বহুদলীয় গণতন্ত্রই বর্তমান সমস্যার সমাধান

- Advertisement -
কলাম..
ড. এস.এম. শাহান শাহ্ শাহীন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সেই সময়কার যাবতীয় রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় ও গণতন্ত্রের প্রতি এই জনগোষ্ঠীর স্পৃহা ফুটে উঠেছিল।
মত প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা সভ্য সমাজের মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। যার প্রমাণ আমরা পাই ইতিহাসের পরতে পরতে বিভিন্ন যুদ্ধ, অভ্যুত্থান আর বিপ্লব গাঁথায়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর যে মতামত প্রতিফলিত হয়েছিল তার বাস্তবতা যখন তৎকালীন পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠী বুঝতে ব্যর্থ হয় তখনই পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র আকার ধারণ করে।১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সেই সময়কার যাবতীয় রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় ও গণতন্ত্রের প্রতি এই জনগোষ্ঠীর স্পৃহা ফুটে উঠেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তৎকালীন পাকিস্তানী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যদি নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারতো, তাহলে হয়তো স্বাধীনতার ইতিহাস ভিন্নভাবে, ভিন্ন সময়ে বিনির্মাণ হতো।এই ভুখণ্ডের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার তাগিদ অত্যন্ত প্রবল। এই ব্যাপারটি ১৯৫৪ এর নির্বাচন লক্ষ্য করলে স্বতস্ফুর্ততা বুঝা যায়। আবার ১৯৬৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মৌলিক গণতন্ত্রের প্রতিও মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভ ছিলো লক্ষ্যণীয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকার ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল নীতি গণতন্ত্র থাকলেও তা ১৯৭৩ এর নির্বাচন থেকেই গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো শুরু করেছিল। ১৯৭৩ সালে ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাইও ছিল এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যে গণতান্ত্রিক চেতনার জন্য রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনা সেই গণতন্ত্র মানুষ কোথাও খুঁজে পেল না। রিবোধী দলের কোন স্পেস ছিলো না। ১৯৭৩ সালে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জনাব আতাউর রহমান খানকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা দেয়া হয়নি। ১৯৭৩ এর নির্বাচন ছিলো মারাত্নকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ভোলার ডা. আজহার উদ্দিন আহমেদ সহ অনেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি। কুমিল্লায় ইঞ্জি. রশিদ, ঢাকায় মেজর জলিল সহ সারাদেশে শতাধিক জাসদ প্রার্থীকে জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভাসানী ন্যাপ, মোজাফফর ন্যাপের কোন প্রার্থীকে জিততে দেয়া হয়নি।১৯৭৩ এর সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন সরকারী দল আওয়ামী লীগ অহেতুক মেরে কেটে জিতেছিল ২৯৩টি আসন, জাসদ-১টি, জাতীয় লীগ- ১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থীগণ ৫টি। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী সকল দল বাতিল করে বাকশাল কায়েম এবং ৪টি বাদে সকল সংবাদপত্র বাতিলের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বাকশাল প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের স্ব-নির্ধারিত নির্মম পরিণতি ঘটে। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ এর বাণিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক প্রেসিডেন্ট হলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ সহ, নৌ, বিমান বাহিনী প্রধান রেডিও ভাষণে খন্দকার মোশতাক এবং তার সরকারকে সমর্থন প্রদান করেন। বঙ্গভবনে সেদিন সন্ধ্যায় যারা মন্ত্রী হলেন প্রায় সবাই ছিলেন বাকশালের সদস্য। খন্দকার মোশতাকের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক ৭৮ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এক পর্যায়ে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর তৎকালীন সিজিএস ব্রিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাককে সরিয়ে দেয়া হয় এবং প্রধান বিচারপতি সায়েম এর নেতৃত্বে সামরিকশাসন জারী করা হয়। ক্যান্টনমেন্টে নিজ বাসভবনে বন্দী হন তৎকালীন নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান।
