সৈয়দ রনো : স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। সময়ের বাস্তবতার নিরিখে জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের তাগিদে ১৯ দফার রূপান্তর ঘটেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতির ক্রান্তিলগ্নে প্রস্তাব করেন ভিশন-২০৩০। আবারো সময়ের পরিক্রমায় বাস্তবতার নিরিখে রূপান্তরিত ১৯ দফা ও ভিশন-২০৩০ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমন্বয় ও নির্দেশনার ভেতর দিয়ে রূপপরিগ্রহ করেছে দেশের সকল গণতান্ত্রিক দল-মতের অন্তর্ভুক্তিমূলক ৩১ দফায়। তারেক রহমান ৩১ দফায় এক সূতোয় বেঁধে দিয়েছেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দল সমূহকে এবং সেই সাথে তিনি রচনা করেন বৈচিত্র্যের ভেতর ঐক্যের দর্শন। অতি সম্প্রতি উদ্যাপিত হয়ে যাওয়া ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনসার্টের নামকরণের ভেতর দিয়ে তারেক রহমান যে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন- সেই বাংলাদেশ মনে করিয়ে দেয়, তাঁর প্রয়াত পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সেই বিশেষ বাক্যটি- ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে দেশ বড়’। বিগত দেড় দশকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামল যে ঘুণে ধরা, পঙ্কিল ও ভঙ্গুর রাষ্ট্র রেখে গেছে। সেই রাষ্ট্র মেরামত ও যথাযথ নির্মাণে ৩১ দফার বাস্তবায়ন শুধু মহৌষধই নয় বরং বাস্তবতার নিরিখে এ এক অনিবার্যতা। তারেক রহমানের উদ্যোগে ৩১ দফা সঞ্চালিত হচ্ছে বিভাগ থেকে জেলায়, জেলা থেকে উপজেলায়,উপজেলা থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড, এবং ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি ঘরে ঘরে মানুষের হৃদয়, মনন ও চেতনায়।
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন আমাদের জানিয়ে দেয়- রাষ্ট্র ভূমিকে বাসযোগ্য করে তুলতে মানুষের মনোভূমি নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। ঘরে ঘরে ৩১ দফা পৌঁছে দেবার ভেতর দিয়ে প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকের রাজনৈতিক দর্শনকে সমৃদ্ধ করবার ভেতর দিয়ে নির্মিত হবে আগামীর সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ।রাষ্ট্র কোনো বায়বীয় ধারণা নয় বরং রাষ্ট্র হলো একটি প্রায়োগিক দর্শন। রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার ফসল নয় বরং রাষ্ট্র হলো আপামর জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নিজেকে মনে করতেন ‘তিনিই বাংলাদেশ’! কিন্তু শেষ পর্যন্ত গণভবনের পেছনের দরজা দিয়ে তাকেও পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনে করেন, ৩১ দফা বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের মালিকানা হবে- দেশের সকল জনগণের এবং যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হবে ন্যায্যতা ও সাম্যের ভিত্তিতে এবং সকল মানুষের অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে। তারেক রহমান মনে করেন তাঁর প্রতি, তাঁর পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীর ওপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন হয়েছে সেটির জবাব দিতে ৩১ দফার সফল বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন- ৩১ দফার সফল বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে ভোটের অধিকার আদায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলেই একটি বসবাসযোগ্য ও আগামীর রাষ্ট্র নির্মাণ করা সম্ভব। অতি সম্প্রতি তিনি নিজের একটি বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন- তাঁর পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর মাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সীমাহীন কষ্ট ও ত্যাগ শিকার করেছেন। তাঁর কনিষ্ঠ ভাইকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এক নির্বাসিত জীবনে। এসব ভুলে গিয়ে তিনি ৩১ দফার নিরিখে নির্মাণ করতে চান ভারতীয় নাগপাশ থেকে মুক্ত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনে বাংলাদেশের জনগণ পিষ্ঠ। গত ১৭ বছরে আওয়ামী শাসনামলে সেটি এমন রূপ পরিগ্রহ করেছিল যাতে দম বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল দেশের আপামর জনসাধারণের। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশের স্বাধীন ও সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতি মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করেছে তাই নয় বরং সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশকে বিপন্ন করে সার্বভৌমত্বকে হুমকি সম্মুখীন করেছে। ৫ আগস্ট গণবিপ্লব পরবর্তী সময়ে দেশের জনগণ এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্বপ্ন দেখছে, সেই বাংলাদেশ হবে- স্বাধীন, সার্বভৌম ও স্বনির্ভর। তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা হচ্ছে- ভারতীয় আগ্রাসন মুক্ত সেই সার্বভৌম ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার বীজ, যে বাংলাদেশ ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিক। তারেক রহমানের তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র। বাবা-মা রাষ্ট্রীয় সফরে নেপাল যাবেন। এর আগে নেপালের রাজা সপরিবারে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। এক সন্ধ্যায় বাবাকে কাছে পেয়ে মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তারেক রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাবাকে বললেন, ‘রাজার ছেলে যদি রাজার সাথে বেড়াতে যেতে পারে, আমরা কেনো তোমার সাথে যেতে পারবো না?’ সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি বাবা বলে উঠলেন, ‘তোমরা কোনো রাজার ছেলে নও’। অতি সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁর অসাধারণ গুণাবলী দিয়ে নিজের সন্তানদের দেশের সাধারণ মানুষের মতোই বড় করেছিলেন। বাবার রাষ্ট্রনায়োকচিত সেই সকল গুণাবলীর ধারক ও বাহক তারেক রহমান আজ আরো পরিপক্ক ও দেশ ও জনগণের দায়িত্ব নেবার মহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে। ৩১ দফা কর্মসূচি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সুসংহত ও সময়োপযোগী নীতিমালা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এই প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রের বর্তমান সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলো নিয়ে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৩১ দফা এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে উঠে এসেছে। গণতন্ত্র, সুশাসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের ভিত্তিতে প্রণীত এই দফাগুলো দেশকে নতুন এক যুগের পথে নিয়ে যেতে পারে। গণতন্ত্রের সংকট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালীকরণের জন্য স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার মতো বিষয়গুলো বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। এই নিবন্ধে আমরা ৩১ দফার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে দেখব কীভাবে এটি গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারে এবং দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
আলোকিত প্রতিদিন / ১৩/ ০২/২০২৫