খোজা পুরুষ
সৈয়দ রনো
নামি-দামী একটি ঔষুধ কোম্পানীতে চাকরি করে সালমান। চলতি মাসে তার টার্গেট ফিলাপ হয়নি। আর মাত্র পাঁচদিন বাকি, টার্গেট ফিলাপ করতে না পারলে এ মাসের বেতন বন্ধ। বাড়ি ভাড়া, দোকান বাকি, নতুন মাসের বাজার সদাই, হাত খরচ ইত্যাদি কীভাবে চলবে এরূপ নানা দুঃশ্চিন্তা তাকে পেয়ে বসেছে। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার সাহেবেরা বদলি হওযায় এ মাসে বিপত্তি ঘটেছে।
এসেছে নতুন ডাক্তার, যারা ভিজিটরদের পাত্তাই দিতে চায় না। বলে রাখা ভালো, মার্কেটিং এ যারা কাজ করে তারা স্মার্ট, সুশ্রী, হ্যান্ডসাম এবং বাকপটু হয়ে থাকে। সকল গুণাবলীর একচুলও ঘাটতি নেই সালমানের বেলায়। বেশ কয়েকদিন চেষ্টার পর সোজা ঢুকে পড়ে ডাক্তার ডায়নার কক্ষে। তারুণ্যে উদীপ্ত নারী। দেহের গড়ন হালকা-পাতলা। ছিমছাম বডি। নাকটা কামরাঙ্গার সীরের মতো তীক্ষ্ম। উজ্জ্বল ফর্সা। মাথার চুল তো নয় যেনো একরাশ ঘন কালো মেঘ। সারাশরীরে একটুও মেদ নেই। এক কথায় অপরূপ রূপের বাহার। ডাক্তার টেবিলে ঝুকে মনোযোগ সহকারে কী যেনো লিখছেন। সালমান বুঝে উঠতে পারছে না, দাড়িয়ে থাকবে নাকি বসে পড়বে। ডাক্তারও দেখে না দেখার ভান করে বসে আছেন। অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর সামনের চেয়ারে বসে সালমান। এতক্ষণে ডাক্তার খানিকটা নড়ে চড়ে বসে, দরাজ কন্ঠে বললেন- অনুমতি ছাড়াই রুমের ভেতর ঢুকে আয়েস করে বসে পড়লেন? আপনার পরিচয়?
-জ্বি ম্যাডাম আমি একটি ঔষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভ।
-হুম, আপনাদের অত্যাচারে ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দিতে হবে। রোগীর লাগবে এক কোম্পানীর ঔষুধ আর আপনাদের তদবীরে লিখতে হবে আপনাদের কোম্পানীর ঔষুধ। আপনারা কী জানেন না, সবমানুষের পাকস্থলীতে সব ঔষুধ কাজ করে না। এই সহজ বিষয়টি আপনারা কেন বুঝতে পারেন না? আমরা ইচ্ছা করলেই পেশাদারিত্বের খাতিরে সব রোগীর জন্য সব কোম্পানীর ঔষুধ লিখতে পারি না। সব কোম্পানীর একই ঔষুধ সব রোগীর পাকস্থলিতে এ্যাডজাস্ট করতে পারে না।
একদমে হীত উপদেশ দিলেন ডাক্তার ডায়না। কিছুটা ঝাঁঝালো কন্ঠ ছিলো তার বক্তব্যের মধ্যে।
-এবার আপনি আসতে পারেন বলে ডায়না চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায়। মাথা নিচু করে সালমানও দাড়ায়। মাঘি-পূর্ণিমার মতো কালো হয়ে যায় তার মুখমন্ডল। অনেক আশা নিয়ে ঢুকেছিলো সে। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কিছু একটা বলতে গিয়ে আবার থেমে যায়। মুখের আকৃতি পুরো বদলে গেছে তার । মুখ যে মনের কথা বলে, তা এই মুহূর্তের সালমানকে দেখেই বুঝা যায়। কাজের চিন্তা মাথায় এসে ভর করেছে তার। কীভাবে এখন কি করবে তাও বুঝে উঠতে পারছে না। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ায়। দরজার লক ধরে টান দেয়ার শক্তিও যেনো হারিয়ে ফেলেছে সে। থর থর করে হাত দুটো কাঁপছে অবিরাম। ডাক্তার ডায়না সবকিছু দেখে এবং বোঝার চেষ্টা করে। তার মনের জমিনে করুনার উদ্রেগ হয়। হঠাৎ ডাক্তারের চোখ পড়ে সালমানের কপালের উপর।
মৃদু কন্ঠে ডাক্তার ডাকেন- শুনুন। সালমান পিছু ফিরে তাকায়।
বসুন বলতেই তন্দ্রাচ্ছন্ন রোবটের মতো এসে পুনরায় চেয়ারে বসে সালমান।
-বলেন তো আপনার সম্যাসা কী? কোম্পানীর ঔষুধ বিক্রি না হলে কোম্পানীর সমস্যা, তাতে আপনার কী? আপনার ডাক্তার ভিজিট করা প্রয়োজন করছেন।
এতোক্ষণে চোখে মুখে কৃত্রিম হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে সালমান বলে-
ম্যাডাম কোম্পানী আমাদের মাসে একটি টার্গেট দেয়, যা ফিলাপ করতে না পারলে সেলারি নিয়ে সমস্যা হয়। এ মাসে আমার টার্গেট ফিলাপ হয়নি, তাই এতো দুশ্চিন্তা। হয়তো এ মাসের বেতনটা পাবো না। ঘরভাড়া, দোকান বাকি,পকেট খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি বলতেই মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ডাক্তার বললেন-
– বুঝেছি, বাসায় কে কে আছে আপনার?
