আল মাহমুদ-এর কবিতা ।। ওমর শামস

- Advertisement -
- Advertisement -

[কবির জন্মদিন, জুলাই ১১, স্মরণ করে]

আল মাহমুদ নিজের কবিতা সম্পর্কে দুটি মূল্যবান ব্যক্তিগত তথ্য এবং মন্তব্য জানিয়েছেন তাঁর কবির আত্মবিশ্বাস গ্রন্থে :
১. পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি বুদ্ধদেব বসু তাঁর কবিতা পত্রিকায় আল মাহমুদের দু’তিনটি কবিতা ছাপেন ১। এই স্বীকৃতি না পেলে সেই আমলের ঢাকা-পূর্ব পাকিস্তানি সাহিত্য পরিবেশে মাহমুদের কবি-সত্তা টিকে থাকা মুশকিল ছিল।
২. তিনি রবীন্দ্রাথের কাছে না গিয়ে ১ বরং প্রথম তিরিশি কবিদের নিকট বিশেষ করে আধুনিক কবিতার শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। সঙ্গে-সঙ্গে অক্ষরবৃত্ত দ্বারা মুগ্ধ, তাড়িত এবং উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।
উল্লিখিত তথ্যের সঙ্গে যোগ করা যাক মাহমুদের বাল্য-কৈশোর-যৌবন-জীবন এবং তাঁর লালন-পালন দীক্ষা-সে কালের এবং সে সমাজের পটভূমিতে। তিনি জন্মেছিলেন জুলাই ১১, ১৯৩৬ ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ার একটি র্ধর্মভীরু, কৃষি-ব্যবসায়ী, অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রামী পরিবারে। প্রায় ২২-২৩ বছর মফস্বল অঞ্চলে পড়াশুনা করে পরে ঢাকায় আসেন। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে তাঁর কবিসত্তার বিকাশ। ইসলাম ধর্মের লোকায়ত দিক, কিছু কেতাবি বিষয় এবং গ্রাম-জীবনের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, নিম্নবিত্তের কৃষিজীবির-নদীজীবির বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের সঙ্গে তাঁর আবাল্য পরিচয়। এও স্মরণযোগ্য যে ব্রাক্ষণবাড়িয়া অঞ্চলে আলাউদ্দিন-লব ঠাকুর-মনমোহন সৃষ্ট এবং প্রচলিত মলয়া-গানের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা রয়েছে। তা ছাড়া উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কল্যাণে ঐ অঞ্চলে গীতি-বাদ্যের একটা প্রচলন, পরিবেশ এবং পরিচর্যা ছিলো। পুঁথিপাঠ, ইসলামী লোকায়ত চর্চা, মলয়ার চর্চা এবং সান্নিধ্য তাঁর কবিতা সাধনার লয়-স্বর-মাত্রার দিকটি প্রভাবিত এবং সমৃদ্ধ করেছে। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর বিষয়বস্তু স্বভাবতই ছিলো গ্রামজীবন নিষ্কাশিত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-সমস্যা-আনন্দ-বিষাদ-সংগ্রাম। মাহমুদের গতর-মন-অক্ষর বাঙলা মাটির গন্ধ-পানি- কাদা-কাম-ঘাম আবাল্য সম্পৃক্ত।
আল মাহমুদের কাব্যবিবেচনায় এ টুকু নান্দীপাঠের প্রয়োজন আছে। তাঁর প্রথম কবিতাগুচ্ছ, লোকলোকান্তর-এই তিনি নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ করে কবি-অস্তির স্বাক্ষর রেখেছেন। ঐ বইতেই তাঁর প্রায় সকল স্ব-চিহ্ন বিচক্ষণ পাঠকের নজরে পড়ে। এতদিনে অবশ্য দুই খ-ে তাঁর কবিতা সমগ্র ২ -প্রথম খ-ে ১৩টি বইয়ের, দ্বিতীয় খ-ে ৭টি বইয়ের (এবং অনুবাদ কবিতা) -বেরিয়েছে। এখনও তাঁর কলম সচল ও ফলপ্রসূ।
তাঁর কবিতা-রচনায় যা দেখেছি তা বলবো :
১. ভাষা
