আমরা জানি মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একই সমাজে নানা জাতি গোষ্ঠি ধর্ম বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করবে এটাই বাস্তবতা। সকলকে নিয়েইতো সমাজ। সুতরাং যেই সমাজে এর ব্যত্যয় ঘটে সে সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারবে না। অতএব মানব সমাজে থাকবে সামাজিক ঐক্য-সংহতি ও পারস্পরিক সম্প্রীতির সাজুয্যতা। এটি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি এবং সামাজিক বসবাসের আদি-অন্ত প্রবাহ। একটি সমুদ্রে যেমন নানা ধরণের জলজ প্রাণি কিংবা জলজ উদ্ভিদ থাকে, তেমনি একটি বনে বা বাগানে থাকে নানা জাতের বৃক্ষ, লতা, পাতা, গুল্ম, ফল, ফুল প্রভৃতি। নানা জাতের ফুল, ফল ও বৃক্ষ লতাদি না থাকলে বাগানের যেমন সৌন্দর্য বাড়ে না তেমনি একই সমাজে নানা জাতি গোষ্ঠি ও ধর্ম বর্ণের মানুষ না থাকলে সে সমাজও সুন্দর মনে হয় না। বর্তমান বিশ্বের উন্নয়ন ও প্রগতিশীল সুন্দর মানব সমাজের Concept তাই।
মানুষের জীবন সুন্দর করার জন্যেইতো সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। সমাজ সৃষ্টি করেছে মানুষ। কারণ মানুষ উপলব্ধি করেছিলেন একতা ও সংহতি এবং সামাজিক বিধি-বিধান কিংবা নিয়মকানুন ছাড়া জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়। এজন্যে স্ব স্ব ধর্মের মানুষেরা তাদের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের লক্ষ্যেই সমাজের নিয়মকানুন প্রর্বতন করেন। এছাড়াও মানুষকে একত্রে বাস করতে হলে ধর্মের কতকগুলো নিয়মনীতি মানা দরকার। নিয়মকানুন ছাড়া মানুষ একত্রে সমাজবদ্ধ হয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে না। যার যার খুশি মত সমাজে চললে সমাজ ও দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এজন্য প্রত্যেক ধর্মের উপদেশ হলো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এবং এর মাধ্যমে সমাজ, দেশ তথা বিশ্বমানবতার উপকার সাধন করা। তবে সমাজ জীবনে দু’রকম নীতি প্রচলিত থাকে। একটি হলো সাধারণ নিয়ম-নীতি; অন্যটি হলো ধর্মীয় নীতি। সাধারণ নীতিমালার মধ্যে থাকে সমাজের নিয়ম শৃঙ্খলা, দায়িত্ব-কর্তব্য ও সামাজিক রীতিনীতি। আর অন্যদিকে ধর্মীয় নীতির মধ্যে পড়ে ধর্মীয় অনুশাসন, আচার অনুষ্ঠান ও পূজা-পার্বন প্রভৃতি।
বিশ্বের যে কোনো ভূ-মন্ডলে আমরা বসবাস করিনা কেন সমাজবদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের নিজ নিজ দেশের প্রতি, মাতৃভূমির প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য থাকবে নয় কি? আপন দায়িত্ব-কর্তব্য মানুষকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যায়। উন্নতির জন্য কোনো দেবতা কিংবা অলৌকিক শক্তি কাজ করে না। নিজের আপন শক্তিই যথেষ্ট। কারণ মানুষের আছে অনন্ত শক্তি। যেই শক্তি দিয়ে মানুষ তার আপন মনুষ্যত্ব ভুবনকে আলোকিত করতে পারে, উদ্ভাসিত করতে পারে।