– কেউ নেই ম্যাডাম। আমি একা।
– আপনার স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা এরা কী গ্রামের বাড়ি থাকেন?
– না। ম্যাডাম। আমি বিয়ে করিনি আর বাবা-মাও এ পৃথিবীতে নেই।
– একা মানুষ, তার আবার এতো চিন্তা? বয়স তো কম হয়নি বিয়ে করেননি কেন ?
কোন উওর দেয়না সালমান। শুধু মাথা নিচু করে বসে থাকে। ডাক্তার বলেন
– ঠিক আছে, আপনাদের কোম্পানীর একটি ঔষুধের প্রসপ্রেক্টাস দিন আর ভিজিটিং কার্ডটি রেখে যান। আপনার মাসিক টার্গেট ফিলাপ হতে কতো বাকি?
– বিশ হাজার টাকা।
-বাহিরে দাড়ান, রোগিদের প্রেসক্রিপশনের ফটো কপি নিয়ে যাবেন। প্রতিদিন আসবেন, আমি ফ্রি থাকলে রুমে ঢুকে দেখা করে যাবেন। ওকে?
-ওকে বলে মনের খুশিতে বাইরে বেরিয়ে আসে সালমান। আনন্দে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে ঘষা মারে। ফুরফুরা মেজাজ নিয়ে ক্যান্টিনে যায়। রুটি আর ডালভাজি সাথে এককাপ চা পান করে দ্রুত বেরিয়ে আসে। ডায়না ম্যাডামের রুমের সামনে দাড়াতেই একজন মধ্যবয়সী রোগী বেরিয়ে আসে। হাতে প্রেসক্রিপশন, প্রেসক্রিপশনটা হাত থেকে ছো মেরে নিতেই দেখে সেখানে তাদের কোম্পানির তিনটা ঔষুধ লিখেছে। পকেটে থাকা এনডোয়েট ফোন দিয়ে ছবি তোলে। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে এভাবে বেশকয়েকটি প্রেসক্রিপশনে সালমানদের কোম্পানীর ঔষুধ লিখেছে ডাঃ ডায়না। একের পর এক সবগুলোর ছবি তোলে সে। একদিনেই তার টার্গেট ফিলাপ। বাহিরে দাড়িয়ে সালমান ভাবে এখনো এই নশ্বর পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে? এখনো মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। এখনো বেঁচে থাকার আশা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ম্যাডামের সাথে আর একবার দেখা করার জন্য ভেতরটা হু হু করে কেঁদে ওঠে। পরক্ষণেই মনকে বোঝায়; না, এটা ঠিক হবে না, এরা ব্যস্ত মানুষ, খেয়ালি মানুষ, বড় মানুষ, কাজেই হীতে বিপরীত হতে পারে।
ভানুদেবীর ঘুম ভাঙ্গার আগেই ঘুম ভাঙ্গলো সালমানের। ইতোপূর্বে এ রকম ঘটনা তেমন একটা ঘটেনি। ক্ষিপ্ততার সাথে ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা সেরে ব্রিফকেস হাতে বেরিয়ে আসে রাস্তায়। রাস্তা ধরে আনমনে হাটছে। মানিব্যাগের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। রিক্সা ডেকে ওঠার ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখে। পাবলিক গাড়িতে ওঠা সালমানের একেবারেই অপছন্দ। অফিস টাইমে ঠেলাঠেলি গুতোগুতিতে মোটেই অভ্যস্ত নয় সে। বেশকিছু সময় হাঁটার পর সে হাসপাতালের গেটে এসে উপস্থিত। ব্রিফকেস হতে পারফিউমটা ঘর্মাক্ত শরীরে মাখিয়ে নেয়। ডাক্তার এখনো আসেনি। অগত্যা অপেক্ষমান আসনে বসে প্রতীক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই সালমানের। বেশিক্ষণ অপেক্ষার বিড়ম্বনা পোহাতে হলো না। ডাক্তার ম্যাডাম এসে উপস্থিত। রুমে