প্রথম থেকেই তিনি একটি নিজস্ব ভাষা গড়েছেন (ক) অক্ষরবৃত্তের লয়ে, (খ) গ্রামীণ ও আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে শুদ্ধ ভাষার একটি বিশেষ মিশ্রণে, (গ) কিছু আরবী-ফারসী জাতীয় এবং পুঁথিতে ব্যবহৃত শব্দের সংযোজনে। শব্দের চয়ন এবং সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অক্ষরবৃত্তে তাঁর বিশিষ্ট লয়টিও নিজস্ব। ঐ ভঙ্গি ব্যতিরেকে শুধু শব্দ, শব্দ-বন্ধ কিন্তু মাহমুদীয় অনুষঙ্গ ও প্রতিবেশ তৈরি করতে পারবে না। তাঁর ভাষার গ্রামীণ অংশটুকু না জসীমউদ্দীনের (তিনি অনেক বেশি লোকায়ত) না জীবনানন্দের (তিনিও প্রাতিস্বিক এবং তাঁর ভাষাও অননুকরণীয়)। জসীমুদ্দীন ময়মনসিংহ গীতিকাব্যের ধারাবাহী, কিন্তু মাহমুদ তিরিশের কবিদের থেকে শিখে এবং গ্রহণ করেই লোকজের সঙ্গে বর্তমানের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। মাহমুদের ভাষার স্বকীয়, সঙ্গে সঙ্গে এও স্বীকার্য যে তাঁর কবিতার বিষয়গুলো ঐ ভাষার সহজানুগ।
২. বিষয় : আল মাহমুদ-এর কবিতার প্রধান বিষয় :
প্রেম / নারী
আত্মীয়-স্বজন / গাহর্স্থ্য বিষয়
ষাটের দশক থেকে রাজনৈতিক ঘটনা / স্বাধীনতা-যুদ্ধ
বাম-রাজনীতি সমর্থিত অধিকার ও সমানুপাতিক বণ্টন (এটি সোনালী কাবিন পর্যন্ত)
ইসলামী ধর্মবোধজনিত কবিতা
বিভিন্ন কবিত্ব প্রসঙ্গে অন্য কবির সমালোচনা (কখনো, কখনো আক্রমণ)
আসলে আল মাহমুদের সহযাত্রী কবিদের বিষয়ও যে খুব আলাদা তা নয়, তবে এক-এক জনের ধারণা এবং প্রয়োগ আলাদা।
৩. নিসর্গ
আল মাহমুদ নিসর্গ-তেয়াগী কবি মোটেই নন। বুদ্ধদেবের শার্ল বোদলেয়ার এর ভূমিকা এবং কবিতা পড়েও, তাঁর অনুরাগী হয়েও তিনি বোদলেয়ারীয় প্রকৃতির-বিরুদ্ধে-সংগ্রাম করেননি। বঙ্গদেশীয় প্রকৃতিতে ধান-নদী-জোনাকী-পানকৌড়ি-পানের বর-তেলাপোকা-ঘোরলাগা বর্ষণ-ফড়িং-জলডোরা সাপ-হাঁসের ডিম-আটচালা-জিয়ল মাছে ভরা বিশাল ভা–বেশরম কাউয়ার গতর-কৈবর্তপাড়ার নলিনীদের ভিটেবাড়ি-সিকস্তী গ্রামাঞ্চল-মারফতীর টান-শোনা বাতাস এবং শস্য ও সবুজের সমৃদ্ধিকে আল মাহমুদ মহামাতৃকুল গাঙের ঢেউয়ের মতো কবুল-কবুল করে স্বীকার করেছেন। মোদ্দা কথা, তাঁর বহু কবিতাই প্রকৃতিজনিত; অন্যবিধ বিষয়কেও তিনি প্রকৃতির সহায়তায় এবং পশ্চাৎপটে ব্যবহার করেছেন। প্রকৃতি-বন্দনায় বা ব্যবহারে তিনি রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ-বিষ্ণু দে’র দলের লোক, যদিও তাঁর নিজের ব্যবহার স্বতন্ত্র।
৪.স্বজনবর্গ এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের শৈলী
বাংলা কবিতায় অনেকেই আত্মীয়-স্বজন-পরিবারবর্গ (দেশের প্রধান, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ছাড়া) নিয়ে কবিতা লিখেছেন। পেরুর কবি, সেজার ভায়্যোহো, যার দক্ষিণ আমেরিকার আদি ইনকা রক্তের পারিবারিক ঐতিহ্য ছিলো, তিনি বিশেষভাবে আর্ন্তজাতিকভাবে খ্যাত এই বিষয়ের কবিতা লেখার জন্য। পাবলো নেরুদা তাঁর এ সব কবিতার প্রশস্তি করেছিলেন। আমার মনে হয়েছে, এই ধরনের বিষয়ে আল মাহমুদ বাংলা কবিতায় শ্রেষ্ঠ। আত্মদর্শী, সমবেদনা-সঞ্চারক হয়ে এবং আধুনিক কবিতার