স্বঘোষিত সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন, সরকার গঠন নিয়ে বিলম্ব করছিলেন। চারিদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, খালেদ মোশাররফ ভারতীয় মদদে ক্ষমতা দখল করেছেন। অপরদিকে ক্যান্টনমেন্টগুলোতে এমন একটি ধারণা হয় যে বারবার সামরিক কর্মকর্তাগণ বিপ্লব, প্রতি বিল্পবের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল করেছেন, সিপাহীদের ভাগ্য পরিবর্তন এর কোন উদ্যোগ নেই। ৬ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে সিপাহীদের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। তারা সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন বিপ্লবী স্লোগান মিছিল শুরু করে, ঢাকার রাজপথে, তখন সিপাহী জনতা হাজার হাজার সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর ট্রাকে গাড়ীতে করে শহরে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে। এক পর্যায়ে বিপ্লবী সৈনিকদের হাতে খালেদ মোশাররফ নিহত হন।বন্দী সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেন একদল সিপাহী, জেনারেল জিয়া ক্ষমতার পাদপ্রদীপে চলে আসেন। মুক্ত জিয়া ডিসিএমএল. এর দায়িত্ব নিয়ে দেশ রক্ষায় আত্ননিয়োগ করেন, জাতীয় জীবনে বিভিন্ন সংকটে এগিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে ২৯ নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং ১৯৭৭ সালে ২১শে এপ্রিল বিচারপতি সায়েম এর পদত্যাগ এর প্রেক্ষিতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বির্নিমানে তাঁর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক দলবিধির আওতায় রাজনৈতিক দল গঠন এবং সীমিত রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরুর অনুমতি প্রদান করা হয়। অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জনসাধারণের সুখ ও সমৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় সংহতি সুদৃঢ়করণ ও সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচিকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যা ছিল সর্বতোভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মূলমন্ত্র।গণতন্ত্র উত্তোরণের একটি পর্যায় ছিলো ১৯৭৮ এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান জাগদল সহ ৬টি রাজনৈতিক দল যেমন ভাসানী ন্যাপ, ইউ পি.পি, মুসলীম লীগ, লেবার পার্টি, তফসিলী ফেডারেশন, মূল প্রতিদ্বন্ধী গণতান্ত্রিক ঐক্য জোটের প্রার্থী হিসেবে জেনারেল এম.এ.জি ওসমানী, আওয়ামী লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, মোজাফফর ন্যাপ, পিপলস লীগ, গণ আজাদী লীগ, সিপিবি ও নাগরিক কমিটির সমর্থন পেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের মার্কা ছিলো ধানের শীষ, জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর মার্কা ছিলো নৌকা। জিয়াউর রহমান বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ তার নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যথার্থভাবে। তিনি প্রায়ই উচ্চারণ করতেন “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”। তাই রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে জিয়াউর রহমান বিলুপ্ত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা চালু করেন। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার সমর্থিত দল, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০৭ টি আসন লাভ করেছিলো। বাকী ৯৩ (তিরানব্বইটি) আসন লাভ করেছিলো তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীগণ। আওয়ামী লীগ মালেক ৩৯টি, আওয়ামী লীগ মিজান ২টি, জাসদ ৮টি, মুসলিমলীগ ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি, মোজাফফর ন্যাপ ১টি, গণফ্রন্ট ২ টি, জাতীয় লীগ ২টি, মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পাটি ১টি, জাতীয় একতাপার্টি ১টি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৬টি আসনে জয়লাভ করেছিলো।
১৯৭৯ এর জাতীয় সংসদে সরকারী দল সহ বিভিন্ন দলের অনেক অভিজ্ঞ, গুনী রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েও জিতে ছিলেন। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের উল্লেখযোগ্য সংসদ সদস্য ছিলেন সর্বজনাব মশিউর রহমান যাদুু মিয়া, শাহ আজিজুর রহমান, কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা, খান. এ. সবর, আতাউর রহমান খান, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, সংবাদ সম্পাদক আহ্মেদুল কবির, প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ লেখক আবুল মনসুর আহমেদ, ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমেদ, মীর্জা গোলাম হাফিজ, এসএ বারী এটি, ড. আর. এ. গনি, এমরান আলী সরকার, মীর্জা আব্দুল হালিম, মিয়া মোহাম্মদ মনসুর আলী, তরিকুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অবঃ) মাজেদুল হক, শেখ রাজাক আলী, মোশাররফ হোসেন শাহজাহান, সুনীল গুপ্ত, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, শাহজাহান সিরাজ, বিচারপতি টি. এইচ খান, শামসুল হুদা চৌধুরী, ফনি ভূষণ মজুমদার, কে.এম, ওবায়দুর রহমান, এম. সাইফুর রহমান, নাজিম কামরান চৌধুরী, মিজানুর রহমান
