বিনোদনের পাশাপাশি যে পাখিটি আনতে পারে আপনার আর্থিক সচ্ছলতা

অন্যধারা ডেস্ক :  লাভ বার্ড একটি বিদেশি উন্নত জাতের পাখি। এই পাখি অনেক দামি হলেও বর্তমানে গ্রামে বা শহরে শখের বসে অনেকেই বাড়িতে খাঁচায় পুষে থাকেন। চাল-চলন ও বাহারি রঙ্গের কারনে যে কারো কাছেই আকর্শনীয় এই পাখিটি।

বৈশিষ্ট্য : ১. লাভ বার্ড টিয়া প্রজাতির পাখি, ২. এই পাখি শান্তি প্রিয়, চঞ্চল, আনন্দপূর্ণ ও দেখতে খুব সুন্দর, ৩.  লাভ বার্ড পাখিটি মাত্র ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি বা ১৩ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, ৪. এদের জীবনকাল ১০ থেকে ১২ বৎসর , ৫. খুব সহজেই এবং অল্প পরিসরে এদের লালন পালন করা যায়, ৬. লাভ বার্ড এর লালন পালন খরচ অনেক কম ।

লাভ বার্ড এর মূল আবাস স্থল হল আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চল । লাভ বার্ড খুব কম খায়। খাবার নষ্ট করেও কম। লাভ বার্ড এর খাবার তালিকায় রয়েছে- কাউন, চিনা, বাজরা, তিসি, সূর্যমুখীফুলের বিচি, কুসুম ফুলের বিচি, সরিষা, ধান, বিভিন্ন ধরনের ফল এবং কচি ঘাসের পাতা ও সবজি। একটি পাখি দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার গ্রহন করতে পারে। লাভ বার্ড প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করে থাকে তাই সারাক্ষণ পানির ব্যবস্থা করতে হয় । এদের খুব নিরিবিলি পরিবেশে রাখতে হয় কারণ লাভ বার্ড অলস প্রকৃতির ও শান্তি প্রিয় পাখি।

যে ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে : লাভ বার্ড ওদের ধারাল দাঁত দিয়ে সারাক্ষণ যা পায় তাই কামড়ায় তাই খেয়াল রাখতে হবে পাখির খাঁচায় যেন পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতীয় পাত্র না থাকে । কোন কারনে প্লাস্টিক কেটে খেয়ে ফেললে, অসুস্থ হতে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে, খাচায় এই পাখি পালন করতে খাঁচার আদর্শ মাপ ১৮-১৮-২৪ ইঞ্চি। আবার ২৪-২৪-২৪ হলেও অসুবিধা নেই, একটি খাচায় তিন জোড়া পাখি থাকলে সবগুলি বাক্স বা কলসি একই উচ্চতায় দিতে হবে । তা না হলে বাসা নিয়ে মারামারি করে সকলেই আহত হতে পারে, লাভ বার্ড এর পরিপূর্ণ বয়স হতে সময় লাগে প্রায় ১০ মাস। উল্লেখ্য যে কখনও কখনও ১২/১৩ মাস ও সময় লাগে, লাভ বার্ড মুলত ১০/১১ মাস বয়সেই ডিম দেয় । তাই উক্ত সময়েই প্রতি জোড়া পাখির জন্য ৮ x ৮ x ৮ মাপের কাঠের বাক্স বা মাঝারি সাইজের পাখির জন্য তৈরি কলসি দিতে হবে, এ পাখি প্রতিবারে ৫টি থেকে ৮ টি ডিম দিয়ে থাকে কিন্তু এর মধ্যে সাধারনত ৪ টি বাচ্চা পাওয়া যায়, লাভ বার্ড ডিম দেওয়ার ২২ – ২৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। এদের বাচ্চাদের মুক্ত করে দিতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ দিন। কারণ বাচ্চা ২০ থেকে ২৫দিন পাখির বাসার ভিতর থাকে । তারপর পুণরায় ডিম দেওয়ার জন্য এরা নিজেকে প্রস্তুত করে, লাভ বার্ড খাঁচায় যখন পালন করা হয় তখন অনেক ভিটামিন- মিনারেল গ্রহন করতে পারে না । এজন্য পাখি চিকিৎসাকের পরামর্শে ভিটামিন ও মিনারেল অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দিতে হবে ।

আবহাওয়া অনকূলে থাকলে ও পর্যাপ্ত পরিমান যত্ন নিলে লাভ বার্ড প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর বৎসরে সাধারনত ৪ বার ডিম দেয় ।

চিকিৎসা : খামার বা খাঁচায় পাখি উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণু মুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রথমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানু নাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে, খাঁচায় বা খামারের জন্য সুস্থ-সবল পাখি সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে পাখিকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে পাখির মুখ যেন দ্রবণে না ডুবে, অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে,  জীবাণু মুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে, পাখি থাকার স্হান বা খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং পাখির বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

বর্তমানে অনেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি আয় করার উদ্দেশ্যই লাভ বার্ড পাখি পালন করে থাকে। সম্ভাবনাময় এ লাভ বার্ড পালন করে বাড়তি আয় করা যায়, এমন কি বেকারত্ব দূর করাও সম্ভব।

অন্যধারা/সাগর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here