মানুষ তার আত্মশক্তি দিয়েই বিশ্বের সকল কর্ম সম্পাদন করতে পারে। এজন্যেই প্রত্যেক ধর্ম মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছে। তাই হিন্দুধর্মে বলা হয়েছে- অমৃতস্য পুত্রম। ইসলাম ধর্মে মানুষকে বলা হয়েছে- আশারাফুল মখলুকাত। বৌদ্ধধর্মে বলা হয়েছে- ‘দুল্লভো মনুসত্ত পটিলাভো’। খ্রিস্টধর্মে বলা হয়েছে- ‘ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সন্তান’। এরকম প্রতিটি ধর্মে মানব মর্যদার বন্দনা গীত হয়েছে। কবির কণ্ঠেও এর প্রতিধ্বনি আমরা দেখতে পাই “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”। তাহলে দেখুন মানব মর্যাদা কত বড়, কত শ্রেষ্ঠ এ বিশ্বে। বিশ্বের সকল ধর্মের মানব মর্যাদার বাণী যদি এই হয় তাহলে আমাদের কি করা উচিত আমরা নিজেরাই চিন্তা করতে পারি এবং গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। আমরা যেহেতু সর্বশ্রেষ্ঠ জীব সেহেতু আমাদের কাজই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হওয়া উচিত। প্রকৃত ধর্ম ও মানবতা আমাদেরকে সেই শিক্ষাই দেয়।
অন্যদিকে জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও গরীয়সী। জননীর প্রতি যেমন আমৃত্যুকাল সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে; তেমনি জন্মভূমির প্রতিও আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য থাকা উচিত। এ দায়িত্ব-কর্তব্য নিজেকে, পরিবার, সমাজ ও দেশকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে সামাজিক ঐক্য-সংহতি ও সাম্য-সম্প্রীতিই মাতৃভূমির উন্নতি-সমৃদ্ধি ঘটাতে পারে। এ উন্নতির জন্যে আমাদের প্রয়োজন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও হৃদয়ের মেলবন্ধন। যেখানে ঐক্য-সংহতি ও সম্প্রীতির অভাব সেখানেই জাতীয় উন্নয়ন ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেজন্য আমাদের সকলের প্রয়োজন স্ব স্ব মানবিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ব-কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় মানস তৈরি করা। আমাদের সমাজ, আমাদের দেশকে তো আমরাই তৈরি করবো। অন্য কেউ তৈরি করবে না। স্বদেশের শান্তি-সমৃদ্ধি আমরাইতো আনবো। অন্য কেউ কি আনতে পারে? ভিন দেশের মানুষ কিংবা পরাশক্তি আমাদের শান্তি-সমৃদ্ধি কখনো আনতে পারে না। নিজ দেশের শান্তি, নিজ দেশের উন্নতি সমৃদ্ধির জন্য নিজেকেই ভাবতে হবে। এটাই চিরন্তন নীতি। তবে এজন্যই আমাদের প্রয়োজন ধর্ম বর্ণ জাতি গোষ্ঠি সকল শক্তিকে সমন্বিত করে জাতীয় শক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের মেলবন্ধন তৈরি করা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠেও সাম্যের জয়গান ধ্বনিত হয়েছে একদিন। তিনি বলেছিলেন – “গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান”।
ধর্ম শব্দের অর্থ ধারণ করা বা লালন করা। ‘√ধৃ’ ধাতু ‘অনট’ প্রত্যয় থেকে ‘ধর্ম’ শব্দের উৎপত্তি। সুতরাং বলা চলে, মানুষ সাধারণভাবে নিজের বা অন্যের কল্যাণের জন্য যা ধারণ করে তাই ধর্ম। ইহজগৎ ও পরজগৎ উভয় জগতে ধর্ম আলোকিত করে। ধর্ম মানুষকে পাপাচার, অন্যায়, অবিচার, উচ্ছৃঙ্খল, সকল প্রকার নীতি বিবর্জিত অসৎকর্ম ও বদঅভ্যাস থেকে বিরত রাখে। ধর্ম মানুষের মনের স্বাভাবিক নীতিবোধকে জাগ্রত করে। ধর্ম মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। সুকর্ম, সদাচার, পূর্ণ্যকর্ম এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞাসম্প্রযুক্ত কর্মের প্রতি ধর্ম মানুষকে উৎসাহ জোগায়। এজন্যই ধর্মীয় জীবন যাপন এবং ধর্মীয় নীতিবোধের এতো গুরুত্ব এতো মর্যাদা। ধর্মীয় জীবন মানুষকে সুন্দর ও নিষ্পাপ জীবনের দিকে নিয়ে যায়। তাই নিষ্পাপ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য ভগবান বুদ্ধ কতকগুলো নিয়মকানুন পালনের উপদেশ দিয়ে গেছেন। এসব নিয়মকানুন পালনের মধ্য দিয়ে মানুষ কুশল ধর্মে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুশল ধর্ম মানুষের মুক্তির পথ পরিষ্কার করে তৃষ্ণার ক্ষয় করে; এতে আসক্তি, হিংসা ও অজ্ঞানতা পরিহার করা যায়। ফলে বিদ্যা, জ্ঞান, ত্যাগ, আত্মবোধ, অহিংসা, দয়া, সুশৃঙ্খলতা, বিনয়, সংযম প্রভৃতি গুণের অধিকারী হওয়া যায়। জীবন দুঃখময় সকল দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ বৌদ্ধ ধর্মের মূল লক্ষ্য।
ধর্ম মানবজীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধর্মের সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার সম্পর্ক যেমন আছে, তেমনি আছে মানবিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নানামুখী উন্নয়নমূলক সম্পর্কও। বৌদ্ধমতে একজন প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তিই জীবনের সকল পর্যায়ে উন্নতি সমৃদ্ধি আনয়ন করতে সমর্থ হন। কারণ তিনি ধর্মীয় নীতিবোধে এবং সুশৃঙ্খল জীবন-যাপনে বিশ্বাসী হয়েই জীবনের সকল প্রকার কল্যাণমূলক মানবীয় কর্তব্যসমূহ সম্পাদন করেন। মানব জীবনে সকল দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পাদনের মধ্যেই পরিবার, দেশ, সমাজ ও বিশ্বের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধিকরণ সম্ভব। সুতরাং বৌদ্ধমতে ধর্ম হলো মানব জীবনের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাইতো বৌদ্ধধর্ম বলে সমন্বিতভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়েই সকল প্রকার উন্নতি সমৃদ্ধির কাজ করাই মঙ্গল।
মানবজীবনে কিংবা বিশ্বমানবতায় কারো অমঙ্গল কামনা করা উচিত নয়। মহামানব বুদ্ধ ধর্ম প্রচারের প্রথমেই তাই বলেছিলেন- বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায়, দেব-মনুস্সানং হিতায় সুখায়, লোকানুকম্পায় অর্থাৎ Greatest happiness for the greatest number of people. মানবজাতির সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও সুখের জন্যে মহামানব গৌতম বুদ্ধের কি উদাত্ত মহাবাণী ছিল-ভাবলে অবাক হই। যাঁরা সর্বজীবে কল্যাণকামী তাঁরা সকল অবস্থায় জীবের সুখ ও হিতকর্মে ব্রতী থাকেন। কখনো অন্যের অহিত, অমঙ্গল ও অন্যের সুখ বিনাশ করতে পারেন না। অপরের সুখ-শান্তি, উন্নতি-সমৃদ্ধির মধ্যেইতো নিজের কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীন উন্নতি সম্ভবপর হয়।