কবি মালেক জোমাদ্দারের
‘মেঘ জলে ভাসি’ কাব্য গ্রন্থ থেকে
এক গুচ্ছ কবিতা…

বর্ণমালায় জন্মভূমি
অনেক প্রাণের বিনিময়ে
অর্জিত এই দেশটা
আপন আলোয় উদ্ভাসিত
আঁখি কোণে রেশটা
ইচ্ছে ছিল বাংলা মাকে
ইতিহাসে নাম লেখাই
ঈদ খুশিতে যেমন ভাসি
ঈগল হয়ে পথ দেখাই
উড়ি আমি স্বপ্ন ভেলায়
উকি মারি ভক্তিতে
ঊষা লগ্নে নীল আকাশে
ঊনিশ কুড়ি শক্তিতে
ঋণ দিয়েছেন দেশ-দরদী
ঋণের খাতায় রক্ত
এই দেশটা বাংলা ভাষার
এই ভাষাতে ভক্ত
ঐ আকাশে হাজার তারা
ঐ তারারা ঝলমলে
ওদের দেখে শিখতে হবে
ওরা কেমনে পথ চলে
ওষুধ খেলে অসুখ সারে
ওষুধ লিখে ডাক্তারে
বর্ণমালায় লিখি তারে
বঙ্গভূমি বাংলারে।
সুজন বন্ধু
সূর্য উঠবে পূব আকাশে
আঁধার করবে দূর
তুমি আসবে মৃদু হাসবে
লাগবে সুমধুর
কুঞ্জে মুকুল ভ্রমর ব্যাকুল
মিলন দু’জনায়।।
জ্ঞানের আলো তুমি জ্বালো
বন্ধু সুজন কয়
তোমার জ্ঞানে আমি জ্ঞানী
সর্বজন সুধায়।।
আপন প্রদীপ জ্বালবে আঁলো
আঁধার করবে দূর
চলার পথে নিজের শক্তি
রাখিও ভরপুর
জীবন পাখি বাধি রাখি
ছুটতে শুধু চায়।।
তুমি
তুমি শ্রাবণে তুমি ভাদ্রে
তুমি জৈষ্ঠে তুমি রৌদ্রে
তুমি নীল জ্যোছনায়
তুমি হিমেলে তুমি খরায়
তুমি মেঘে তুমি বর্ষায়
তুমি দিল চেতনায় ।
ফাগুনে তুমি আগুন জ্বেলেছো
হলুদ মেখেছো গায়
পুড়েছো আমার গতর খানা
অন্তর জ্বলছে তায়
কত জল গড়াল আমার
দু’টি আঁখি কোণে
কত দিন আর কত রাত
ভাবছি আপন মনে।
উদ্দীপকে নাড়ে তোমায়
চলেছ হেলে-দুলে
অবহেলা অনাদর কেন
কী ভেদ মূলে?
ভালোবাসার ভালোবাসা
যদি একবার পাই
আচ্ছা করে জিজ্ঞাসিব
কোথায় ছিলে ভাই
সন্ধ্যারাতে ধূপ জ্বালিয়ে
বরণ করছো কাকে?
উপরেতে আমাকে আর
মধ্যে রাখছো তাকে
গায়ে হলুদ পায়ে হলুদ
হলুদ কুঞ্জ বাকে
মনটা আজ বড়ই ধূসর
বলছি শোনো তাকে।
বোধ
বোধের ঘরে বিশাল সিন্ধুক
তালা খোলার নাই চাবি
ক্রোধ হিংসা কুটিল মনে
কি সুখ খোঁজো তাই ভাবি!!
শূন্য করে বোধের শক্তি
ঘুণপোকদের চাষ করে
নিজ স্বার্থে কুর্নিশ ভক্তি
ভাই ভগ্নি লাস করে।
সময় কথন- ১০১
রক্ত যখন ঝরছে ঝরুক
ভয় করি না মরনে
সামনে আসবে অনেক বাধা
রাখছি সেটা স্মরণে।
মুক্ত মানব মুক্ত জীবন
মুক্ত কেন থাকবে না?
