শিবালয় উপজেলা হাসপাতাল কর্মচারীর দেয়া মুচলেকা নিয়ে তদন্ত শুরু 

0
91
বিশেষ সংবাদদাতা:
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। গত ২০ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মূখে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারী, সিনিয়র ষ্টাফ নার্স রুনা আক্তার ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আশরাফুজ্জান ফরিদের বিরুদ্ধে নানা দূর্নীতির অভিযোগে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জনতার রুদ্ররোশে ঐ তিন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিজ দোষ স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মকছেদুল মোমিন তাদের মুচলেকা গ্রহন করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার আদেশ দেন।
জানা গেছে, আশরাফুজ্জামান ফরিদ দূর্নীতির দায়ে ছয় বছর আগে শিবালয় থেকে দোহারে বদলী হয়। তদবির চালিয়ে সে মানিকঞ্জের সাটুরিয়া আসে। সেখান থেকে পুন:রায় শিবালয়ে এসে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপির পরিচয় বিক্রী করে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তার বিরুদ্ধে টানা প্রায় তিন বছরের বিস্তর দূর্ণীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত ২০ আগষ্ট ছাত্র জনতার রোষানলে পড়ে মুচলেকা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে দু’দিন পর মুচলেকা প্রত্যাহারের জন্য সিভিল সার্জনের নিকট একটি আবেদন করে। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সিভিল সার্জন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে রয়েছেন হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: মেহেরুবা পান্না, সিভিল সার্জন অফিসের ডা: আল আমীন ও শিবালয়ে কর্মরত আরএমও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদের নামে হাসপাতাল চত্বরে কোন কোয়ার্টার বরাদ্ধ নেই। তা সত্বেও তিনি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ২য় শ্রেনির ষ্টাফ কোয়ার্টারে এ/সি লাগিয়ে বিলাস বহুল জীবন-যাপন করে আসছে। এছাড়াও হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে বদলীর ভয় দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী এক শিক্ষার্থী জানান, ২০ আগষ্ট মুচলেকা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগকারী ডা: ফজলে বারীর অন্যতম সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত প্রধান সহকারী ফরিদ দোষ স্বীকার করে স্বেচ্ছায়, স্ব-জ্ঞানে মুচলেকায় স্বাক্ষর করে সিভিল সার্জনের হাতে জমা দিয়েছে। অথচ, অসৎ উদ্দেশ্যে মুচলেকার বয়ান অমান্য করে ভিন্ন তদবির চালিয়ে এ কর্মস্থলে থাকার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর সাথে স্থানীয় এক শ্রেণির দালাল চক্র তাকে সহায়তা করছে। অপর দিকে, ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আরও নতুন অভিযোগ তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিকট তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৫ আগষ্ট গুরুতর আহত শিবালয় থানার এক পুলিশ সদস্য এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে ট্রেচারে শায়িত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে অভিযুক্ত ফরিদ সজোরে চপেটাঘাত করে। এ ঘটনায় উপস্থিত লোকজনের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে আশরাফুজ্জামান ফরিদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। ফরিদের স্ত্রী চামেলী রহমান তদন্ত কমিটির নিকট সাক্ষ্য দিতে কেন এসেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদ জানায়, তার স্ত্রী পার্শবর্তী দৌলতপুর উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী পদে কর্মরত আছে। তাকে শিবালয় কার্যালয়ে প্রেষণে আনা হয়েছে।
কিন্তু, তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র দেখাতে পারেননি।
তদন্ত কমিটির সভাপতি ডা: মেহেরুবা পান্না জানান, তদন্ত অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ১০ জন ও ৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। সিভিল সার্জন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন যথাসময়ে জমা দেয়া হবে। নাম-পদবী প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির সদস্য জানান, ১৯ সেপ্টম্বর দিনব্যাপী তদন্ত অনুষ্ঠানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
অন্যধারা/২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here