- Advertisement -
মোঃ বেল্লাল হোসেন
বাগেরহাটের শরণখোলার দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামে স্বামীর বাড়িতে চারদিন ধরে অবস্থান করে স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেয়ে ফিরে গেলেন পিরোজপুরের নেছারাবাদের তরুনী সামসুন্নেহার (১৯)। ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী স্বামী দিদারুল ইসলাম ওরফে শাওনের গ্রামের বাড়িতে গত রবিবার (২২ অক্টোবর) সকালে এসে অবস্থান করেন ওই তরুনী। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি ঘরে উঠতে দেয়নি। তরুনী বাড়িতে আসার পর ঘরে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে যান তারা।
খেয়ে না খেয়ে বাইরে দিন কাটছে তার। অভিযোগে জানা যায়, পিরোজপুরের নেছারাবাদ থানার বলদিয়া গ্রামের ইব্রাহীম মিয়ার মেয়ে সামসুন্নেহারের সঙ্গে ২০২১ সালের প্রথম দিকে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেরালা সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামের আবু হানিফের ছেলে আইনজীবী দিাদরুল ইসলাম ওরফে শাওনের সঙ্গে।
এর পর তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কে ৬ মাসের মাথায় বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সামসুন্নেহারকে ঢাকায় নিয়ে মিথ্যা কাবিন করে স্ত্রী হিসেবে ভোগ করেন দিদারুল। কিছুদিনের মধ্যেই অন্তসত্বা হয়ে পড়েন সামসুন্নেহার। বিষয়টি জানতে পেরে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন দিদারুল। পরে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সামসুন্নোহর বলেন, আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে আমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর আমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি বলে জানিয়ে দেন। এমন পরিস্থিতিতে আমি ঢাকা জজ কোর্টে ধর্ষণের মামলা করি দিদারুলের বিরুদ্ধে। ওই মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেনকে (পিবিআই) তদন্ত দেন কোর্ট। পিবিআই আমার পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কোর্টে। এর পর দিদারুল তার আইজীবী সনদ বাতিল হওয়ার ভয়ে আমার সঙ্গে আপস মিমাংসা করে বিয়ে করতে রাজি হয়। এবং ০১/০১/২০২২ তারিখ কোর্টের মাধ্যমেই এক লখা টাকা দেনমোহরে আমাকে বিয়ে করেন।
এর পর ৫-৬ মাস সংসার করার পর দুই মাস আগে আমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করবেন না বলে জানিয়ে দেন। ফোন যোগাযোগও বন্ধ করে দেন আমার সঙ্গে। পরবর্তীতে কোনো উপায় না পেয়ে আমি তার গ্রামের বাড়িতে এসে উঠি। কিন্তু আমাকে দেখে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ঘরে তালা দিয়ে তারা অন্যত্র চলে যান। আমি চারদিন ধরে সেই বাড়িতে অবস্থান করেও তাদের কোনা স্বীকৃতি পাইনি।
সামসুন্নোহর আরো বলেন, আমাকে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন হুমকি দিচ্ছেন। আমি চারদিন স্থানীয় মেম্বরের সহায়তায় এবাড়ি ওবাড়ি রাত কাটিয়েছি। দিদারুলের সঙ্গে আমার বিয়ের কাবিননামাসহ বৈধ সকল প্রমান রয়েছে। আমাকে যেহেতু তারা মেনে নেয়নি এখন আমি আবার আদালতের স্মরণাপন্ন হবো।
সাউথখালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. জামাল জমাদ্দার বলেন, মেয়েটির কাছে বিয়ের সকল বৈধ প্রমান রয়েছে। এখন কি কারণে দিদারুল ও তার পরিবার মানছে না তা বুঝকে পারছি না। চারদিন পর্যন্ত ওই বাড়িতে অবস্থান করেছে সে। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি ঘরে তালা দিয়ে চলে গেছে। মেয়েটির এমন অসহায় অবস্থা দেখে আমি তাকে রাতে থাকার ব্যবস্থা করেছি। এটা একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার কর্তৃব্য তাই করেছি।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম হোসেন বলেন, মেয়েটি স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে ওই বাড়িতে ওঠার পর ছেলের পরিবার থানায় এসে অভিযোগ করে। আইনজীবী দিদারুল ইসলামও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বীকার করেছেন তার সঙ্গে সামসুন্নোহারের বিয়ে হয়েছিল।
পরে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। মেয়েটিকে বাড়ি থেকে সরানোর জন্য পুলিশের সহযোগীতা চান।
এব্যাপারে জানার জন্য দিদারুল ইসলাম শাওন মুঠোফোনে বলেন, সামসুন্নেহারের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল। পরবর্তীতে তালাকও হয়েছে। এখন আমার মানহানি করতে নানা কৌশর করছে। সে দেনমোহর ও খোরপোষের টাকা পাবে। সেই টাকা নিলেই সবকিছু সমাধান হয়ে যায়।
দৈনিক অন্যধারা/ এইচ
- Advertisement -