যেথায় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার তরমুজ

অন্যধারা ডেস্ক :

ধলেশ্বরী নদী লাগোয়া মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে গড়ে উঠেছে তরমুজের আড়ত। এই আড়তে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রি হয় কোটি টাকার তরমুজ।

পাঁচ বছর আগেও ধলেশ্বরীর তীরের এ আড়তে হাতেগোনা ৫-৬ জনের মতো আড়তদার ছিলো। কালক্রমে আড়তদারের সংখ্যা বেড়ে ডজন খানেকে দাঁড়িয়েছে। দেশের বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও রাঙ্গাবালী থেকে ট্রলারে করে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাটে নিয়ে আসে তরমুজ। একেকটি ট্রলারে ১০ থেকে ১৫ হাজার তরমুজ থাকে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০টির মতো তরমুজ বোঝাই ট্রলার আসে এখানে। এক কথায় প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ পিস তরমুজ আসে মুক্তারপুরে। এছাড়া তরমুজ কিনে নিতে আড়তে আসেন মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকার পাইকাররা।

এদিকে, ভোরের আলো ফুটতেই হাকডাক শুরু হয় মুক্তারপুর এলাকার বৃহৎ তরমুজের আড়ত। ধলেশ্বরী তীরে পুরাতন ফেরিঘাটে আসা সারিবদ্ধ ট্রলার থেকে আড়তে মজুদ করতে থাকেন তরমজু আর তরমুজ। আড়তে মজুদ করার পর সকাল ৬টার দিকে পাইকারদের জন্য উন্মুক্তভাবে তরমুজের ডাক শুরু করেন আড়তদার। আড়তের সামনে ১০০ থেকে ১৫০টি আলাদা আলাদা সাইজের তরমুজের ছোট ছোট স্তুপ করে ডাকতে শুরু করেন বিক্রির জন্য। এ সময় দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা ডাকের স্থানে ভিড় জমান। বড় সাইজের তরমুজ প্রথমে ২০০ টাকা দিয়ে ডাকা শুরু হয়। এরপর সর্বোচ্চ দাম হাকিয়ে পাইকার কিনে নিতে সমর্থ হন তরমুজের স্তপ। সকাল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তরমুজ বিক্রির হাকডাক।

বরিশালের তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত রাঙ্গাবালীর চাষি মোহাম্মদ বায়েজিদ বলেন, ৬ জন চাষির ১০ হাজার তরমুজ নিয়ে ট্রলারের করে এ আড়তে এসেছি। আসতে সময় লেগেছে ১২ ঘণ্টার মতো। এখানে দাম বেশ ভালো, পরিবেশও ভালো। রাঙ্গাবালীর অপর চাষি রহিম খাঁ বলেন, আগে ঢাকার আড়তে তরমুজ বিক্রি করতাম। তবে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে এ আড়তে আসছি। ঢাকার চেয়ে এখানে তরমুজের চাহিদা বেশি। দাম ও পরিবেশ ভালো। ভোগান্তি নেই। তরমুজ বিক্রির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। তাই তরমুজ পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

তরমুজ কিনতে আসা এক পাইকার বলেন, প্রতিদিনই এ আড়ত থেকে তরমুজ কিনে থাকি। এরপর নারায়ণগঞ্জের সৈয়দপুরে নিয়ে বিক্রি করি। গেলো কয়েকদিনের তুলনায় এ আড়তে এখন দাম অনেকটাই কম।

অপর পাইকার ফালান মিয়া বলেন, ৩৫ বছর ধরে তরমুজ-বাঙ্গি বিক্রির ব্যবসা করে আসছি। ৮ বছর আগে মুন্সীগঞ্জ সদরের কাঠপট্টি আড়তে আসতাম। এখন ফলের মৌসুম হওয়ায় মুক্তারপুর আড়তে তরমুজের বাজার বেশ জমে উঠেছে। এ আড়তে দাম ও সুযোগ ভালো। তাই ৫ বছর ধরে এ আড়ত থেকেই তরমুজ কিনছি।

আড়তদার আলিফ সাইফ ভান্ডারের মালিক আল-আমিন মুন্সী বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এখান থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান। এখানে পাইকারদের কোন সমস্যা হয় না। প্রতিদিন ভোরে তরমুজ বেচাকেনা শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতা বিক্রেতারা সহজে এসে এখান থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান।

মুক্তারপুর আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক বলেন, এখানে বর্তমানে ১২ জন আড়তদার রয়েছেন। এ আড়তে এক লাখেরও বেশি তরমুজ বিক্রি হয়। যার মূল্য ১ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

 

খ.র // দৈনিক অন্যধারা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here