ঢুকছেন। সালমানও দাড়িয়ে গেলো সিট থেকে। ডাক্তার ঘাড়টা হালকা ঘুড়িয়ে হয়তো আড় চোখে একবার দেখে নিলেন সালমানকে। তর তর করে ভেতরে ঢুকে গেলেন। রোগীর লম্বা লাইন। সালমানের মনে হলো বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই রোগী। এমনি মনে হয় হাসপাতালে গেলে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে মনে হয় সবাই শ্রেণি বৈষম্যহীনভাবে পড়ালেখার জন্য শিক্ষার্থী হিসেবে নাম লিখিয়েছে। আদালত পাড়ায় গেলে মনে হবে সবাই মামলার আসামি।
একজনের পর একজন রোগী বেরুচ্ছেন, প্রত্যেকটি প্রেসক্রিপশনেই সালমানদের কোম্পানীর কম বেশি ঔষুধ লেখা আছে। ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত সে। ডাক্তার ম্যাডামের প্রতি কৃতজ্ঞতার মাত্রা ক্রমাম্বয়ে বেড়েই চলেছে। রোগীর ভীড় একটু কমতেই সালমান সিরিয়ালম্যানের নিকট তার ভিজিটিং কার্ডটি দিয়ে অধির আগ্রহে দাঁড়িয়ে থাকলো। এই বুঝি ম্যাডাম ডেকে নিয়ে দু’একটি আদর্শিক কথা শুনাবেন। না, সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ভেতর থেকে কোন ডাক এলো না। পুনরায় আর একটি কার্ড সিরিয়ালম্যানকে দিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝিয়ে বললেন- আমি একটু ডাক্তার ম্যাডামের সাথে দেখা করতে চাই। সিরিয়ালম্যান কক্ষের ভেতর থেকে ফেরত এসে বললো- আজ কারো সাথে দেখা হবে না। আপনাকে সে চিনতে পারছে না, পারলে 4R সাইজের একটি রঙ্গিন ছবি আমার কাছে রেখে যেতে বলেছেন। কী আর করা, উঠিতো পরি পরিতো উঠি করে সালমান দৌড়ে বাহিরে এসে 4R সাইজের একটি রঙ্গিন ছবি তুলে এনে লাইনম্যানের হাতে দিয়ে আবার অপেক্ষা করতে লাগলো। যথারীতি লাইনম্যান বাইরে এসে বললো- আপনাকে চিনতে পারছে না, অতত্রব; দেখা হবে না।
সালমান পুরোপুরি হোঁচট খেলো। সে সুস্থ্য আছে কী না। ডান হাত দিয়ে বাম হাতে চিমটি কাটে। হ্যাঁ, ব্যাথা অনুভব হচ্ছে অতত্রব সে সুস্থ্য। কৌতুহলবশত সদ্য বেরিয়ে আসা রোগীর হাতের প্রেসক্রিপশন দেখলো, হ্যাঁ সেখানেও তাদের কোম্পানির ঔষুধ লেখা আছে।
ততক্ষণে বেলা ৪ টার ঘর ছুই ছুই। গতানুগতিকভাবে দুটো রুটি, ডালভাজি আর চা। মনটা একেবারেই বিষিয়ে উঠলো সালমানের। কোথাও কিছু না কিছু তো একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছেই, ঘাপলাটা কোথায়? ম্যাডাম সকালে যখন রুমে ঢুকে ছিলেন, তখনতো তাকে হাস্যজ্জ্বল এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ট সুন্দরী বলেই মনে হচ্ছিলো। কোন ধরণের দুশ্চিন্তা, রোগ, শোক কোনকিছুই তাকে স্পর্শ করতে পেরেছে বলেতো মনে হচ্ছে না, তা হলে সমস্যাটা কোথায়? আপন মনে ভাবতে ভাবতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সারারাত ঘুমাতে পারেনি সালমান। চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে কেটেছে রাত। রাতভর মাথার মধ্যে ঘুরেছে ডাক্তার ম্যাডাম এমন করলো কেন?