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজ জীবনে একই ভূখন্ডে, একই বলয়ে বসবাস করতে হলে নানান ধর্ম, গোত্র, বর্ণ সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকের সঙ্গে বসবাস করতে হয়। একটি বাগানে যেমন নানাজাাতের ফুল থাকে; তেমনি একটি রাজ্যে বা রাষ্ট্রেও নানাজাতের মানুষ থাকবে। সুতরাং নানাজাতের সঙ্গে সহাবস্থান ও ঐক্য-সংহতির মাধ্যমে একত্রে বসবাস করে মানব জাতির ধর্ম ও সমাজের উন্নয়ন কর্ম করাই হচ্ছে বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্মের উপদেশ। বুদ্ধ ছোট-বড় কাউকে অবজ্ঞা করেননি। জাত-পাত বিচার করেননি। তিনি সকল মানুষকে কর্মগুণে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন সকল মানুষের মধ্যে কর্মশক্তি ও আত্মশক্তি রয়েছে। গোত্র, বর্ণ ও জাতশক্তি বড় নয়। তাই বর্ণ, শ্রেণী ও জাতশক্তির চেয়ে কর্মশক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে বুদ্ধ বসলসূত্রে উপদেশ দিয়ে বলেছেন-
“ন জচ্চা বসলো হোতি-ন জচ্চা হোতি ব্রাহ্মণো,
কম্মনা বসলো হোতি-কম্মনা হোতি ব্রাহ্মণো।”
অর্থাৎ জন্ম দ্বারা কেউ বৃষল হয় না, জন্ম দ্বারা কেউ ব্রাহ্মণ হয় না; কর্ম দ্বারাই বৃষল হয়, কর্ম দ্বারাই ব্রাহ্মণ হয়। কর্মশক্তি সম্পর্কে বুদ্ধের কি মহাবাণী! এজন্যেই বৌদ্ধধর্মে ধর্ম ও সমাজ উন্নয়নে কর্মশক্তি, ধী ও মেধাশক্তি, প্রজ্ঞাশক্তি এবং সর্বোপরি ঐক্য-সংহতির কথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে। আত্মশক্তিহীন কর্মপ্রচেষ্টা কখনো কোন জাতিকে বড় করতে পারে না। এছাড়া অনৈক্য ও বিভেদ কখনো জাতি বা সম্প্রদায়কে সমৃদ্ধ করতে পারে না। বৌদ্ধধর্মের উন্নতি ও সমৃদ্ধির মূলে আছে সম্যক আত্মপ্রচেষ্টা ও সঙ্ঘশক্তি। সঙ্ঘশক্তির গুণ অপরিসীম। বুদ্ধ তাঁর নবধর্ম প্রচার করতে গিয়েই পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদেরকে নিয়েই আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটিয়ে সঙ্ঘশক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সঙ্ঘকে সবসময় সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মত প্রকাশ করেছেন। কারণ তিনি জানতেন ব্যক্তির মৃত্যু হয় কিন্তু আত্মশক্তি জনিত সৃষ্ট সঙ্ঘশক্তির কখনো মৃত্যু হয় না। বুদ্ধ যে মহান সঙ্ঘপরিষদ গঠন করেছেন তাঁদের চরিত্র ও গুণ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন- ব্যক্তি যদি সৎ, ন্যায়, সুনীতিপরায়ণ, আদর্শবান, বিবেকবুদ্ধি ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন হয় তাহলে সেই ধর্ম, সেই সমাজ, সেই রাষ্ট্র প্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হয়। আদর্শ সঙ্ঘশক্তি দিয়েই সকল কর্মে সফলতা অর্জন করা যায়। তাই পবিত্র ত্রিপিটকে উক্ত হয়েছে- সংঘের একতা সুখদায়ক; ঐক্যবদ্ধগণের তপস্যা অধিক সুখপ্রদ।
মানুষের জীবন সুন্দর করার জন্যেইতো সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। সমাজ সৃষ্টি করেছে মানুষ। কারণ মানুষ উপলব্ধি করেছিলেন একতা ও সংহতি এবং সামাজিক বিধি-বিধান কিংবা নিয়মকানুন ছাড়া জীবন ধারন করা সম্ভব নয়। এজন্যে স্ব স্ব ধর্মের মানুষেরা তাদের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের লক্ষ্যেই সমাজের নিয়মকানুন প্রর্বতন করেন। এছাড়াও মানুষকে একত্রে বাস করতে হলে ধর্মের কতকগুলো নিয়মনীতি মানা দরকার। নিয়মকানুন ছাড়া মানুষ একত্রে সমাজবদ্ধ হয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে না। যার যার খুশি মত সমাজে চললে সমাজ ও দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এজন্যে বৌদ্ধধর্ম তথা প্রত্যেকটি ধর্মের উপদেশ হলো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এবং এর মাধ্যমে সমাজ, দেশ তথা বিশ্বমানবতার উপকার সাধন করা।
