উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইন ও রীতিনীতি

বিশেষ প্রতিনিধি:
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পায়:
বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) আজ থেকে ১৪শত বছর আগেই বলে গিয়েছেন, “উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো ও অপরকে শেখাও, সকল জ্ঞানের অর্ধেক হল এই জ্ঞান”। মুসলিম হাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অনেকেরই উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।
কিন্তু এটা প্রত্যেক মুসলিমের জানা প্রয়োজন। মুসলিম আইনে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ওপর ভিত্তি করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়ে থাকে। এভাবে বণ্টন করাকে ফারায়েজ বলা হয়।
এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসাতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে জানা উচিত। এতে কোন মুসলমান পুরুষ বা নারী উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তাঁর ভাগে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন সেই সম্পর্কে জানতে পারবে।
এখানে শুধু আমরা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যার উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অংশ নিয়ে আলোচনা করব।
তবে কোন মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। চলুন আগে জেনে নেই কী সেই সব আনুষ্ঠানিকতা।
১. মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে।
২. তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে।
৩. তাঁর স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে।
৪. মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে।
উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।
এবার জেনে নিই কি অনুপাতে বা কীভাবে এই সম্পত্তি বণ্টন হবে।
১. স্বামীর অংশ : স্বামী ২ ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্বামী কখনো তাঁর মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে।
২. স্ত্রীর অংশ : স্ত্রীও ২ ভাবে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে থাকে। বিধবা স্ত্রী কোন ভাবে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা তাঁদের পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে। যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে তবে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও সবাই মিলে ১/৪ অংশ সমান ভাগেই পাবে।
৩. বাবার অংশ : বাবা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ৩ ভাবে হয়ে থাকে। যদি মৃত সন্তানের পুত্র, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যতই নিচের হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত সন্তানের পিতা পাবেন সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ।
যদি মৃত সন্তানের শুধু মাত্র কন্যা সন্তান বা তাঁর পুত্রের কন্যা সন্তান থাকলে তবে পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন।
এই ক্ষেত্রে কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট যে সম্পত্তি থাকবে তাও পিতা পাবেন। আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র-কন্যা বা পুত্রের সন্তান কিছুই না থাকে তাবে বাকী অংশীদারদের তাঁদের অংশ অনুযায়ী দেয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকবে তার সবটুকুই বাবা পাবেন।
তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান ও বাবা কেউ না থাকলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর জীবিত ভাই বা ভাইরা পাবে। আবার ভাই না থাকলে তাঁর ভাইয়ের সন্তানরা পাবে।
৪. মায়ের অংশ : মা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি পেয়ে ৩ ভাবে পেয়ে থাকে। – মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নেরই হোক থাকলে অথবা যদি মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইবোন থাকলে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।
৫. পুত্র সন্তানের অংশ : মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি পায়। যেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ছেলে বা ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাতাপিতা ও স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরাই পাবে।
৬. কন্যা সন্তানের অংশ : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতাপিতার সম্পত্তি পেতে পারে। একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ বা (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমানভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ বা (২/৩) অংশ পাবে। যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। যাহোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না।
পিতা মারা গেলে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যে সম্পত্তি পেতেন তা তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর উত্তরাধিকারীরা পাবে।
১৯৬১ সালের আগে এই নিয়ম ছিল না। পরে একটি আইন পাস করে এই নিয়ম চালু করা হয়। কারণ এতিমরা যাতে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেই সম্পর্কেও ইসলামে নির্দেশ দেয়া আছে। আবার মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ধরা হয় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকেও বঞ্চিত করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান আর সম্পত্তি পাবে না। সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা বা সৎ মায়ের সম্পত্তি পায় না।
একই ভাবে সৎ বাবা বা সৎ মা, সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তি পায় না। কেউ কাউকে হত্যা করলে হত্যাকারী তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। জীবিত থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারো সম্পত্তি পাবে না। জারজ সন্তান তার মা ও মায়ের আত্নীয়দের থেকে সম্পত্তি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পাবে (মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে)।
মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তা তিনি জীবিতকালে কাউকে না দেয়ার ব্যবস্থা করে গেলে সরকার তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে। উত্তরাধিকার সম্পর্কে উপরোক্ত সাধারণ কয়েকটি বিষয় মনে রাখলে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের জটিলতা দূর হবে।