টেকনিক (চিত্রকল্প, শ্রুতিকল্প ইত্যাদি) আপাদমস্তক আত্মস্থ করে অথচ গ্রামবাংলার স্নিগ্ধ-সরল-সৌরভ অনাবিল রেখে অনন্য কবিতা লিখেছেন। এ ব্যাপারে একটি প্রবন্ধে আমি বিষ্ণু দে এবং আল মাহমুদের নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছি। একটা কথা উল্লেখ করা দরকার। তিরিশের বড় সব কবিরাই পাশ্চাত্য সাহিত্য পরিচিত ছিলেন। আর সেকালে বিষ্ণু দে, সমর সেন এলিয়ট থেকে গ্রহণ করেছিলেন, পঞ্চাশের দশকে বুদ্ধদেব বোদলেয়ার অনুবাদ করে ফরাসী সিম্ব^লিস্ট-আধুনিকতার প্রচার ও প্রভাব ফেলেছিলেন। ষাটের বাংলাদেশে এই এলিয়ট- বোদলেয়ার-ইয়েটস-এলুয়ার-এর কিছুটা অস্ফুট ছত্রছায়া ছিলো ক’জন কবিদের মধ্যে। সেই আভাগার্ডের পাশে মাহমুদের কলাপাতা-জীয়ল মাছ-বোন-মা-পানিউড়ী পাখির কবিতাকে সেই কালে গ্রাম্য মনে করতেন। এতোদিনে এটা স্পষ্ট যে তাঁর প্রথমার্ধের কবিতা অভিজ্ঞতা প্রসূত, সঙ্গত, আধুনিক কবিতা শৈলীতে সমৃদ্ধ এবং সর্বোপরি এগুলো জেনুইন বোধের প্রকাশ।
৫.রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংবাদিক ঘটনাবলী, ১৯৫০-এর পর
যে কোন কবির কবিতায় মুখ্য উৎস তাঁর নিজেরই জীবন, কোন কবিই তাঁর সমকাল-সমকালীন রাজ-সমাজ-আর্থ ঘটনা ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে পারেন না – চিন্তায় এবং লেখায়। আল মাহমুদ সোনালী কাবিন, ১৯৭৩ অবধি বাম-সাম্য-রাজনীতিবোধ, অসম্প্রদায়িকতা এবং বাংলাদেশের আড়াই হাজার বছরের বৌদ্ধ-হিন্দু-মুসলিম ঐতিহ্য এবং একত্রিত-হয়ে-যাওয়া-প্রবাহ দিয়ে সুচিন্তিত ছিলেন। তাঁর তৎকালীন কবিতায় সেই সব, সেই জাতীয় চিন্তাই প্রকাশিত হয়েছে মাহমুদীয় নিজস্ব শৈলীতে। স্বাধীনতা ও ভাষার জন্য যে সংগ্রাম, তাঁর কবিতায় সে সব বিষয়ও স্বাভাবিকভাবেই এসেছে।
এরপরে আল মাহমুদের কবিতার বিষয়ে যে পরিবর্তন এসেছে মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, ১৯৭৬ থেকে সে আলোচনা আমরা পরে করবো।
৬. সনেট এবং গদ্য কবিতা
আল মাহমুদ সনেটে সিদ্ধহস্ত এবং যে শ্রুতিকল্পের অক্ষরবৃত্ত তিনি প্রথম যৌবনেই রপ্ত করেছিলেন পুঁথি-মাইকেলী-রাবীন্দ্রিক-জীবনানন্দীয় শৈলী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক ভাষার মশলা মিশিয়ে- সেটি সনেট প্রকাশের প্রভূত সহায়ক। তাঁর প্রথম বই লোক-লোকান্তর, ১৩৭০-এই তার স্পষ্ট স্বাক্ষর :
শুরু হোক স্ত্রোত্রপাঠ গন্ধবতী তোমার সুনামে,
পীতাভ ধোঁয়ার তলে ডুবে যাক মন্দির দেহলী,
শঙ্খমাজা স্তনদুটি মনে হবে শ্বেতপদ্ম কলি,
লজ্জায় বিবর্ণ মন ঢেকে যাবে ক্রিসেনথিমামে
অথবা রক্তের নাচে শুরু হবে সিম্ফনির সুর
বৃষ্টির শব্দের মতো মনে হবে তোমার নূপুর।
[সিম্ফনি, (লোক-লোকান্তর)]
এই বাচন-রস-সৌরভ সম্পূর্ণরূপে পূর্ব-বাংলার (এবং ওপার-বাংলার) কবিতার কানন ছেয়ে ফেলতো সোনালী কাবিন, ১৯৭৩-এর ১৪টি সনেট। এই কবিতাগুলোর মাহাত্ম্য (আমি শুধু সনেটের কথা বলছি) এই যে, এখানে বাংলার গ্রাম-প্রকৃতি-নারী-বৌদ্ধ-হিন্দু-মুসলিম-ঐতিহ্য-মানব ভ্রাতৃত্ব-সাম্যের মন্ত্র -এতো সব উপকরণ ও চিন্তা বাংলা ভাষার রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধের মধ্যে অবিচল রেখেও, মাহমুদ আধুনিক কবিতার (যা বোদলেয়ার ও তাঁর উত্তরসূরি ফরাসী কবিদের হাতে প্রথমে বেরিয়েছিলো) সুর-ছবি-সৌষ্ঠব-সান্দ্রতার সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পেরেছেন।