চৌধুরী, সাংবাদিক আহমদ নজির, ইঞ্জি. এল. কে সিদ্দিকী, ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ প্রমুখ।সংরক্ষিত নারী আসনে ছিলেন মিসেস আমিনা রহমান, শাহিনা খান, খালেদা রব্বানী, ফরিদা রহমানদের মত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভদ্র মহিলাগণ। প্রকৃতপক্ষে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অধীনে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য ২য় জাতীয় সংসদ ছিলো একটি তারকা খচিত পার্লামেন্ট। এটাই ছিলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বহুমত এবং পথে বিশ্বাসী রাজনীতিবিদগণ তাদের হৃত মর্যাদা ফিরে পেয়েছিলেন। সহজেই অনুমেয় যেখানে ১৯৭৩ সালে বিরোধীদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিলো মাত্র ৭টি আসন, সেখানে ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিলো ৯৩টি আসন। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে বিদেশে এবং আন্তজার্তিক সংস্থাগুলোতে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাৎবরণ, ১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ জেনারেল এরশাদ কর্তৃক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার ফলে বহুদলীয় গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে।দীর্ঘ প্রায় নয় বৎসর গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন সংগ্রামের ফলে ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান ছিলো মূলত মানুষের ভোটের অধিকার করে প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার তৎকালীন জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৯২ সালে সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকার জনগণের দাবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তভুর্ক্ত করে। ২০১১ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার সংবিধান থেকে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে। যা ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ হাইকোর্টের রায়ে পুর্ণবহাল করা হয়।  রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা অবশ্যই বলবেন যদি নিয়মিত তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনভার পরিবর্তন হতো তাহলে গত ১৫ বৎসর দেশে এরকম একটি ফ্যাসিস্ট ও দানবীয় শাসন ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটতো না। ১৯৫৪ এর নির্বাচন, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ১৯৭৮ এবং ১৯৭৯ এর নির্বাচন, ১৯৯০ এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৯২ এর সংসদীয় ব্যবস্থা প্রণয়ন, ১৯৯৬ এর তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রনয়ন, সর্বশেষ ২০২৪ এর ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সব কিছুর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা ও রাষ্ট্রপরিচালনায় জনমতের অংশগ্রহনের আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান ছিলো। বিএনপি সহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী, দলগুলোর শীষর্যায় থেকে শুরু করে সকলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৭ বছর নির্যাতন ভোগ করেছে, জীবন দিয়েছে মামলা, হামলা ও আর্থনৈাতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে শুধুমাত্র গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অন্তরের তীব্র স্পৃহা ও প্রতিশ্রুতি থেকে। বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং শুভাকাংখী রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্র মেরামত এর ৩১ দফা প্রস্তাব প্রণয়ন করেছেন এবং সমর্থনে জনমত তৈরী করছেন।

- Advertisement -

তার মর্মকথা কিন্তু মূলত গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া, টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। লক্ষ্যনীয় যে জুলাই আগষ্ট বিপ্লবের অংশগ্রহনকারী এবং নবাগত সকল রাজনৈতিক দল ও শক্তি সকলেই গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রণয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের ফসল শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস এর নেতৃত্বাধীন আন্তবর্তীকালীন সরকার তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দ্রুত জরুরী সংস্কার সম্পন্ন করে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। রাজনৈতিক বাগানে শতফুল ফুটতে দিতে হবে, জনগণ বাছাই করে নেবে কোনটি তাদের বেশী পছন্দ। আমরা বলতে পারি সবকিছুর পরে, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চর্চাতেই রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুসংহতকরণ এবং স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক
- Advertisement -

আরো পড়ুুর