পরের দিন যথারীতি হাজির হলো চেম্বারের সামনে। ঢুকতে দেখলো ম্যাডামকে। হয়তো ম্যাডাম ও সালমানকে দেখেছে চুপিচুপি। সালমানের অন্যমন বলছে হয়তো নাও দেখতে পারে। পূর্বের মতো আবার ভিজিটিং কার্ড নিয়ে হাজির। সিরিয়ালম্যান ভেতর থেকে এসে রাগত কন্ঠে বললো- ডাক্তার ম্যাডাম আপনাকে চেনেন না। আর আপনাকে কার্ড পাঠাতেও নিষেধ করেছে। এরপর যদি দেখা করতে একান্ত ইচ্ছা হয় তাহলে আগামীকাল আপনার বড় একটি ছবি ফ্রেমে বাঁধিয়ে আমার নিকট দিয়ে যেতে বলেছে। আপনাকে নাকি সে চিনতে পারছে না। তার ইদানিং সময়ে চোখের একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবার হোঁচট খেল সালমান। বেশ কয়েকজন রোগীর হাতের প্রেসক্রিপশনের লেখা তাদের কোম্পানীর ঔষুধের নাম। ঔষুধ লেখার কথা ঠিকই মনে রেখেছে কিন্তু আমাকে চিনতে পারছে না বিষয়টি রহস্যজনক। জল্পনা কল্পনা করতে করতে বড় একটি ছবি তুলে রাত ৮টার মধ্যে বাঁধাই করে ফেললো সালমান। নিজের ছবির দিকে তাকিয়ে একবুক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। শান্তনায় বুক বাঁধলো এই ভেবে, বড় লোকদের বিরাট কারবার। তাদের মতিগতি বোঝা দায়।
পরের দিন ছবি নিয়ে হাজির। যথা সময়ে ছবি পিয়নের মাধ্যমে ভেতরে পাঠিয়ে দিলো। কলিং বেল বাজিয়ে সিরিয়ালম্যানকে ভেতরে ডেকে নিলো। খানিকটা আশায় বুক বাঁধলো সালমান। এই বুঝি তাকে ভেতরে ডেকে নিবে ডাক্তার ম্যাডাম, কারণ আজকে প্রত্যেকটি রোগীকে তাদের কোম্পানীর ঔষুধের প্রেসক্রাইভড করেছেন। বলা বাহুল্য সালমান প্রেসক্রাইভড করা সবগুলো কপি মেইল করে হেড অফিসে পাঠিয়ে দেয়। এরপর অপেক্ষার পালা। না, ভালো কোন খবর নিয়ে হাজির হলো না সিরিয়ালম্যান এবং দারোয়ান। চুপিসারে পিয়ন আর সিরিয়ালম্যান সালমানকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললো- আপনিতো নামি-দামী ঔষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। দেখতে শুনতে চেহারাও মাশাআল্লাহ্ নায়কের মতো, অনারগল ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন অর্থাৎ, শিক্ষিত মানুষ। আপনাকে ম্যাডাম তার রুমের সামনে কোনদিন আসতে বারণ করেছে। আমাদের বলেছেন, প্রয়োজনে অপমান করে অপনাকে বের করে দিতে। সে কোন কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভকে একদম সহ্য করতে পারেন না।
সালমান বললো- ঠিক আছে ভাই আমি বুঝেছি, আপনাদের আর বিরক্ত করবো না।
পকেটে টাকা নেই বললেই চলে। টাকার অভাবে দুপুরে দুটো রুটি আর চা কপালে জুটলো না। হঠাৎ মনে পড়লো আজ সেলারি দেয়ার ডেট। উর্ধ্বশ্বাসে হেড অফিসের দিকে ছুটলো। হেড অফিসে পৌঁছা মাত্র বেতনের খামটি হাতে ধরিয়ে সেলারী সিটে স্বাক্ষর নিলেন। সাথে ধরিয়ে দিলেন একটি চিঠি। চিঠি না খুলেই ব্রিফকেচে রেখে দিলো সালমান। শুধুই সেলারির টাকাটা গুনে নিচে নেমে এলো। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। খিদের জ্বালায় পেটের নাড়ি-ভূড়ি পচে যাবার উপক্রম। হোটেলে বসে খাবার অর্ডার দেয়। খাবার সামনে আসলে গো-গ্রাসে গিলতে থাকে সালমান ।
