছিল মাংসল ও মখমলের মতো কোমল । হাত- পায়ের আঙ্গুল ছিল সমন্বিত-দীর্ঘ। পা  সমতল, পায়ের পাতা ছিল গভীর। পরিচ্ছন্ন ও মসৃণতার কারণে পায়ের পাতায় পানি জমে থাকতো না, পানি ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে যেত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটার সময় সশক্তিতে পা ওঠাতেন। সামনের দিকে হাঁটার সময় ঝুঁকে চলতেন। পা ফেলতেন আস্তে-ধীরে। পদক্ষেপ দীর্ঘ হতো।

রাসুলের চলার গতি দ্রুত হতো। ছোট কদমে চলতেন না। রাসুল চলার সময় মনে হতো যেন তিনি উঁচু জায়গা থেকে নিম্নভূমির দিকে নামছেন, সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর দৃষ্টিতে এমনই দেখাত। রাসুল কোনো দিকে তাকালে সমস্ত শরীরসহ ঘুরে তাকাতেন। দৃষ্টি আনত থাকত, রাসুল মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। হজরত জাবের ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, এক জোছনারাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিরীক্ষা করছি। তিনি ছিলেন লাল কাপড়ে আবৃত, আমি একবার রাসুলের দিকে তাকালাম, আবার চাঁদের দিকে। আমার মনে হলো চাঁদের চেয়ে অধিকতর সুন্দর ও সুশ্রী দেখাচ্ছিল ছিল। রাসুলের সৌন্দর্যের বিভায় যুগে যুগে কবিরা কবিতা লিখেছেন।

তাঁর সৌন্দর্যের উপমা চিত্রায়িত করেছেন ভাষার মাধুর্যে। ভাষার মাধুর্যে উপমায় চিত্রিত হয়েছে রাসুলের স্তুতি। কালে কালে আরো কবিতা, গজল রাসুলের শানে লেখা হবে। অগণিত আশিকে রাসুল পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে রাসুলের রওয়াজায় দুরূদ ওসালাম পাঠান। অবিরাম পাঠ করা হয় রাসুলের ওপর দুরূদ। রাসুলের  প্রেম তৃষ্ণায় তাঁর রওজায় সারাক্ষণ ভিড় জমান অগণিত  আশিকে রাসুল। এই সিলসিলা জারি থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।

অন্যধারা/সাগর

- Advertisement -

আরো পড়ুুর