তবে সমাজ জীবনে দু’রকম নীতি প্রচলিত থাকে। একটি হল সাধারণ নিয়মনীতি; অন্যটি হলো ধর্মীয় নীতি। সাধারণ নীতিমালার মধ্যে থাকে সমাজের নিয়ম শৃঙ্খলা, দায়িত্ব-কর্তব্য ও সামাজিক রীতিনীতি। অন্যদিকে ধর্মীয় নীতির মধ্যে পড়ে ধর্মীয় অনুশাসন, আচার অনুষ্ঠান ও পূজা-পার্বন প্রভৃতি। বৌদ্ধমতে শুধু নিজে ধার্মিক কিংবা ধর্মপরায়ণ হলেই চলবেনা, অন্যকেও ধার্মিক করতে হবে। বৌদ্ধভিক্ষু, শ্রামণ কিংবা গৃহীগণ নানারকম ব্রতপরায়ণ হয়ে ইহজাগতিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানাবিধ উন্নয়ন ঘটাতে পারে। এর জন্যে প্রয়োজন শীলপরায়ণতা, ত্যাগপরায়ণতা, সেবাপরায়ণতা, সংযম, ধ্যান এবং আপন পর কর্তব্যকর্মে গভীর মনোযোগ ও আত্মনিবেশ করা। বৌদ্ধমতে জীবন-উন্নয়নের প্রধান শর্ত হলো সকল করণীয় কর্মে একাগ্রতা ও চিত্ত বিশুদ্ধিতা।
সুতরাং ধৈর্য্য, সহনশীলতা, সহমর্মীতা, মৈত্রী, করুণা, মুদিতা-উপেক্ষা এসব ব্রহ্মবিহারী গুণচর্চার মাধ্যমে ক্রোধ, অভিমান, হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে সর্বদা কায়, বাক্য ও মানসিক সদাচারী হয়ে, ত্যাগধর্ম ও কঠোর ব্রতপরায়ণে ধীর, স্থির ও প্রজ্ঞাবলে এবং সকল প্রকার সাধুতা দিয়ে আপন-পর কর্তব্য, সমাজ-দেশ তথা বিশ্বমানবতার কল্যাণকর্মে নিবেদিত হওয়াই হলো দূর্লভ মানব জীবনের সার্থকতা।
ক্রোধ সংবরণ কর, অভিমান পরিত্যাগ কর এবং সর্ববিধ সংযোজন অতিক্রম কর। মৈত্রী দিয়ে ক্রোধকে, সাধুতা দিয়ে অসাধুতাকে, ত্যাগ দিয়ে কৃপণতাকে এবং সত্য দিয়ে মিথ্যাকে জয় করতে হবে। আত্মোন্নয়ন ও কর্তব্যকর্মের জন্যে মহামানব গৌতম বুদ্ধের কি উদ্দীপনমূলক উপদেশ ভাবলে অবাক হই। সকল মানবিক উন্নয়নকর্মে এসব বাণীগুলো মেনে চলা আমাদের সকলেরই উচিত।
বৌদ্ধধর্ম বলছে ধর্মকে একটি অর্থবহ শব্দসমষ্টি অথবা ধর্মবৈশিষ্ট্য দিয়ে বিচার করতে। বৌদ্ধধর্ম মতে ‘ধর্ম’ হলো কতগুলো নীতিগুচ্ছ কিংবাা নিয়ম-নীতি যা প্রত্যেক মানুষেরই অনুসরণ করা উচিত। মানুষ হিসেবে এ নিয়ম নীতিসমূহ পালন করা আমাদের কর্তব্য তো বটেই। এছাড়া এসব নীতি কিংবা কর্ম সম্পর্কে অবশ্যই আমাদেরকে ভাবা উচিত। মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ নিজেই তাঁর ধর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন একটি বিশুদ্ধ জীবনবোধের আচরণ হিসেবে। এ জন্যেই বৌদ্ধধর্মে মহামতি সর্বোপরি সত্যানুসন্ধানী, সত্যানুরাগী এবং পন্ডিত বিজ্ঞজনোচিত দৃষ্টি ও সতত সুকর্ম সম্পাদনে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
১. বিনয় বা চারিত্রিক বিশুদ্ধতা এবং কার্যকারিতার কথাা বলা হয়েছে।
২. আত্ম-দর্শন ও আত্মোপলব্ধির বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৩. সার্বক্ষণিক বৌদ্ধ ব্রহ্মবিহার ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