রাতে বাসায় ফিরে পোষাক না খুলেই ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে থাকে। না কোন অবস্থাতেই শরীরের ক্লান্তি কমছে না। অনেক সময় পর বিছানায় উঠে বসে। পরনের কাপড় বদলিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে পরে। অনেক সময় ধরে গোসল করে রাতের পোষাক পরে ব্রিফকেস খুলে হেড অফিসের চিঠি মেলে ধরে চোখের সামনে। অবাক হয় সালমান। এও কি সত্য, ভুল দেখছে না তো সালমান। তার প্রমোশন হয়েছে। মার্কেটিং অফিসার পদ থেকে প্রমোশন পেয়ে অনেক গুলো ধাপ ডিঙ্গিয়ে সালমান হয়েছে মার্কেটিং ইনচার্জ। চিঠিটি দু’তিন বার উলট-পালট করে পড়ে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। বেতন বেড়ে এক লাফে দিগুন হয়েছে।
এতো বড় কোম্পানী। হাজার হাজার লোক এখানে কর্মরত। সবাইকে ডিঙ্গিয়ে এতবড় প্রমোশন ভাবতেই পারছে না সালমান। অতি খুশিতে চোখের জল ঝড়তে থাকে অবিরাম। এমুহুর্তে এ বিষয়ে কারো সাথে কোন শেয়ার করবে এমন কেউ নেই এই ত্রিভ‚বনে। বুক ফেটে প্রবাহমান নদীর মতো বইতে থাকে আর্তনাদের উত্তাল ঢেউ। কাল হতে আর কোনো ডাক্তারের দরজায় গিয়ে ধন্না ধরতে হবে না। আর হয়তো গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চাইবে না। এরকম নানাবিদ চিন্তার সাগরে ভাসতে ভাসতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পরে সালমান।
আজ ঘুম ভাঙ্গতে খানিকটা বিলম্ব হয়েছে সালমানের। দরপড় করে বিছানায় উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকায়। অনেক বেলা হয়ে গেছে। আজকে হাতে অনেক কাজ। তড়িঘড়ি করে রেড়ি হয় সে। এরপর ল্যাপটপে বসে কোম্পানী বরাবর একটি আবেদন লেখে। পেনড্রাইভে আবেদনটি ভরে সোজা নিলক্ষেতে গিয়ে দু’কপি প্রিন্ট করিয়ে নেয়। সাথে যুক্ত করে প্রমোশনের কপি। তারপর রিক্সায় উঠে চলে যায় মার্কেটে, সেখান থেকে জীবনের প্রথম অনেকগুলো গিফ্ট কেনে। এরপর এসে হাজির হয় ডাক্তার ম্যাডামের কক্ষের সামনে। ডাক্তার দেখাবার জন্য একটি টিকেট কিনে লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। আধঘন্টার মধ্যেই সালমান ডঃ ডায়নার কক্ষে রোগী হিসেবে প্রবেশ করে। এক হাতে টিকেট অন্য হাতে ব্রিফকেস এবং অনেক গুলো গিফ্টের বক্স। অন্যান্য রোগীরা যেমন বিনা অনুমতিতেই সামনের চেয়ারে বসে ঠিক তার উল্টো ঘটনা ঘটালো সালমান। মাথা নিচু করে কাচু মাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার ম্যাডাম নিজের টেবিলের দিকে ঝুকে একান্ত মনোযোগ সহকারে কী যেনো লিখছেন। এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনার সিরিয়াল নাম্বার কতো? প্রতি উত্তরে ক্ষীণকণ্ঠে সালমান বললো-৪৫৫।
-ও আচ্ছা বসুন।