তিরিশের কবিদের বিশাল ও বিদগ্ধ সৃষ্টির পরে, ষাট-সত্তরের দশকে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় সাহিত্যকর্ম। আমার বিচারে, এই কবিতাগুলো সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ দাশের সনেট রচনার সমগোত্রীয়। অবশ্য এদের সকলেই স্বস্থানে, স্বমহিমায় স্তম্ভ-স্বরূপ। এখানে এদের পারস্পারিক তুলনা আমার অভিপ্রায় নয়।
আল মাহমুদ গদ্যকবিতায়ও সিদ্ধহস্ত এবং তাঁর নিজেস্ব স্টাইল আছে। কবিতা মাত্রারহিত হলেও তাঁর গদ্যের ভিতরে তিনি নিজের স্পন্দন-গতি-নিরবতা তিনটেই স্বভঙ্গীতে সৃষ্টি করেছেন। কতগুলো ভালো গদ্যকবিতা : (১) ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’, (২) ‘অন্তরভেদী অবলোকন’, (৩) পালক ভাঙ্গার প্রতিবাদ’, (৪) ‘চোখ যখন অতীতাশ্রয়ী হয়’, (৫) ‘অস্পষ্ট স্টেশন’। এগুলোর পরও তিনি বহু সনেট লিখেছেন, গদ্যকবিতাও লিখেছেন। ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছর পর ‘কবি ও কালো বিড়ালিনী’ (মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো) , ‘কিংবা খনার বর্ণনা : সনেট পঞ্চাক’ (দ্বিতীয় ভাঙন) এ গুলো ভালো সনেট। এবং গুচ্ছকবিতায়ও ছড়ানো-ছিটানো সনেট তাঁর আছে। তবে সোনালী কাবিনগুচ্ছর মতো সব মশল্লা, যতো সুন্দর সামঞ্জস্যে, যতো ভালো চির্ত্রাপণে, যতো মধুর সৌগন্ধে বিকশিত হয়েছিলো, এগুলোতে মুন্সিয়ানা সত্ত্বেও সেই অমৃত সৃষ্টি হয়নি।
গদ্যকবিতার ব্যাপারেও একই কথা বলা যায়। তাঁর হাতের কৌশল পাকা। কিন্তু বিষয়-হেতু, সাম্প্রদায়িকতা-হেতু এবং ভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন মেজাজের জন্য পরের কবিতা ভালো, তবে প্রথম যুগের মতো জমেনি। তা ছাড়া পরের দিককার বিষয় উত্তরোত্তর ব্যক্তিগততর হয়ে গেছে।
৭. বিশ্বাসের বিবর্তন
মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, ১৯৯৬ থেকেই তাঁর রাজনৈতিক চিন্তার সমূহ পরিবর্তন ঘটেÑঅর্থনৈতিক সাম্য-অনুসারী, যাকে মার্ক্সিস্ট বলা যায়, ভাবনা এবং হিন্দু-বৌদ্ধ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার থেকে বিযুক্ত হয়ে তিনি ধার্মিক, বলা যেতে পারে ইসলামিক এক ধরনের ধারণার কবিতা এবং লেখায় নিজেকে চালিত করেন। তাঁর এ মানসিক বিবর্তনের শুরু :
পৃথিবীর সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থটি বুকের ওপর রেখে
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হয় এ ছিলো সত্যিকার ঘুম
কিংবা দুপুরে খাওয়ার পর ভাতের দুলুনি। আর ঠিক তখুনি
সেই মায়াবী পর্দা দুলে উঠলো, যার ফাঁক দিয়ে
যে দৃশ্যই চোখে পড়ে, তোমরা বলো স্বপ্ন।

আমার মনে হলো, কানে তালা লাগানো প্রচ- বিস্ফোরণের শব্দে
কারাগার ভেঙে পড়ছে। আমি চীৎকার করে
বিছানায় লাফিয়ে উঠলাম। আমার বুকের ওপর থেকে