হিন্দু আইনে মৃতের সম্পত্তির উত্তরাধীকার বিষয়ে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে:
(ক) মিতক্ষরা পদ্ধতি
(খ) দায়ভাগ পদ্ধতি।
বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দু ধর্মীয় লোকজন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। দায়ভাগ মূলত জীমূতবাহন রচিত হিন্দু ধর্মীয় সম্পত্তির উত্তরাধীকার বিষয়ক আইন গ্রন্থ। এ আইনগ্রন্থ অনুযায়ী, যারা মৃত ব্যক্তির আত্মার কল্যানের জন্য পিণ্ডদানের অধিকারী, কেবলমাত্র তারাই মৃত ব্যক্তির সপিণ্ড এবং যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পেয়ে থাকেন। মিতক্ষরা পদ্ধতি অনুসারে জন্ম হওয়ামাত্রই যেমন একজন পুত্র সন্তান পূর্ব পুরুষের সম্পত্তিতে পিতার সমান অংশীদারী হন, দায়ভাগ আইনে তেমনটা হয় না।
নিম্নে মোট ৫৩ জন সপিন্ডগণের তালিকা ক্রমানুসারে দেওয়া হলঃ
১। পুত্র
২। পুত্রের পুত্র
৩। পুত্রের পুত্রের পুত্র
৪। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী।
৫। কন্যা
৬। কন্যার পুত্র
৭। পিতা
৮। মাতা
৯। ভাই, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই।
১০। ভাই এর পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্র
১১। ভাই এর পুত্রের পুত্র, সহোদর ভাই না থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই এর পুত্রের পুত্র।
১২। বোনের পুত্র
১৩। পিতার পিতা
১৪। পিতার মাতা
১৫। পিতার ভাই
১৬। পিতার ভাইয়ের পুত্র
১৭। পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
১৮। পিতার বোনের পুত্র
১৯। পিতার পিতার পিতা
২০। পিতার পিতার মাতা
২১। পিতার পিতার ভাই
২২। পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র
২৩। পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
২৪। পিতার পিসির পুত্র
২৫। পুত্রের কন্যার পুত্র
২৬। পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র
২৭। ভাইয়ের কন্যার পুত্র
২৮। ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র
২৯। খুড়ার কন্যার পুত্র
৩০। খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র
৩১। পিতার খুড়ার কন্যার পুত্র
৩২। পিতার খুড়ার পুত্রের কন্যার পুত্র
৩৩। মাতার পিতা (নানা)
৩৪। মাতার ভাই (মামা)
৩৫। মাতার ভাইয়ের পুত্র (মামার পুত্র)
৩৬। মাতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র (মামার পুত্রের পুত্র)
৩৭। মাতার বোনের পুত্র (মাসির পুত্র)
৩৮। মাতার পিতার পিতা
৩৯। মাতার পিতার ভাই
৪০। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্র
৪১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
৪২। মাতার পিতার বোনের পুত্রের পুত্র
৪৩। মাতার পিতার পিতার পিতা
৪৪। মাতার পিতার পিতার ভাই।
৪৫। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্র
৪৬। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের পুত্র
৪৭। মাতার পিতার পিতার বোনের পুত্র
৪৮। মাতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র
৪৯। মাতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫০। মাতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র
৫১। মাতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫২। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের কন্যার পুত্র
৫৩। মাতার পিতার পিতার ভাইয়ের পুত্রের কন্যার পুত্র

