পানিতে ভাসছে ঢাকার শহর

ভোররাত থেকে টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক, অলি-গলি। কোথাও কোথাও পানি উঠেছে কোমরের উপরে। এতে নানামুখী সমস্যায় পড়েছে নগরবাসী।

শুক্রবার (১২ জুলাই) ভোর রাতে মুষলধারে বর্ষণ শুরু হয়। এতে সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই অনেক জায়গায় পানি বেধে যায়। দুপুর গড়িয়ে এলেও অনেক জায়গায় কমবেশি বৃষ্টি ঝরছেই। দুপুর দেড়টার দিকে কিছু কিছু জায়গায় রোদের ঝলক দেখা গেলেও আবার মেঘে ঢেকে যায় আকাশ।


আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ সারাদিন এবং রাতেও বৃষ্টি থাকবে। বৃষ্টির এই প্রবণতা আগামীকাল থাকলেও কিছুটা কমে আসবে।

 
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই রাস্তায় মানুষ কম, বৃষ্টির কারণে আরও বের হননি। জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হতে বাধ্য হয়েছে তারা পড়েছেন বিপাকে। অনেক জায়গায় ঘর থেকে বেরিয়েই কোমর পানি। নৌকার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে রিকশা। এই সুযোগে রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
 
সড়কে গণপরিবহন কম। ইত্তেফাক মোড়, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এলাকা ঘুরে সময় সংবাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এসব এলাকার মূল সড়কসহ অলি-গলি পানিতে ডুবে গেছে। মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়াও বাস চলাচল করতে পারছে না। এই রুটের বাসগুলো অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে।

 নটরডেম কলেজের সামনে পানিতে প্রাইভেট গাড়ি আটকে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ হয়ে যেতে দেখা গেছে।

ছুটির দিন হলেও চাকরির পরীক্ষার্থী, দিনমজুরসহ যারা বের হয়েছেন তাদের হাঁটু সমান পানি পাড়ি দিয়েই গন্তব্যে যেতে হয়েছে।

রাজধানীর গ্রিনরোড, মিরপুর, ধানমন্ডি, বনানী, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ-মগবাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বাংলা মোটর, বাড্ডা, আজিমপুর এলাকা পানির নিচে চলে গেছে।
 
 
এরমধ্যে ধানমন্ডি ২৭, গ্রিনরোড, মিরপুর ও মগবাজার এলাকার প্রধান সড়কসহ প্রায় সব অলিগলিতে হাঁটু সমান, কোথাও কোথাও কোমরসমান পানি জমেছে। এতে একদিকে যেমন দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা। অন্যদিকে প্রাইভেটকার ও সিএনজির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অনেক গাড়িই রাস্তার মাঝে আটকে পড়ে। এছাড়া, জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে গাড়ির ধীর গতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের।
 
এদিকে টানা বৃষ্টিতে অনেক দোকান ও মার্কেটে পানি ঢুকেছে। নিউমার্কেটের নিচতলার বেশ কিছু দোকানে পানি উঠার খবর পাওয়া গেছে।
 
শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, আজ সারা দিন বৃষ্টি হবে। আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসবে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।

 এদিকে সকাল ৯টা থেকে দেয়া আগামী তিন দিনের আবহাওয়া বার্তায় অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলসহ আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে এবং এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। ফলে দেশের সব বিভাগেই আজ শুক্রবার বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও হতে পারে ভারি বর্ষণও হচ্ছে।

আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে। ৩০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সৈকত শহরে। কক্সবাজারে ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী ও শিশু মিলিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

১২/০৭/২০২৪