উজ্জ্বল গ্রন্থটি গড়িয়ে পড়লো বালিশে।
চারিদিকে বিশাল বিম, ইট, সুরকীতে আমার কামরা
আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। যেন দৈবক্রমে আমি রক্ষা পেয়েছি।
এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আমার খাটটাকে মনে হলো
নূহের নৌকা।
[মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো)]
প্রায় ১৯৭৫ থেকে তিনি আজ পর্যন্ত তাঁর বিবর্তিত এবং পরিবর্তিত বিশ্বাস নিয়েই লিখে চলেছেন। সব কবিতাই যে বিশ্বাসের মাথা তোলে, তাও নয়। বিশ্বাসের বড়ো পরিবর্তন হলে পাঠকের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হয়, যেমন হয়েছে স্পেন্ডারের ক্ষেত্রে। তখন বিশ্বাস-১ এর কবিতা এবং বিশ্বাস-২-এর মধ্যে বিরোধ বাঁধে। কোন্ বিশ্বাসের কবি আসল? সেই প্রশ্নের সহজ সমাধান সব সময় হয় না এবং বিশেষ করে কবিতার গুণ যদি আদি বিশ্বাসের সাহিত্যেই বেশি থেকে থাকে।
না, বিশ্বাস পরিবর্তনও মূল সমস্যা নয়। বিশ্বাস যে কেউ পাল্টাতেই পারে ; তবে সেই পরিবর্তন যদি বৃহত্তর ইতিহাস-ঐতিহ্য-প্রগতির ক্রমানুসর তালের সঙ্গে মিলে এগোয়। এই বিষয় স্বতন্ত্র প্রবন্ধের দাবীদার যা এখানে করা অসম্ভব। উদাহরণ দিয়ে বলি : কেউ যদি পুরোনো ধারণা বাদ দিয়ে হঠাৎ ফ্যাসিস্ট, বা খুনের প্রশংসায়, বা নারী নির্যাতনবাদী সাহিত্য রচনা করতে শুরু করেন শিল্পগত গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও কি আমরা সে গুলো সৎ এবং প্রগতি-সম্পন্ন বলবো?
মাহমুদের কিছু ধর্মালোকিত কবিতা উপভোগ করেছি, কিন্তু কোন কোন কবিতা ধর্মান্ধতা এবং অযথাই স্বাভাবিক মানবতার পরান্মউখ।
মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি।
আমি তখন স্বপ্নের মধ্যে জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি।
[বখতিয়ারের ঘোড়া, (বখতিয়ারের ঘোড়া)]

অনিষ্টকর অন্ধকারে যখন পৃথিবী আচ্ছন্ন হয়ে যায়। চারিদিকে ডাইনীদের
ফুৎকারের মত হাওয়ার ফিসফাস,
আর পাখিরা গুপ্ত সাপের আতঙ্কে
আশ্রয় ছেড়ে অন্ধকারে ঝাঁপ দেয়, ঠিক তখুনি, ইহুদিরা হেসে ওঠে।
[ইহুদিরা, (অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না)]
জেহাদ, ক্রসেদ, ধর্মযুদ্ধ, জাতি-বিরধিতা – এগুলো কি বিশ-একুশ শতকের কবিতার বিষয় হলো? মাহমুদ যদি ধর্মালোকের কবিতাই লিখতে চান, তবে তাঁর জন্য বোধহয় জালালউদ্দীন রুমি, ফরিদউদ্দীন আত্তার-হাফিজ এদের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী ভালোবাসা এবং সমগ্র মানবজাতির একাত্তীকরণের কবিতার সাধনাই শ্রেয়। আমি বিশ্বাস করি, করতে চাইলে সেই ধরনের করার ক্ষমতা তাঁর কলমের এখনো আছে।
৮. কবিতার শিল্প
কবিতার টেকনিক্যাল প্রদেশে-চিত্রকল্প, ধ্বনি-সুর, ছন্দ-স্বাচ্ছন্দ্য এসব বিস্তৃত আলোচনার পরিসর এখানে সীমিত। শিল্প-শৈলিতে মাহমুদ পাকা, আমার মতে ষাটের সবার মধ্যে সবচেয়ে পাকা। কয়েকটি উপমাচিত্র অবলোকন স্মরণ করি :
১. দেয়ালের ফ্রেমে রাখা কে দুঃখিনী জলের জলুস
পাথর ফাটানো ধারা সান্ত¡নার শব্দের মতন
তুমি কি জননী সেই, অভাবের আভায় দলিত
বাঙলার মানচিত্র এ ঘরের পেরেকে রয়েছে?