মোট ৫৩টি শ্রেণির সপিণ্ডের মধ্যে মহিলা শ্রেণী ৫ টি।
১। স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রী (তালিকায় যার স্থান ৪র্থ)।
২। কন্যা (তালিকায় যার স্থান ৫ম)।
৩। মাতা (তালিকায় যার স্থান ৮ম)।
৪। পিতার মাতা (তালিকায় যার স্থান ১৪ তম)।
৫। পিতার পিতার মাতা ( তালিকায় যার স্থান ২০ তম)।
এই ৫ শ্রেণীর মহিলা কোন সম্পত্তি পেলেও সীমিত কিছু শর্ত (যেমন- মৃতের দাহ ও শ্রাদ্ধ, মৃতের কৃত ঋণ পরিশোধ, নাবালক সন্তানের ভরণ-পোষণ, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যয় পরিচালনা; দূরবর্তী সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ অসম্ভব হলে, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিবাহের খরচ পরিচালনা ইত্যাদি) ছাড়া তা হস্তান্তর করতে পারে না। তারা মুলত জীবনস্বত্ব ভোগ করতে পারে (যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন প্রাপ্ত সম্পত্তির দখল ভোগ করবেন)। তাদের মৃত্যুর পর সম্পত্তি পূর্ব মূল মালিকের কাছে ফিরে যাবে, যা পূর্ব মূল মালিকের নিকটস্থ সপিন্ড পাবেন। কোন পুরুষ উত্তরাধিকারী সম্পত্তি না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে সম্পত্তি বারবার মৃত মূল মালিকের কাছে ফিরে যাবে। দায়ভাগ আইনে স্বামীর মৃত্যুর পর নাবালক সন্তানের লালন-পালনের জন্য স্ত্রী নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক নিযুক্ত হন এবং নাবালকের স্বার্থে সীমিত বিশেষ কারণে নাবালকের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন।
১ থেকে ৪ নম্বর ক্রমিক পর্যন্ত কেউ জীবিত না থাকলে (৫ নম্বর ক্রমিকের) কন্যা সম্পত্তি পাবে। কন্যাদের মধ্যে কুমারী কন্যার দাবী অগ্রগণ্য, এরপর পুত্রবতী বা পুত্র সম্ভবা কন্যাদের দাবী। কন্যা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেলে তার মৃত্যুতে তার পুত্র সন্তান সম্পত্তি পাবে।
মৃত ব্যক্তির স্ত্রী না থাকলে, এক বা একাধিক পুত্র থাকলে পুত্রই সমুদয় সম্পত্তি পাবেন। এ আইনের বিধান অনুসারে, নিকটবর্তী পুরুষ ওয়ারিশ থাকলে পরবর্তীরা সম্পত্তি পাবেন না, যেমন পুত্র থাকলে পুত্রের-পুত্র সম্পত্তি পাবেন না।
মৃত ব্যক্তির একই সাথে পুত্র ও স্ত্রী জীবিত থাকলে, মৃতের বিধবা স্ত্রী এক পুত্রের সমান অংশ পাবে। একাধিক স্ত্রী থাকলে স্ত্রীর অংশ বিধবা স্ত্রীদের মধ্যে তুলাংশে বন্টন হবে। মৃতের স্ত্রী যেরূপ অংশ পাবেন, জীবিত থাকলে পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী কিংবা পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীও অনুরূপ অংশ পাবেন।
দায়ভাগ আইনে মৃত ব্যক্তির জীবিত উত্তরাধীকারীগণের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের সময় যদি কোন উত্তরাধীকারী মৃত থাকেন, তবে মৃত ব্যক্তির জীবিত ওয়ারিশগণ সম্পত্তির উত্তরাধীকারী হবেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর মৃতের জীবিত স্ত্রী মৃতের সম্পত্তিতে জীবনস্বত্ব (Life Interest) ভোগ করেন (যতদিন বেঁচে থাকবেন, মৃতের সম্পত্তির দখল ভোগ করবেন)। তার মৃত্যুর পর তার ভোগ-দখলকৃত সম্পত্তি পুত্রগণ প্রাপ্ত হবেন। পুত্র জীবিত না থাকলে সম্পত্তি মূল মালিকের নিকট ফিরে যাবে।
স্বামীর মৃত্যুর পর কোন হিন্দু মহিলা দ্বিতীয় বিবাহ করলে তিনি মৃত স্বামীর সম্পত্তি পাবেন না অর্থাৎ কোন হিন্দু-বিধবা মহিলা পুনরায় বিবাহ করলে তাকে তার পূর্বের স্বামীর নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তি মৃত স্বামীর জীবিত অন্যান্য ওয়ারিশের নিকট ছেড়ে দিতে হয়।
একমাত্র হিন্দু ধর্মে দত্তক পুত্র গ্রহনের বিধান আছে। পিন্ডদানকারী পুত্র, পুত্রের পুত্র (পৌত্র বা নাতি) কিংবা পুত্রের পুত্রের পুত্র (প্রপৌত্র বা পুতি) না থাকলে পিন্ডদানের জন্য কিংবা সামাজিক কারণে নিজ বংশের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য ৯ (নয়) বছরের উর্ধে নয় এমন পুত্র সন্তানকে দত্তক নেয়া যায়। দত্তকগ্রহনকারীর মৃত্যুর পর মৃতের দত্তক পুত্র মৃতের ঔরসজাত পুত্রের (১/৩) তিন ভাগের এক ভাগ সম্পত্তি পাবেন।
হিন্দু দায়ভাগ আইনে কোন সন্ন্যাসী ব্যক্তি উত্তরাধিকার হন না। এ আইনে সন্ন্যাসী ব্যক্তিকে মৃত ধরা হয় এবং তিনি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন।
মৃত ব্যক্তির অন্ধ, বধির, মূক, অঙ্গহীন, পুরুষত্বহীন বা হাবাগোবা, পুরুষ ও মহিলা ওয়ারিশ থাকলে হিন্দু আইনে এমন ব্যক্তিগণ উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবেন। আইনের দৃষ্টিতে এমন ব্যক্তিগণকে মৃত হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সন্তানগণ পিতামহ ও পিতামহীর সম্পদে উত্তরাধিকারী হন।
হিন্দু উত্তরাধীকার আইনে অসতী বিধবা স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধীকার হতে বঞ্চিত হন। তবে মৃতের বিধবা স্ত্রী আইন সঙ্গতভাবে সম্পত্তি পাওয়ার পর অসতী হলে প্রাপ্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবেন না। অসতীত্বের কারনে কন্যা তার মৃত পিতার সম্পত্তির উত্তরাধীকার হতে এবং মাতা তার মৃত পূত্রের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হন। তবে অসতীত্বের কারনে কোন নারী, মৃত কোন স্ত্রী-লোকের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবেন না।
কোন হিন্দু লোক ধর্মান্তরিত হলে এ আইন অনুসারে তিনি উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবেন। মৃতের হত্যাকারী এবং তার ওয়ারিশগণ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হবেন।

 

অন্যধারা/ ২৬ আগস্ট, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here