মহামতি বুদ্ধ সদাচার সম্পন্ন জীবনকে সর্বাঙ্গসুন্দর আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক জীবনগঠনের সহায়ক বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। পূর্ব ও পাশ্চাত্যের সকল চিন্দাবিদ, জ্ঞানী, পন্ডিত ও মানবতাবাদী দার্শনিকেরা বুদ্ধের এই অন্তিম বাণীকে সমর্থন দিয়েছেন। পাশ্চাত্যের মধ্যযুগীয় বিখ্যাত পরিব্রাজক জন দ্রিক তিনিও বুদ্ধের মত সেই কথাই ব্যক্ত করেছিলেন। আমরা ধর্মকে কখনও জীবন বা সমাজচেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে পারি না। মানুষের জন্যেই ধর্ম। ধর্মের প্রয়োজন- ব্যক্তিগত, পারিরবরিক বেং সমাজবদ্ধ বা রাষ্ট্রীয়জীবনে এবং জীবনের সকল অবস্থায় সার্বক্ষণিক এবং অনিবার্য। যেখানে মানুষের বাস সেখানেইতো ধর্মের প্রয়োজন। মানুষের জীবন কিভাবে চলবে, কিভাবে তৈরী হবে, আমাদের করণীয় কি? কে কি করতে পারবে; না পারবে সবই বলে দেবে ধর্মীয় নীতিবোধের বিধান।
মানুষের সামাজিক জীবনে অনেক ধরণের চাহিদা থাকতে পারে। যেমন- ক্ষুধা, দারিদ্র্যতা, বিত্ত-বৈভব ও সম্পদ অর্জনের চিন্তা এবং নানা অভাব-অনটন প্রভৃতি। তাই বলে যে আমি চৌর্যবৃৃত্তি, দুর্নীতি বা অসদোপায় করে এগুলো মেটাব সেটাতো হতে পারে না এবং এগুলো লাভের জন্যে নিয়ম নীতিও লঙ্ঘন করতে পারি না। তাই এই সকল অনিয়মকে বিশ্বের সকল দেশে, সকল রাষ্ট্রে বেআইনী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। হ্যাঁ আমি অনাহারে রয়েছি এটা ঠিক। তাই বলে কি আমি চুরি করতে পারব? না অন্যায়ভাবে অর্থ সম্পদ লাভ করতে পারব? না, সেটা কখনও হতে পারে না।
বুদ্ধ ধর্মপ্রচারের প্রথমেই সকল জীবের সার্বজনীন সুখ, শান্তি সামগ্রিক কল্যাণের কথা বলেছিলেন। তাই তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন তোমরা এমন ধর্ম প্রচার কর যার বাণী থাকবে আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ এবং অন্তে কল্যাণ যা সম্পূর্ণ অহিংস ও মানবতাবাদী এবং সর্ব জীব ও মানুষের জন্যে অধিক সুখকর। তাই বলতেই হয় বৌদ্ধধর্ম এমন একটি সর্বজনীন এবং বিশ্বজনীন ধর্ম যেখানে বিশ্বের সকল জীবের নিরঙ্কুশ সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং সকল মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ও অধিকারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এজন্যেইতো এ ধর্মের বাণীগুলো হলো চিরন্তন, শাশ্বত এবং মানবিক আবেদনে পরিপূর্ণ। এখানে ধর্মের কোন দোহাই নেই, ধর্মের কোন বাড়াবাড়িও নেই। এমনকি ধর্মের জন্যে কোন প্রাণহানিও নেই। আছে শুধু মানবতা, প্রেম, প্রীতি, মমতা এবং মানবিক গুণাবলীর চর্চা ও প্রতিযোগিতা। বৌদ্ধমতে ধর্ম কখনো আড়ম্বরে ও আচার অনুষ্ঠানে বড় হতে পারে না, বড় হয় তার মানবিক আবেদন ও কার্যকারিতায়। প্রকৃত ধর্মের মর্যাদা সেখানেই। ধর্ম কনো আলাদা জীবন সত্ত্বা নয়। ধর্ম হলো কতকগুলো নীতিগুচ্ছ ও আদর্শনিষ্ঠ মানবিক আচার-আচরণ যেখানে জীবজগত ও বিশ্বের মানব সমাজকে সর্বাঙ্গীনভাবে উপকৃত করে।