[ফেরার পিপাসা, (কালের কলস)]
২. এইতো সেদিনও
বোস্তামির পুকুরের ঘোলা ময়লা জলের কাছিম
হওয়ার সাধনা ছিলো, টকটকে লাল
মাংশের ম-ের মতো লোভ এসে ছিটকে পড়তো
থকথকে সিঁড়িতে সারাদিন।
[পালক ভাঙার প্রতিবাদে, (সোনালী কাবিন)]
৩. আমার স্বজন হয়ে আমার স্বদেশ এসে
দাঁড়িয়েছে পাশে। নির্ভয়ে আশ্বাসে
জিয়ল মাছের ভরা বিশাল ভা-ের মতো নড়ে ওঠে বুক।
[পালক ভাঙার প্রতিবাদে, (সোনালী কাবিন)]
৪. অতীতকে বাদ দিলে আজ তার কোন কিছু নেই
বিদ্যালয়ে কেশে ওঠে গুটিকয় সিনানথ্রোপাস।
[সোনালি কাবিন, (সোনালী কাবিন)]
৫. গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল, কবুল।
[সোনালি কাবিন, (সোনালী কাবিন)]
৬. রাতের নদীতে ভাসা পানিউড়ী পাখির ছতরে,
শিষ্ট ঢেউয়ের পাল যে কিসিমে ভাঙে ছল ছল
আমার চুম্বনরাশি ক্রমাগত তোমার গতরে
ঢেলে দেবো চিরদিন মুক্ত করে লজ্জার আগল
[সোনালি কাবিন, (সোনালী কাবিন)]
৯. সমস্যা
সমস্যা বাধে তখনই যখন আল মাহমুদ তাঁর বিশ্বাস-বিবর্তনের ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করেন। ‘‘কবিতা লিখে এদেশে যতোটুকু ভালোবাসা আদায় করা যায়, আমার ভাগ্যে তা জুটেছে। অখ্যাতিও কম জোটেনি। মাঝে-মধ্যে প্রশ্ন জাগে অপূর্ণতাটা কোথায়? না দেখতে পাই না।’’ তিনিই তাঁর মনকে আমাদের চেয়ে ভালো জানেন এবং বোঝেন। অতএব তাঁর প্রশ্নের শ্রেষ্ঠ উত্তর তাঁর বুকের ভেতরেই আছে।
একদা তাঁর প্রথম কবিতা গ্রন্থের অন্ধকারে একদিন কবিতায় বলেছিলেন :
একদিন ঘরে এসে হৃদয়ের প্রিয় শয়তান
ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল টেবিলের মোম
নির্বিকার দেহ ঢেকে অন্ধকার আলখেল্লার নিচে
ম্লান হেসে বিছানায় বসে
মায়াবী কথার ফাঁকে বোঝালো সে প্রভুর শহরে
আমি নাকি যেতে পারি ! অপরূপ নিষিদ্ধ বিতান
পার হয়ে, চোখের পলকে
অলৌকিক ফলবতী বৃক্ষের নিচে।

বললাম, তীক্ষ্মধার আমার কিরিচে
অলৌকিক স্পর্ধা দাও। ঈশ্বরের অপরূপ ফল
আমি যেন বিদ্ধ করে নিতে পারি। যেন
ভাগ করে দিতে পারি আমার সে প্রিয়তামা নারীকে কেবল।
[অন্ধকারে একদিন, (লোক-লোকান্তর)]

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি তিনি হৃদয়ের প্রিয় শয়তানের সঙ্গে চুক্তি আমূল বদলে ঘোষণা করলেন :
আমি কু-লীকৃত কালো ধোঁয়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে
ধ্বংসের ওপর রেখে আসা আল্লার আদেশ
বুকে তুলে নিলাম।
[মায়াবী পর্দা খুলে দুলে ওঠো, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো)]
আরো একটি মাহমুদীয় সমস্যা হচ্ছে : তিনি পঞ্চাশের পরের উভয় বাংলার একজন অগ্রগণ্য কবি। তা সত্ত্বেও নিজেকে এবং নিজের সহযাত্রীদের অযৌক্তিক প্রাধান্য দেয়ার জন্য বাংলা কবিতার বিশ শতকীয় ঐতিহ্য ও উত্তারিধারকে ট্যাড়া করে ব্যাখ্যা এবং উপস্থাপন করেন। আল মাহমুদের সাম্প্রতিক ভাষণ শোনা যাক :