ধীরে ধীরে সালমান বিনীতভাবে বসলো। ডাক্তার মাথা না তুলেই বললেন- পূর্বে কাউকে দেখিয়েছিলেন কী-না? সে কাগজপত্রগুলো দিন। সালমান প্রমোশন লেটার আর কম্পোজ করা কোম্পানী বরাবর আবেদন, সিরিয়ালের টিকেট কাঁপা কাঁপা হাতে ডাক্তারের সামনে ঠেলে দিলেন। ডাক্তার সালমানের আবেদন, প্রমোশন লেটার খুটিয়ে খুটিয়ে পড়লেন। মুখ তুলে তাকিয়ে এরপর জিজ্ঞেস করলেন- আপনার হাতের ঐ গিফ্টগুলো কার জন্য কিনেছেন? তাকে দিয়ে আসলেই পারতেন। সালমান বিড় বিড় করে বললো- দেবার জন্যই তো এনেছি। এতো নিচু স্বরের কথা যে, ডাক্তার শুনতে পাবেন সালমান ভাবেনি। ঝাঁঝালো কণ্ঠে ডাক্তার বললো- এটা চেম্বার, দিতে চাইলে, দেন। বলা মাত্র সকল গিফ্ট সালমান টেবিলের উপর নামিয়ে রাখলো। ডাক্তার পুনরায় বললো- আবেদন পত্র এবং প্রমোশনের অর্জিনাল কপি দিন। বিলম্ব না করে তাও হাতে তুলে দিলো। এরপর ডাক্তার বললো- আমার মাথার উপর দিয়ে পিছন দিকের ওয়ালে তাকান। ডাক্তারের মাথার উপর সালমানের ছবি ঝুলছে। বিস্ময়ভাবে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো সালমান। তারপর বললো- আমার টেবিলের দিকে তাকান। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো সালমান।
এরপর ডাক্তার বললেন- ছবির হাট চিনেন।
কোন বাক্য বিনিময় না করে সালমমান বললো- চিনি।
সন্ধ্যা সাত টায় ওখানে আপনার সাথে আমার দেখা হবে ওকে? তার আগে কোনকিছু করা চলবে না। আপনার সাথে অনেক কথা আছে আমার। ওকে?
-ওকে বলে উঠে দাড়ালো সালামন।
ততক্ষণে বাংলার আকাশের সূর্যটা গিলে খেয়েছে গোধুলীর মিসকালো অন্ধকার। কৃতিমত্তার সোডিয়াম বাতির হলুদ বর্ণের আলো আধারিতে ছেয়ে গেছে চারপাশ। কাটায় কাটায় সন্ধ্যা সাতটা। সাদা বর্ণের একটি প্রাইভেট কার এসে থামলো ছবির হাটে। গাড়ির দরজা খুলে নামলো ডাঃ ডায়না। এদিক সেদিক হাটা-হাটি করছে সে। না, কোথাও সালমানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আধঘন্টা পার হয়ে যায় সালমানের খবর নেই। ভাবতে ভাবতে শরীর দিয়ে দর দর করে ঘাম বেরুচ্ছে। হাটতে হাটতে ডায়না একটু সামনের দিকে এগুতেই অন্ধকারের মধ্যে কেউ একজন বসে আছে বলে মনে হলো। ডায়না উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করলো- কে ওখানে?
ক্ষীণকণ্ঠে উত্তর এলো- আমি সালমান।
-তুমি ওখানে কি করছো?
-না মানে তেমন কিছু না। এমনেই বসে আছি
-কখন এসেছো?
-ছয়টা ত্রিশ মিনিটে।
-এদিকে আসো।
সালমান ধীরে ধীরে আলোর দিকে আসে। চেহারায় বিমর্ষতার ছাপ।
-কি হয়েছে সালমান।
-না, তেমন কিছু হয়নি ম্যাডাম। ভালো লাগছিলো না, তাই বসেছিলাম। আপনি যে সত্যি সত্যি আসবেন, আমি ভাবতে পারিনি। আমার অবাক লাগছে আপনি এসেছেন? সবই বড় মানুষদের মেজাজ মর্জি।
-আমি আসবো না যদি ভেবে থাক, তাহলে তুমি কেন এসেছো?
-বাইচাঞ্চ যদি আপনি আসেন, আর আমি যদি না আসি তাহলে আপনার অসম্মান হবে।
-হুম, বুঝেছি। আচ্ছা সত্যি করে বলোতো, কোম্পানিতে তোমার প্রমোশন হবার পরেও তুমি কেন চাকরিটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছ?
-আমি নিজেকে এ পদের যোগ্য বলে মনে করি না। আমার মনে হয়েছে এটা আমার কর্মফল নয়, এটা অনুগ্রহ।
-বুঝলাম। তোমার কপালের বাম অংশে যে কাটা দাগ জ্বল জ্বল করে জ্বলছে ওটা কীভাবে কাটলো?
