আনন্দঘন পরিবেশে চৌগাছার মিঞা বাড়ি ও জননীর স্মৃতি
মোজাফফার বাবু
ছবি: স্বরূপদা মিয়া বাড়ি
যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলা অবস্থিত স্বরূপদা মিয়া বাড়ি। চতুর্দিকের গ্রামগুলি বাঘার দাড়ি, বেলে মাঠ, কদম তলি, জিয়েল গাড়ী ও মাধবপুর। গ্রামের সামনে আছে মাশলে বর্ডার। দেশ বিভক্তির আগে মানুষে মানুষে ছিল নিবিড় বন্ধন! এখন কাঁটাতার আর কাটাতারের বেড়া!
স্বরূপদা গ্রামতো নয়, রূপে অপরূপ সবুজে ঘেরা নান্দনিক প্রকৃতি?
বিভিন্ন প্রজাপতির পাখপাখালি অবাধ বিচরণ! এই অভয় অরন্যে নিরাপদ স্থান! বিশেষ করে শীত মৌসুমে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এদের আগমন! শান্ত প্রকৃতির আমজনতার তাদের প্রতি ভালোবাসার কমতি নাই।
স্বরূপদা মিঞা বাড়ি বিশাল আয়তনের প্রায় সত্তর বিঘা ওপর, আগেকার জমিদার বাড়ির মতো তার অবয়ব। কড়াই, বর্গাকাঠ, চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত আলিশান নান্দনিক বাড়ি।
মিঞা বাড়ির সামনে উত্তর দিকে বিশাল আয়তনের দিঘি যেখানে সাধারণত পুরুষ লোক গোসল করে। দক্ষিণে কানাপুকুর যেখানে বয়স্ক মহিলারা গোসল করে আর বাড়ির মাঝখানে ঘেরা অল্প বয়সী শিশুদের গোসলখানা রয়েছে।
বাড়ির সামনে নান্দনিক বিশাল বৈঠকখানা, তার এক পাশে ছিল পোস্ট অফিস এখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে চিঠিপত্র মানি অডার, টেলিগাম ডাকহরকরা বিলি করতো। তথ্য উপাত্ত আরোও পাওয়া যায়, আশে পাশের সাতাশ গ্রামের বিচার- আচার ও প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধা অসুবিধা খোঁজ খবর নিত! স্বরূপদা মিঞা বাড়ির প্রিয়জনরা।
আশেপাশের গ্রামের মানুষজন পরম্পরা ভাবে মিঞা বাড়ির লোকজনকে খুব ভালবাসতেন ও পছন্দ করত।বিশাল বৈঠকখানার তার সামনে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ছাতা বন্ধ করা সাইকেল থেকে নেমে যাওয়া। প্রথম ফল মিঞাদের জন্য পাঠানো সহ নানা কিছু তারা করে থাকত।
সম্মান করার কারণ, অন্যান্য অঞ্চলের মতো ইংরেজ, জমিদার, লাঠিয়ালদের মত শোষণ নির্যাতন জমি দখল অবিচার অনাচার করতো না অথবা হীরক রাজার চলচিত্রের মতো ব্যবহার ও ছিল না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ভালোবাসতেন। সব সম্প্রদায়ের লোক শান্তিতে বসবাস করতো।
সাধারণ কৃষকদের সাথে এদের খুবই সুখময় স্মৃতি ছিল কৃষকদের বিপদে-আপদে অর্থ কড়ি দিয়ে সাহায্য করতো। রাস্তাঘাট স্কুল-কলেজ নির্মাণে এদের উপস্থিতি সরব ছিল।
এই গ্রামে আবির্ভাব হয়েছিল বিনয়ী মোশারেফা খাতুন শেফালী তিনি ছিলেন বংশের বড় মেয়ে। তার আবির্ভাবের সময় তার পিতামহ তাকে লালন পালনের জন্য অন্য জেলা থেকে জনবল নিয়ে এসেছিলো যেটা চলমান ছিল আগেকার জমিদার আমলের।
প্রতাপশালী পরিবারের মানুষ হয়েও শেফলী খাতুন তার সাংসারিক ও রাজনৈতিক জীবনে বহু জেলায় ঘুরেছেন ঢাকা, সুনামগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা-যশোর, সাধারণত প্রান্তিক মানুষের পাশে ছিলেন।
তার শ্রদ্ধেয় বাবার নাম ছিল শামসুরজোহা বিশ্বাস, শ্রদ্ধেয় চাচার নাম নুরুল হুদা বিশ্বাস তারা চার বোন এক ভাই ছিলেন। মোশারেফা খাতুন শেফালী, লতিফা খাতুন শিউলি, মারুফা খানম লিলি, শরীফা খাতুন চামেলি ও ভাই মোঃ শামসুল আলম।
স্বরুপদার ঐতিহ্যবাহি বাড়িটি দূরদুরান্ত থেকে বহু লোকজন দেখতে আসে। বিটিভি সহ বিভিন্ন চ্যানেলে এর প্রদর্শনী হয়েছে।
এ বার যশোরে ছেলেবেলার বন্ধুদের আমন্ত্রণে যশোরে চড়ুইভাতির জন্য আগমন যশোরের “শ্যামল ছায়া”। সেখান থেকে প্রয়াত মায়ের স্মরণে সেই মিয়া বাড়ির উদ্দেশ্যে পরিবারের সহিত গিয়েছিলাম।
সরুপদা গ্রামের বালকবেলার বন্ধু ও পরম প্রিয়জনের সাথে সুখময় ও সুন্দর সময় কাটানোর ফাঁকে ফাঁকে মাহীন মোজাফফার ক্যামেরাবন্দি করে মিয়া বাড়ির কিছু দৃশ্য। মিঞা বাড়িটি এখনো জ্বলজ্বল করছে মানবতার প্রতীক হয়ে।
দৈনিক অন্যধারা / ০৫ জুলাই ২০২২ / জ কা তা