তবে মাইকেল মধুসুদনের আবির্ভাবের পর থেকে এ পর্যন্ত যত কবির আবির্ভাব ঘটেছে তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথই হলেন আধুনিকতর কবিপ্রতিভা। তিরিশের কবিরা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর কিংবা বলা যায় যুদ্ধকালীন ইউরোপীয় কাব্যধারার বৈচিত্র্য আমদানী করতে কয়েকটা জানালা মাত্র খুলে দিয়েছিলেন। এতে আধুনিক বাংলা কবিতার শরীরে পশ্চিমের ফুরফুরে বাতাস এসে লাগলেও তা যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর বলে মনে হয় নি। বরং রবীন্দ্রনাথ এবং কাজী নজরুল ইসলামের খরতাপে তা আবার বাঁক ঘুরে নিজের দেশ ও মানুষের মর্মবেদনার ভাষা হয়ে উঠতে চেয়েছে। ততদিনে দুই বাংলাতেই পঞ্চাশের কবিরা একটি স্বদেশ খুঁজে বেড়ানোর পরিক্রমায় ব্যাকুল বলে ধারণা হয়।
এজন্যই আমি বলে থাকি যে, কবির একটি দেশ একান্ত দরকার। ত্রিশের কবিরা যা খুঁজে না পেয়ে নিজের অসম্পূর্ণতার ধারণা নিয়ে এবং আফসোস করে গত হয়েছেন। সত্য কথা বলতে কি, পঞ্চাশের কবিরাই হলেন আধুনিক বাংলা ভাষার প্রথম বাঙালী কবি।
আমাদের আধুনিক কবিতায় পঞ্চাশ দশকের কবিদের সবচেয়ে বড় অবদান হলো নিজ দেশমাতৃকাকে যদিও তা দ্বিখ-িত, হাতড়ে বেড়ানো। শুধু কবিতায় নয়, বক্তব্যে চলা-ফেরায়, আড্ডায় অনুষ্ঠানে পঞ্চাশ দশকের কবিরা আধুনিক কবিতার এবং কবির নতুন ইমেজ সৃষ্টিতে পারঙ্গম হন। আমার ধারণা ইচ্ছেয় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, বাংলাদেশের আধুনিক কবিতার পুনরুত্থান ঘটেছে পঞ্চাশের কয়েকজন কবির রচনায় এবং জীবনাচরণের বিশিষ্টতার মধ্যে।
[আল মাহমুদ, (কবির কররেখা)]
এর বিশাল প্রত্যুত্তরে আমি যাবো না। শুধু নিম্নলিখিত সূত্রগুলো বিচার্য :
(ক) রবীন্দ্রনাথের শেষ পর্বের কিছু কবিতায় আধুনিকতার কিঞ্চিৎ আভাষমাত্র থাকা সত্ত্বেও- যাকে বোদলেয়ার উত্তর ফরাসী-ইংরেজী-জার্মান-স্পানিশ কবি-মন্ডলী বাহিত আধুনিক কবিতা বলা হয় -সেই ধারার আধুনিক কবি রবীন্দ্রনাথ নন। এ আলোচনা স্বতন্ত্র আলোচনা ও বিচারের দাবীদার।
(খ) যে কোন কবির দেশ দরকার। এবং যে কোন দেশ পেয়েও থাকেন, না পেয়ে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকার কোন কারণ নেই যদি সে অবস্থা তিনি নিজে না চান। দেশ স্মৃতিও হতে পারে যদি কেউ প্রাবাসে থাকেন। পাবলো নেরুদা, সেজার ভায়্যেহো, রাইনার মারিয়া রিলকে, স্বঁজন পার্স এরা সবাই স্বদেশের বাইরে অবস্থান কালে তাঁদের রচনার বহু মহৎ কবিতা রচনা করেছেন। সাহিত্যের ইতিহাস তার সাক্ষ্য।
(গ) কবি কবির অভিজ্ঞতা থেকে কবিতা রচনা করেন। দেশ অবশ্যই সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলে দেশ বা তার অভিজ্ঞতাও কবিতার জন্য একমাত্র উপকরণ নয়। কবিতা যা কিছু নিয়ে লেখা হতে পারে, টুথ ব্রাশ হোক, ডারউইনের বিবর্তন হোক, ঘুটে-কুড়োনী কিংবা অপরূপা হেলেন হোক, একটা কম্পাস বা ইন্টারনেট হোক, আহুরা-মাজদার প্রশংসা হোক, এমনকি গ্লোবাল ফাইনানসিয়াল ক্রাইসিস হোক। সেইটেই কবির জন্য চ্যালেঞ্জ। নারী ও প্রেম নিয়ে তাঁর যে প্রীতি ও উৎসাহ সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। অবশ্য আমিও মানি, যে পারে সে পারে, সঙ্গে সঙ্গে এই পারার বিচার বঙ্গভাষায় রচনার মধ্যেকার তুলনায় তো যেতে হবেই তার ওপর আজকাল গ্লোবালাইজেশনের যুগে কবিদের ভূবন এখন সকল দেশের সকল দেশের ভাষায় ও অভিজ্ঞতায় অর্জিত উৎকর্ষ। কূপের মন্ডুকের দিন কি গতস্য হয়নি!
