এই উপমহাদেশের নারীরা যেন সব চাইতে অসহায় এবং ঠিকানাবিহীন । নারীর জন্ম হয় বাপের বাড়িতেআর বয়স হলে বিবাহের নামে প্রবেশ করতে হয় শ্বশুর বাড়িতে। ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন হলে স্বামীর বাড়িতে থাকা যায় আর বৃদ্ধকালে তো সন্তানের বাড়িতেই থাকতে হয় তা, আর না হলে বৃদ্ধাশ্রম বা গাছতলা। সারা জীবন পরের জন্য শ্রম ও সেবা দিয়েই একজন নারীকে চলে যেতে হয় পৃথিবী ছেড়ে। তার নিজের বলে কিছুই থাকে না। মেয়েদের তো জন্ম দেয় এক পক্ষ আর মৃত্যুর পর কবর দেয় আরেক পক্ষ।
সমাজ বলে স্বামী যখন স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে তখন কেউ বাধা দিতে পারে না। কারণ স্বামী পূর্ণ অধিকার নিয়েই স্ত্রী নির্যাতন করছে অন্য কারো বাধা দেয়ার অধিকার নেই। কিন্তু কেউ যদি একটা পশুকেও নির্যাতন করে তখন দেখা যায় অনেকেই বাধা দেয় বা নিন্দা করতে থাকে। এতে কি প্রতীয়মান হয় না যে নারী জাতি পশুরও অধম?
আর আমাদের সমাজ ব্যবস্থাতো এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে নারীদের বাইরে বের হওয়াই নিষেধ। তাদের রোদ কিংবা বৃষ্টি, গরম কিংবা শীত তাতে কিবা আসে রাখতে হবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঠেকে।
যদি তারা নিজের ইচ্ছায় পোশাক পরে তবে ধর্ষণের শিকার হতে হবে আর তার জন্য দায়ি সেই পোশাক। মেয়েদের অবশেষে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করে জন্মদিতে হবে সন্তান, আর বৃদ্ধাবয়সে সেই সন্তান তাকে একটু থাকার আশ্রায় হয়তো বা দেবে। কিন্তু সেই খানেও নারী অন্যর করুণায় বেঁচে থাকে।
প্রতিদিন খবরের কাগজে কয়েকটি খবর থাকে নারী নির্যাতনের। এসব নির্যাতন অমানুষিক এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত। নির্যাতনের শতকরা ৯৫ ভাগ যৌতুকের জন্য বাকি হয় দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি বা পরকীয়া। ইসলাম ধর্মে যৌতুক নেয়া পাপ উপরন্তু দেন মোহরের টাকা পরিশোধ না করে স্ত্রীর শরীরও স্পর্শ করা যায় না। কিন্তু কজন অদ্যাবধি দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেছেন? উপরন্তু বিবাহের সময় স্বামীর বাড়ি থেকে শাড়ি গহনার দাম ধরে কাবিনের মোট অর্থ থেকে উসুল বা কর্তন দেখানো হয়। এ যেন বরের অধিকার বা পাওনা। কি বিচিত্র সমাজব্যবস্থা।
মেয়েটি একা একটি অচেনা নতুন বাড়িতে গিয়ে ওঠে সবাই দেখতে আসে মেয়েটি বাপের বাড়ি থেকে কি নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেউ ভাবে না সে বাপের বাড়িতে কি ফেলে এসেছে।আর শ্বশুর বাড়িতে নতুন লোকজন এবং ভিন্ন তাদের আচার ব্যবহার। প্রথমদিন থেকে সে শ্বশুর বাড়ির সেবা দাসী। যত উচ্চ শিক্ষিত বা আধুনিক নারীই হোক চলতে হয় নতুন বাড়ির সবার মন যুগিয়ে।
নারী নির্যাতন মামলা করেও কোনো লাভ হয় না। মামলার দীর্ঘসূত্রতা একজন নির্যাতিত নারীকে আরো অসহায়ত্বের পথে নিয়ে যায়। রাষ্ট্র যতই আধুনিক হোক নারীরা অসহায় অসহায়ই থাকে। নারীর পক্ষে যত আইনই তৈরি হোক তার প্রয়োগ আসলে নেই। খুন করলে প্রায়শ দেখা যায় খুনির ফাঁসি হয়ে গেছে। কিন্তু স্ত্রী হত্যার দায়ে কটা স্বামীর ফাঁসি হয়েছে?
যদি কোনো নারী স্বামী গৃহে নিগৃহীত হয় তাহলে স্বামীর বাড়ির সবাইকেসহ পাশের প্রতিবেশীদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত। নারীকে যদি তালাকও দিতে হয় তবে দুই পাশের প্রতিবেশীর মতামত গ্রহণপূর্বক তালাক কার্যকর করা উচিত।
এই প্রচণ্ড গরমে হিজাব একজন কিশোরীর জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। কিন্তু তবু তারা এটা পরছে কারণ সমাজ এটাকে উৎসাহিত করছে। এটাও এক ধরনের বন্দিত্ব। অশালীন পোশাক সমাজের জন্য ক্ষতিকর। নারীর জন্যও ক্ষতিকর।
শত শত বছর পার হয়ে গেছে, আর কতো কি পরিবর্তন হয়ে গেলো। কিন্তু নারী উপন অত্যাচার সেই এখনোও হয়েই যাচ্ছে। জানি না আর কত হাজার বছর তাদের অণ্যের করুণায় বেঁচে থাকতে হবে।