-ম্যাডাম আপনি আমার শ্রদ্ধার পাত্র। অনেক অনেক সম্মান করি আপনাকে। আপনি অনেক ভালো মানুষ। অল্পতে মানুষকে আপন করে নেন। আপনার এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমাকে মাফ করবেন, বলে সালমান ডুকরে কেঁদে ফেললো।
-শোনো সালমান, পুরুষ মানুষদের এভাবে কাঁদতে নেই। আমি তোমার কাঁন্না দেখতে এখানে আসিনি। আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য এখানে এসেছি। এখানে বসো বলে হ্যাচকা টানে সালমানকে পাশে বসালেন ডাঃ ডায়না। এবার বলো- তোমার কপাল কীভাবে কেটেছে?
-ম্যাডাম, সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। আপনার মতো মানুষের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যাবে তবু এ করুন কাহিনী শেষ হবে না। রাত শেষ হয়ে যাবে তবু আমার ইতিবৃত্ত শেষ হবার নয়।
-যতো সময় লাগে লাগুক। তুমি সমস্ত ঘটনা আমার কাছে খুলে বলো। রাতভর আমি তোমার কাহিনী শুনতে চাই।
-সত্যি বলছেন?
-হ্যাঁ, বলো সালমান।
-আমাদের গ্রামের বাড়ি টাংগাইল জেলার নাগরপুরে। জন্মের আগেই আমার বাবা মারা জান। আমাদের একই গ্রামে অনেক ধর্ণাঢ্য একটি পরিবার ছিলো। তাকে গ্রামের সবাই সম্মান করতেন। তার নাম ছিলো সৈয়দ আহমদ আলী। তার এক ছেলে এক মেয়ে ছিলো। আমার মা সেই বাড়িতে ঝি এর কাজ করে আমাকে লেখা পড়া শিখাতেন। আমি এসএসসিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি। এরপর অর্থকষ্টে গ্রামের কলেজেই ভর্তি হই। হঠাৎ একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে ডালিয়া নামে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন মেয়ের সাথে দেখা হয়। আমি নিজের অজান্তেই মেয়েটিকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলি। আমার ক্লাশমেট হাবিবা তখন প্রেম করে সোহেল নামের এক ছেলের সাথে। ওরা দু’জনই আমার ভালো বন্ধু ছিলো। ওদের নিকট সব খুলে বলি। আমি ছোট বেলা থেকেই খুব বেশি আবেগপ্রবন ছিলাম। আমার কী থেকে যে কী হয়ে গেল। ঐ মেয়েকে অর্থাৎ, ডালিয়াকে আর কোনদিন দেখতে পাইনি। নিরুপায় হয়ে হাবিবার স্বরণাপন্ন হই। হাবিবাদের বাড়ির পাশেই মেয়েটির বাড়ি বলে আমাকে জানায়। আমি তখন ভয়ে ভয়ে চিঠি লিখে হাবিবার হাতে দেই। ডালিয়া চিঠি লিখে আমার এক কপি ছবি দেখতে চায়। আমি পুনরায় ছবিসহ চিঠি পাঠাই। এভাবে চিঠির মাধ্যমে আমাদের প্রেম গভীর হতে থাকে। এক পর্যায়ে জানতে পারি ডালিয়া সৈয়দ বাড়ির মেয়ে। যে বাড়িতে আমার মা ঝি এর কাজ করে। তখন আমি অনুশোচনার আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকি। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করি। হঠাৎ একদিন হাবিবার মাধ্যমে ডালিয়ার চিঠি পেলাম। সে সাফ সাফ জানিয়ে দেয়, আমাকে না পেলে সে জীবনে বিয়ে করবে না। আমি যদি চিঠির উত্তর না দেই তাহলে আত্মহত্যা করবে। ইতোমধ্যে সৈয়দ সাহেব আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আমি ভয়ে ভয়ে ডালিয়ার চিঠির উত্তর দেই। ডালিয়াদের পরিবার ছিলো অত্যন্ত রক্ষণশীল, পর্দানিশীন এবং আমাদের এলাকার মধ্যে ভিষন প্রতাপ ও প্রভাবশালী। সৈয়দ সাহেবের আদেশে শত শত লোক উঠতো আর বসতো। ডালিয়া চিঠিটি পড়ে টেবিলে রেখে ওয়াশ রুমে ঢুকতেই তার বাবা কী কারণে যেনো তার রুমে ঢুকেছে। টেবিলের উপর রাখা চিঠি পড়ে ক্ষিপ্ত হয়ে গেছেন। এরপর রাতের আধারে আমাকে ঘর থেকে বের করে নির্জন জায়গায় নিয়ে বেদম প্রহার করে। মাথা এবং কপাল ফেটে যায়। আরো অনেক ধরনের অমানবিক নির্যাতন করে। আমার মৃত্যু নিশ্চিত করে তার বাহিনীর লোকজন চলে যায়। পরের দিন সকালে রাস্তার পাশে মৃত প্রায় অবস্থায় দেখে সহপাঠিরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার মা পরের দিন যথারীতি কাজে গেলে তাকেও অমানবিক নির্যাতন করা হয়। মা সমস্ত ঘটনা শুনে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আমি একটু সুস্থ্য হলে হাবিবা জানায় বোরকা পড়ে ডালিয়া এসে আমাকে এক নজর দেখে সমস্ত ঘটনা জেনে গেছে। আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসি। ততোদিনে অবশ্য বিএ পাশ করেছিলাম। ঢাকায় এসে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে এম.এ পাশ করি। এরপর ঢুকে পরি এই চাকরিতে। কোন দিকে খেয়াল না করে সালমানের করুণ কাহিনী শুনে ডাক্তার অঝোর ধারায় কাঁদছে। এতোক্ষণ সেদিকে খেয়াল করেনি সালমান। সালমান ডাক্তারকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে অবাক হয়ে যায়।
-আপনি কাঁদছেন কেন?
শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে নিজের অজান্তেই সালমানের হাত ধরে ডায়না।
-চলো
-কোথায়?
-আমার বাসায়।
-এতো রাতে যাব না। প্রয়োজনে কাল আসবো ম্যাডাম।
-আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
-তুমি যাবে কী-না আমি জানতে চাই। না হলে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করে মানুষ জড়ো করবো।
-এতো রাতে আপনার বাসায় গিয়ে কী হবে ম্যাডাম? আপনার অমঙ্গল হবে।
-আমি তোমাকে বিয়ে করবো। বাসায় কাজী অপেক্ষা করছে।
বিয়ের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে আতকে ওঠে সালমান।
-না ম্যাডাম না, এটা হতে পারে না, এ হবার নয়। আমার মতো পোড়া কপালের সাথে যুক্ত হয়ে আপনি আপনার জীবন নষ্ট করতে পারেন না। আমাকে মেরে ফেললেও আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
-শোন সালমান আমাকে আর ম্যাডাম বলো না। আমি তোমার সেই ডালিয়া।
অনেকক্ষণ বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে পলকহীন নেত্রে তাকিয়ে থাকে সালমান। নিজের বুকের ভেতরের দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে রেখে বলেÑ আপনি ডালিয়া হন আর যেই হন আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
-আমি জানি কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছ না। সেটা আমার মুখ দিয়ে প্রকাশ করে তোমাকে ছোট করতে চাই না। তুমি আমার যৌবিক চাহিদা মেটাতে পারবে না, এই তো তোমার সমস্যা? এটার জন্যও আমিই দায়ী ।
-তাই বলে আপনি আপনার সুখের জীবন নষ্ট করতে পারেন না।
-সুখ? কীসের সুখ? আমার সুখ তো কেড়ে নিয়েছে আমার পরিবার। তোমার পুরুষত্বকে নষ্ট করে দিয়েছে আমার পরম শ্রদ্বেয় পিতা। আমি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।
-তাই বলে আপনি একজন খোজা পুরুষকে জীবন সঙ্গী করবেন? এটা হতে পারে না। কশ্নিন কালেও না।
-শোনো, সালমান মানুষের শরীরিক চাহিদা আছে মানছি কিন্তু সেটা মনের উপর ডিপেন্ট করে। মনের চাহিদার উপর আর কোন চাহিদা নেই।
-তাই বলে…
-কোন কথা আমি শুনতে চাই না। আমার মন পাগলের মতো এতোদিন তোমাকে খুঁজেছে। আজ পেয়ে হাতছারা হতে দিবো না। এভাবে ওদের দু’জনের যুক্তিতর্কে আশেপাশের বাতাস ভাড়ি হতে থাকে। প্রকৃতির বৈরি বাতাসে ভেসে একে অপরের তপ্তআত্মা একাকার হতে থাকে। দুরে অনেক দুরে মসজিদ থেকে ভেসে আসে …. আস্সালাতু খইরুম মিনার নাওম………..। ততক্ষণেও দু’জন দু’জনার পাশাপাশি হাত ধরে বসা। হো হো করে হেসে উঠে সালমান, সে হাসির সাথে মিশ্রিত হয় কান্নার রোল।