(ঘ) পশ্চিমের ফুরফুরে বাতাস এসে লাগলেও তা যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি। মাহমুদের প্রমাণের কায়দা আমার অজানা। তবে স্বাস্থ্যকরতার প্রমাণ তিনি নিজেই কেননা তিনিই কবির আত্মবিশ্বাস গ্রন্থে স্বীকার করেছেন রবীন্দ্রনাথ না পড়ে তিনি তিরিশের কবিদের কাছে কবিতা শিখেছেন। আর কার্যত : মাহমুদের কবিতায় রাবীন্দ্রিক বা নজরুলী কি অঙ্গ বিদ্যমান? এতোগুলো কবিতা এবং গুরুত্বপূর্ণ কবিতা লিখেও তিরিশের রাজা কবিদেরও – সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, বৃদ্ধদেব বসু এবং জীবনানন্দ দাশ – সম্পর্কে এমন হঠোক্তি আমার কাছে বিস্ময়কর ও হতাশাব্যঞ্জক। আমি কি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেব যে কবিদের কবি বুদ্ধদেব বসু এই শিরোনামেই তিনি বুদ্ধদেব বসু স্মরণে স্মৃতিচারণ করেছেন উত্তরাধিকার পত্রিকায়।
কবির কররেখা গ্রন্থের শেষ স্তবক৩ স্মরণ করা যাক। কবিদের দোহাই পেড়ে তিনি লিখেছেন :
আমি শুধু কবি আর তো কিছু নই। আমার একটাই দোষ সেটা হলো আমি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা, আমার মধ্যে ভবিষ্যতের ছবি ভাসে। ভাসে কত নদী কত নারী। আমি ফুল ভালবাসি। কারণ তার আয়ু একদিন মাত্র। পরের দিন সে আর্বজনা স্তুপে চলে যায়। সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী যারা আমি তাদের মধ্যেই থাকি। কিন্তু আমার স্থায়িত্ব দৈব নির্ধারিত। মানব জাতির আমাকে ভাল না বেসে গত্যন্তর নেই। কারণ আমি ছন্দ জানি। মিল রচনা করি। আমার হাতে তাল ভঙ্গ হয় না। আমি প্রতিটি ভাষার সম্ভবপর সঙ্গীতের উদগাতা।
পৃথিবীতে আসিরীয়-বাবিলন কালের আগের থেকেও কবিরা শ্লোক রচনা করে আসছেন, কিন্তু নিরো গোত্রীয় শিল্পী ছাড়া কেউ এই ধরনের আত্মপ্রসাদ খোঁজেন না। শেষ বয়সে রবীন্দ্রনাথও তার স্বকর্ম সম্পর্কে অনেক সংশয়ী ছিলেন। আল মাহমুদ পঞ্চাশের পরের প্রধান কবি। তাঁর কৃতিত্ব তাঁরই কৃতিত্ব। কিন্তু তিনি যা পারেন, তার বেশি পারেন না। তাঁরই গ্রামের সন্নিকটের আরেকটি গ্রাম শিবপুরের আরেকজন মহৎ শিল্পী, উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ-র৪ কথা শুনিয়ে দিতে চাই :
আমি কিছুই জানি না। আমি বনে গিয়ে অনেক সময় বাজিয়েছি, কিন্তু কই, আমার বাজনা শুনে কোন পাখি তো ডালে এসে বসলো না, বা কোন হরিণ এসে নিস্তব্ধ হয়ে আমার বাজনা শুনলো না- তবে আমি কি শিখলুম।
পাদটীকা
১. আল মাহমুদ, কবির আত্মবিশ্বাস
২. আল মাহমুদ, কবিতা সমগ্র ১, ২, অন্যন্য, ১৯৯৭, ২০০৬
৩. আল মাহমুদ, কবির কররেখা, সূচিপত্র, ২০০৮
৪. মোবারক হোসেন খান, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, পৃষ্ঠা- ১২৬, বাংলা একাডেমী, জুন, ২০০৭
ঙসধৎ ঝযধসং’ং ঢ়যড়ঃড়.
চলবে…

- Advertisement -

আরো পড়ুুর