ধর্মের মধ্যে রাজা বিত্তবানদের যেই স্থান; তেমনি ধনী-নির্ধনদেরও; সেই একই স্থান। ধর্ম ব্যক্তি বিশেষের জন্য স্বতন্ত্র নয়। ধর্ম কোনরকম বৈষম্যও সৃষ্টি করে না। ধর্মের গ্রহণ-বর্জন এবং ধর্মের আবেদন সকলের জন্যেই সমান। এমনকি ধর্মের অধিকারও সকলের জন্যে সমান। ধর্ম জাত-পাত চেনবে না, জাত-পাত বিচারও করবে না। ধর্ম নারী পুরুষ বিভাজন করে না। ধর্ম কোন সম্প্রদায় বা সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে আবদ্ধ হতে চায় না। সূর্য যেমন সকলের জন্যে সমান, তেমনি ধর্মও। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়, বিশুদ্ধ বায়ু সেবন যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে হিতকর, তেমনি সদ্ধর্মও সকলের জন্যে মঙ্গলপ্রদ। অন্যদিকে মহামারী এইডস যেমন কোন বর্ণ, ধর্ম, বিচার করে না; তেমনি ধর্মও জাত-পাত বিচার করে না। সুতরাং ধর্ম হিন্দু-মুসলিন, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে কোন বিচার্য বিষয় নয়। ধর্মের স্বভাব ধর্মই। ধর্ম নিজ আভায় এবং সর্বজনীন বাণীতে উদ্ভাসিত।
বৌদ্ধমতে ‘ধর্ম’ হলো সুনীতি-আদর্শ এবং মানবিক মূল্যবোধের জীবনাচরণ। ধর্ম হলো বিশুদ্ধ এক জীবনপদ্ধতি। মানুষ যদি জীবনাচরণে, কর্মে ও চিন্তায় এবং জ্ঞান ও মননশীলতায় বড় না হয় তাহলে সে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে না। এজন্যেই বৌদ্ধধর্মে শীলাচার জীবন এবং সুনৈতিকতার কথা বার বার বলা হয়েছে। ব্যক্তি তাঁর শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা ভাবনার মাধ্যমেই একটি উন্নত এবং উৎকৃষ্ট জীবন তৈরি করতে পারে। বৌদ্ধধর্ম শুধু মাত্র অধ্যাত্ম সাধনার জন্যে মুক্তি বা নির্বাণ লাভের কথা বলেনি, বরংচ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মন্দ বা অসৎ প্রবণতার মুক্তি এবং জীবনের সকল কার্যকলাপে সৎ, নির্লোভ, নির্মোহ চরিত্র এবং বিত্ত-বৈভব তৃষ্ণাবিমুক্ত নির্বাণ লাভের কথা বলেছে। ব্যক্তি মনের নানা রকম কুমানসিকতা, হিংসা, বিদ্বেষ, জিঘাংসা, বৈরিতা ব্যক্তির চিত্তকে মলিন করে ফেলে। এ মলিন চিত্তে কখনও দান, সেবা, ও পরোপকারিতার মত সদগুণ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা ও ব্যক্তির সৎ মানসিকতা উৎপন্ন হতে পারে না। এছাড়াও মহামতি গৌতম বুদ্ধ শুধুমাত্র জীবনের অনিত্যতা, জীবনের দুঃখ-দুর্দশা এবং পারমার্থিব জীবন দর্শন নিয়ে ভাবেননি; তিনি ভেবেছিলেন ব্যক্তিগত, সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবন দর্শন নিয়ে যা আমাদের প্রতিটি মানুষের জন্যে প্রয়োজনীয়, যা সকল মানুষের জন্যে সর্বাঙ্গীন মঙ্গলজনক হয় এবং যা ইহজাগতিক মানবতার সামগ্রিক কল্যাণকর হয় সেসব বিষয় নিয়ে। এজন্যেই তাঁর নব ধর্ম প্রচারের প্রথম বাণীতেই তিনি পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন “বহু জনের হিত ও সুখের জন্যে এবং সামগ্রিক কল্যাণের জন্যেই সর্বজনীন অহিংস, শান্তি ও সাম্যের বাণী প্রচার করতে এবং ধর্মের মানবিক গুণাবলীকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিতে”।
