অন্যধারা ডেস্ক : নদীভাঙন, এক প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীর সমুদ্রে গিয়ে পড়ার সময় সাধারণত সমুদ্রের কাছাকাছি হলে তীব্র গতিপ্রাপ্ত হয়। তখন পানির তীব্র তোড়ে নদীর পাড় ভাঙতে থাকে। নদীর পানির স্রোতে নদীর পাড় ভাঙার এই অবস্থাকে নদীভাঙন বলে।
বন্যা নদীভাঙনের অন্যতম কারণ। প্রতি বছর নদীভাঙনের কারণে লক্ষ লক্ষ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেতের ফসল, ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট প্লাবনভূমির প্রায় ৫% প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের শিকার। নদীভাঙন বেশি হয় বর্ষাকালে। পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, তিস্তাসহ প্রায় ৪১০টি নদী-উপনদীতে বন্যা এবং সন্নিহিত নদীতে ভাঙনের ঘটনা ঘটে প্রতিবছর। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীভাঙনের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর নদীভাঙনে নিঃশেষ হয়ে যায় প্রায় ৮,৭০০ হেক্টর জমি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ এলাকা হল- বগুড়া, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাওয়া, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর এবং ময়মনসিংহ। তবে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি নদীগুলোও বর্ষাকালে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
নদীভাঙনের কারণ : নদীভাঙনের কয়েকটি কারণ হলো—জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর প্রবাহপথ ও তীব্র গতিবেগ, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীগর্ভে শিলার উপাদান, রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি, বাহিত শিলার কঠিনতা, নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি, বৃক্ষনিধন ইত্যাদি। অনেক সময় নদীতীরে খরাজনিত কারণে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে তার প্রভাবেও নদীতে ভাঙন ধরে এবং ভূমির অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়।
নদীভাঙনের ক্ষতির প্রভাব : নদী ভাঙন এমনই একটি বিষয় যার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দেশবাসী সকলেই জড়িত, নদী ভাঙন একটি চিরন্তন, স্থায়ী, মারাত্মক এবং অপূরণীয় ক্ষতির উৎস, নদী ভাঙন ভূমিকম্প, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা এমনকি আগুনের চেয়েও ক্ষতিকর, নদী ভাঙনের কোনো বাছ-বিচার নেই। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, নদী ভাঙন অনেককে ভূমিহীন এবং ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করে, নদী ভাঙন শিক্ষারত অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে সারা জীবনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে, নদী ভাঙনের শিকার- মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, কবরস্থান, শ্মশান, হাট-বাজার, শিক্ষাঙ্গন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ইত্যাদি, নদী ভাঙনের দরুন (সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী) প্রতি বছর দু’ থেকে আড়াই লাখ ছিন্নমূল/ ভূমিহীন মানব সন্তান শহরের জনসংখ্যা বাড়িয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আবাসন সংকট, যানজট, পরিবেশ দূষণ এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, নদী ভাঙন বেকারত্বেরও একটি বড় কারণ, নদী ভাঙন বহু প্রাচীন এবং মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ কেটে ফেলতে বাধ্য করে, নদী ভাঙনের দরুন গবাদিপশুও কৃষকের হাতছাড়া হয়, নদী ভাঙন অনেক ঐতিহাসিক কীর্তিও বিনাশ করে বলে পদ্মা নদীর অপর নাম ‘কীর্তিনাশা’। বাংলাদেশে এমনি আরো বহু নদী রয়েছে।
হয়ত নদীভাঙন সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান হবে না কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম হাতে নিলে নদীপাড়ের মানুষের দুঃখ কিছুটা হলেও লাগব হতো।
অন্যধারা/সাগর