পুঁজি ও পর্যাপ্ত পৃষ্টপোষকতার অভাবই পীরগঞ্জের মৃৎ শিল্পিদের দুর্দিনের প্রধান কারণ

প্রতিনিধি, রংপুর : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাংলার আবহমান কালের ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে । আধুনিকতার ছোঁয়া,পুঁজি ও পর্যাপ্ত পৃষ্টপোষকতার অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, পীরগঞ্জে প্রজাপাড়া পালপাড়া, চন্ডিপুর, মিঠিপুর, ধল্লাকান্দি ও ছিলিমপুর এ ৫টি  গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক নারী পুরুষ কয়েক যুগ ধরে মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন । কিন্তু বিভিন্ন কারনে সময়ের বিবর্তনে এ শিল্পে ভাটা পড়েছে । তাই তারা বাপ দাদার আমলের এ পেশা বদল করে অনেকে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন ।
পীরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের মৃৎ শিল্পদের সঙ্গে জতিদের মধ্যে একটি গ্রাম উপজেলা সদরস্থ প্রজাপাড়া । সে গ্রামের প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ এখনও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত । গত শনিবার কথা হয় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ক’জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বাপ দাদার আমল থেকে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন । তারা বিগত ১৯৭৭ সনে নিজেদের মধ্যে একটা সমিতি গঠন করেন । যে সমিতিটি বর্তমানে “ প্রজাপাড়া পালপাড়া টালি মেশিন মৃৎ শিল্প সমবায় সমিতি লিঃ’ নামে পরিচিত । সমিতিটি উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধিত । যার নং-০০৬ ।
তাদের মতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাষ্টিক, সিলভার ও এ্যালুমিনিয়াম এর তৈজসপত্রের কারনে মাটির তৈরী জিনিষ গুলো সারা বছর তেমন বিক্রি হয় না । বছরের চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে গ্রামে-গঞ্জে বসে জমজমাট মেলা বসে। চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে হয় বড় আয়োজন। সে সময় জমে ওঠে মৃৎ শিল্পীদের ব্যবসা। মাটির তৈরি খেলনা ও তৈজসপত্র বিক্রি বেড়ে যায়। মূলত এ সময় গুলিতে যা আয় হয়, তা দিয়েই বছরের বাকি সময়টা চলেন পালপাড়ার মৃৎ শিল্পীরা। কিন্তু করোনার কারনে এবারে তারা সে আয়ের সুযোগ পাননি । বর্তমানে এ পালপাড়ার মৃৎ শিল্পিদের বড়ই দুর্দিন যাচ্ছে । অর্থ সংকটের কারনে এ পেশা ধরে রাখা তাদের জন্য অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে । এমনি এক পরিস্থিতির মাঝে মাটির তৈরী জিনিষপত্র পোড়ানোর জন্য বর্তমানে তাদের নেই কোন চুল্লি, নেই কোন সেড । এ কারনে মৃৎ শিল্পের বিস্তার তো দুরের কথা, তারা পেশা সংকুচিত করে আনতে বাধ্য হয়েছেন । তাছাড়া ভাল তৈজসপত্র তৈরীতেও তাদের রয়েছে যথেষ্ট প্রশিক্ষনেরর অভাব । তাই পালপাড়ার এ মৃৎ শিল্পিরা ক্ষুদ্র পরিসরে ফুলের টব, ফুলদানী, ছাইদানী, পুতুল সহ বিভিন্ন উপকরন তৈরী ও বিক্রির মাধ্যমে তাদের পেশা ধরে রেখেছেন। অনেকেই জীবিকার প্রয়োজনে বিকল্প পেশায় আয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন ।
দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও এ সমিতির মৃৎ শিল্পিরা  এখনও স্বপ্ন দেখেন, কোনো একদিন হয়তো আবারও কদর বাড়বে মাটির তৈরী এ সব পণ্যের। হয়তো জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন তারা।
এ ব্যাপারে প্রজাপাড়া পালপাড়া টালি মেশিন মৃৎ শিল্প সমবায় সমিতি লিঃ’ এর সভাপতি পুনিল চন্দ্র পাল এর সঙ্গে কথা হলে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা বহু কষ্ট করে বাপ দাদার এ পেশা ধরে রেখেছি । আমরা আমাদের এমপি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মহোদয়ের কাছে আমাদের সমস্যার কথা বলেছি । তিনি আমাদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছেন এবং কিছু সরকারী সহায়তা পাচ্ছি । তবে তা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয় । একই অভিমত ব্যাক্ত করেন সমিতির সাধারন সম্পাদক নিশি কান্ত পাল । তার প্রত্যাশা সরকার আমাদের জন্য একটা চুল্লি, সেড, সকলের প্রশিক্ষন ও পুঁজির ব্যবস্থা নিশিÍত করলে আমরা আমাদের শিল্পকে ধরে রাখতে পারব । সে সঙ্গে আমাদের জীবনমানও অনেকটা উন্নত হবে । সমিতির সহ সভাপতি শুনিল চন্দ্র বলেন, সরকারের পর্যাপ্ত পৃষ্টপোষকতা পেলে পীরগঞ্জে মৃৎ শিল্পের বিস্তার ঘটানো সম্ভব । তাই তিনি এ ব্যাপারে- সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন ।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম এর সঙ্গে কথা হলে তিনি  বলেন, আমরা সমিতিটির সমস্যা সমাধানে ও মৃৎ শিল্পিদের জীবনমান উন্নয়নে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অন্যধারা/সাগর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here