কিরণবালার পাচালি । জাফরুল আহসান

কিরণবালার পাচালি 
জাফরুল আহসান

হাক ডাক ছাড়ি গ্রামের মোড়ল জানিতে চাহেন
জটলা কিসের, থামুন সবাই, আপনি বলেন-
কহিলাম ভয়ে ‘কিরণবালাতো পোয়াতি হইয়াছে’
নওজুবিল্লা, মস্ত পাপের কাজ করিয়াছে।

বিহিত একটা করিতে হইবে শালিস ডাকিয়া
আরো কী কী সব কহিল মোড়ল মাথা নাড়াইয়া।

এ বাড়ি ও বাড়ি করিয়া ভিক্ষা ভিখারির বেশে
কিরণবালা যে ঢাকিতে পারে না দেহ কায়ক্লেসে
বুকের চূড়া সে কেমনে ঢাকিবে ছেঁড়া শাড়ি দিয়া
কামনার চোখে লালসার জিভ খায় যে গিলিয়া।

যদি কেউ ডাকে কিরণবালারে সোহাগে আদরে
মানা শিখে নাই ডাকিলে যাইবে বাঁশ-ঝোপ-ঝাড়ে
শরীরী ক্ষুধার জাত কুল নাই জীবন জোয়ারে
ইতর চাড়াল ভেদাভেদ নাই কিরণের ঘরে।

বার বার হায়! তাহারে পোয়াতি করিয়াছে যারা
তাহারাই কহে ‘ছিনাল কিরণ, করো গ্রাম ছাড়া।’

বিচারের শেষে নিশি পোহাইলে দেখিল সকলে
কিরণবালা যে ফাঁস লইয়াছে বৃক্ষের ডালে
মরিবার আগে সব কথা ফাস করিয়া গিয়াছে
মোড়লের বীজে উদরে বাছাটি ধীরে বাড়িয়াছে।

কিরণবালার শোকে পশু-পাখি কাঁদে, কাঁদে তরুলতা
গাও গেরামের সকলে কহিল, কহিল সে কথা
রক্ষক যদি ভক্ষক হয় বিচারের শেষে
কিরণবালারা যেন না জন্মে আর এই দেশে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here