অতএব এ পরিপ্রেক্ষিতে বৌদ্ধধর্মকে সামগ্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত কতকগুলো অর্থবহ শব্দসমষ্টি অথবা ধর্মবৈশিষ্ট্য দিয়ে বিচার করতে হবে। এ কারণেই বৌদ্ধধর্ম হলো কতগুলো নীতিগুচ্ছ কিংবা নিয়ম-নীতি যা প্রত্যেক মানুষেরই অনুসরণ করা উচিত। যেমন বৌদ্ধ পঞ্চশীলে বলা হয়েছে কোনরকম হত্যা বা বধ না করা, কাউকে আঘাত না করা, হিংসা না করা, চুরি বা চৌর্যবৃত্তি না করা। এছাড়াও অবৈধ ব্যাভিচার বা অবৈধ যৌনাচার না করা, মিথ্যা কথা না বলা এবং কোন প্রকার মাদক বা নেশা দ্রব্য সেবন না করা এবং এ সকল কাজে কাউকে কোন রকম উৎসাহিত না করা। এছাড়া ঘুষ, উৎকোচ, যৌন নিপীড়ন, দুর্নীতিসহ নানা ধরণের সামাজিক অত্যাচার অনাচারকেও বৌদ্ধধর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আমরা বিবেকবোধসম্পন্ন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। আমরা যদি নীতিকে অনুসরণ না করি তাহলে এ সুনীতিগুলো অনুসরণ করবে কে বা কারা ? এজন্যেই মানুষ হিসেবে এ নিয়ম নীতিসমূহ পালন করা আমাদের কর্তব্যতো বটেই, বরংচ এ নীতি ও কর্ম সম্পর্কে অবশ্যই আমাদেরকে ভাবতে হবে। তাই বৌদ্ধধর্ম সদা সত্যনিবিষ্ট, সত্যানুরাগ এবং পন্ডিত বিজ্ঞজনোচিত দৃষ্টি ও সতত সুকর্ম সম্পাদনকেই বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়েছে। এ কারণেই বলা হয়েছে বিনয় বা চারিত্রিক বিশুদ্ধতা এবং কার্যকারিতার কথা। আত্ম-দর্শন ও আত্মোপলব্ধির কথা এবং সার্বক্ষণিক মৈত্রী, করুণা, মুদিতা, উপেক্ষা প্রভৃতি বৌদ্ধ ব্রহ্মবিহার ভাবনার কথা।
মহামতি বুদ্ধ সদাচার সম্পন্ন জীবনকে সর্বাঙ্গসুন্দর আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক জীবনগঠনের সহায়ক বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। এ কারণে বিশ্বের সকল চিন্তাবিদ, জ্ঞানী, পন্ডিত এবং মানবতাবাদী দার্শনিকেরা বুদ্ধের এই শাশ্বত বাণীকে সমর্থন দিয়েছেন।পাশ্চাত্যের মধ্যযুগীয় বিখ্যাত পরিব্রাজক জন দ্রিক তিনিও বুদ্ধের মত সেই কথাই ব্যক্ত করেছিলেন একদিন। তিনিও বলেছেন, আমরা ধর্মকে কখনও জীবন বা সমাজচেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে পারি না। মানুষের জন্যেই ধর্ম। ধর্মের প্রয়োজন ব্যক্তির জীবনে; পারিবারিক, সমাজিক ও রাষ্ট্রীয়জীবনে। মানুষের জীবনের সকল অবস্থায় ধর্মীয় নীতিবোধ ও মানবিক মূল্যবোধের অনিবার্যতা রয়েছে।
সামাজিক জীবনে মানুষের অনেক ধরণের চাহিদা থাকতে পারে। যেমন- ক্ষুধা, দারিদ্র্যতাও আছেই, তারমধ্যে বিত্ত-বৈভব ও সম্পদ অর্জনের নানাবিধ দুর্বার চিন্তা এবং নানা ভাবনাগুলো আমাদের চিত্তকে প্রতিমুহূর্তে ব্যাকুল করে তুলছে। আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে মিথ্যা ও বিপথগামিতার দিকে। অতএব এগুলো জানার পরও কেন আমরা চৌর্যবৃৃত্তি, দুর্নীতি বা অসদোপায় অবলম্বন করছি সে টাকি আমরা একবারও ভেবেছি? এজন্যেইতো সমাজ ও রাষ্ট্রের অরাজকতা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বেড়ে যায়। সমাজ ও দেশ হয়ে যায় অশান্ত ও অস্থিতিশীল। সুতরাং আমাদের এ নীতিবোধে বিশ্বাসী হয়ে সকল প্রকার জ্ঞান-সম্প্রযুক্ত সুকর্ম সম্পাদন করতে হবে, যেখানে কোন ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনরকম ক্ষতি না হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রে উন্নতি-সমৃদ্ধি যেন ব্যাহত না হয়। প্রকৃতপক্ষে ধর্মের গৌরব ও মর্যাদা সেখানেই। চলুন আমরা মহামতি বুদ্ধের সেই অহিংস, সাম্য ও মানবতাবাদী শিক্ষায় উজ্জীবিত হই।