মনব দেহ মানব মনে
পশুর মতো চিনবে না
দিবে হুকুম করবে জুলুম
মানতে কিন্তু বাধ্য না
দৃষ্টি শক্তি বিবেক বুদ্ধি
বধির কিংবা অন্ধ না
ভাবছো তুমি নদী ভূমি
রাখবে তোমার দখলে
যাদের হকে ভাগ বসাবে
রুখবে তারাই সকলে।
আকাশ তুমি মেঘলা কেন
আকাশ তুমি মেঘলা কেন
মেঘলা যেমন মনটা আজ
হৃদ মাঝারে কষ্ট ঢেলে
পাচ্ছো আবার মিছে লাজ।
আকাশ তুমি আঁধার কেন
বিষাদ কেন মনটা আজ
মনের মাঝে উথাল-পাথাল
সকাল যেন লাগছে সাঁঝ।।
জলতরঙ্গ ঢেউ খেলে যায়
মাতাল তবু মনটা আজ
তোমার মাঝে ডুব দিয়েছি
ভাল্লাগে না কোনো কাজ।।
যৌবন যদি মৌ বন হতো
মৌ সাগরে কাটতো রাত
মধুবনে মধু নাইরে
হা-হা-কার শূন্য হাত
মেঘের কোলে মেঘ জমেছে
ঝড় তুফান আর বজ্রপাত।
নির্লজ্জ বেইমান
আমি আবু বক্কর আমি রাজন
আমি ওই ছাত্রী তনুর খুনী!
আমি বিশ্বজিৎ আমি অভিজিৎ
খাদিজার মৃত্যুর ঘণ্টা গুনি।
আমি প্রশ্নপত্র পাওয়া ছাত্র
না পড়া উল্লসিত শান্তি
আমি তৃষ্ণা আমি বাংলার মুখ,
আমি ভুলে ভরা ভ্রান্তি
আমি পিলখানার কফিনে মোড়ানো
লাল-সবুজে সেনার লাশ
আমি নির্বাচনী খেলার দক্ষ খেলোয়াড়
প্রতিহিংসা করছি চাষ।
আমি ধর্ষিতা বোন, আমি ভ্যানচালক সৌরভ
গুলিবিদ্ধ শত বুক
আমি শেয়ার বাজার, আমি ডেসটিনি,
আমি হলমার্ক যুবক
আমি অগ্রণী, আমি সোনালী, আমি রুপালী
আমি বেসিক ব্যাংকে
আমি কেন্দ্রীয় কোষাগারে, আমি সর্বত্র বিরাজ
আমি সুউচ্চ র্যাঙ্কে।
আমি রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে মরা লাশ
আমি সরকারি ভবনে রডের বদলে বাঁশ
আমি তাজরিনে পোড়া অসহায় কর্মচারীর দীর্ঘশ্বাস
আমি গুম হওয়া সন্তান, মায়ের কান্নায় ভারি বাতাস।
আমি পা’চাটা কুকুর, যতই দেখাওনা মুগুড়, না ভয় নাই
আমি গুম হওয়া ইলিয়াস আলী আমি সাগর রুনীর ভাই
আমি সাত খুন শীতালক্ষার পাড়
আমি মতিঝিলের কলোনী আঁধার
আমি মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ আকাশ ভাঙ্গা চিৎকার
আমি কাটাতারে ঝুলানো ফেলানী, না পাওয়া বিচার
আমি দিকবিদিগ আমি কল্যাণপুর, আমি শোলাকিয়া
আমি ছিলাম গুলশান
আমি বাসে ধর্ষিতা হতে দেখছি মাজেদাকে
আমি নির্লজ্জ বেইমান।।