হেমন্তের স্বচ্ছ রোদের অপেক্ষায় প্রকৃতি

0
58
হেমন্তের স্বচ্ছ রোদের অপেক্ষায় প্রকৃতি
হেমন্তের স্বচ্ছ রোদের অপেক্ষায় প্রকৃতি

নাঈমুল রাজ্জাক:

পরিক্রমায় সুমঙ্গলা হেমন্তের আগমনী সুবাতাস বইছে। হেমন্তের যৌবন খুবই অল্প সময়ের। হেমন্ত তার রূপমাধুরীতে রাঙিয়ে দেয় প্রকৃতির প্রতিটি প্রহর। হেমন্তে প্রকৃতি থাকে শুভ্র-সতেজ। মেঘাছন্ন আকাশ ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে পরিপাটি। ষড়ঋতুর এ দেশে হেমন্ত হল শুভ্রতার প্রতীক, স্বচ্ছ রোদের প্রভাতলোকে। হেমন্তের আসল চেহারা ফুটে ওঠে শরতের পরে। এ সময় সি্নগ্ধতায় বিমোহিত থাকে মন। প্রকৃতির বুকে, শুভ্রতার উৎকৃষ্ট নিঃশ্বাসেও জেগে ওঠে প্রণয়ের রেখা, বেজে ওঠে হৃদয়ের সুর আলোকিত স্বস্তির ভেতরে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎ নিয়ে বলেছিলেন তার কবিতায়, ‘এই শরৎ-আলোর কমল-বনে/ বাহির হয়ে বিহার করে,/ যে ছিল মোর মনে মনে। তারি সোনার কাঁকন বাজে,/ আজি প্রভাত কিরণমাঝে, হাওয়ায় কাঁপে আঁচলখানি,/ ছড়ায় ছায়া ক্ষণে ক্ষণে।’

হেমন্তেও রয়েছে উদাসীন প্রকৃতির স্নিগ্ধ মধুর কাব্যিক উপমা। যা বিমোহিত করে মনকে। প্রকৃতির বুকেও থাকে শুভ্র- সতেজতা।যা সৌন্দর্যে অনন্য।তেমনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেমন্ত নিয়েও বলেছিলেন তার কবিতায়,
‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে
জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে
শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়ে শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার
স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।
ক্ষীণ নদীরেখা
নাহি করে গান আজি, নাহি লেখে লেখা
বালুকার তটে। দূরে দূরে পল্লী যত
মুদ্রিতনয়নে রৌদ্র পোহাইতে রত
নিদ্রায় অলস ক্লান্ত।‘

হেমন্তের প্রতিটি প্রহরেই থাকে মুগ্ধতার পদধ্বনি,ধানক্ষেতে নেমে আসা বালিহাঁসের ঝাঁক, শেষ বিকালে পশ্চিম আকাশ রাঙিয়ে দেয়া সাত রঙের রংধনু। সন্ধ্যার প্রফুল্লতা মানুষের ভেতর জগৎ,প্রকৃতিকে করে তোলে লাস্যময়ী।

হেমন্তে সম্প্রীতির এক সুদৃঢ় বন্ধনে মৃদু ছায়ায়ও স্বপ্নগুলো নেচে উঠে,অসংখ্য স্বপ্নচারীর ইন্দ্রের অনুগত বিন্যাসের মত,রুপালী রাতও প্রাণ খোলা উৎসবে মেতে উঠে আলোকিত স্বস্তির ভিতর। মৃদু ছায়াও সৃষ্টি হয় বৈচিত্র্যের সুর।

হেমন্ত তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতায় অনন্য।তার সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে দেয়, শুভ্রতায় মন জুড়িয়ে দেয়। সুশোভিত করে তোলে দেহ-মন সারাক্ষণ। সৌন্দর্যবোধ,চেতনা থাকলেই হেমন্তের প্রকৃতির সৌন্দর্য চোখে পড়ে তুলার মতো শুভ্র মেঘগুলোতে।

হেমন্তের আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় যেন কোনো চিত্রশিল্পীর রঙতুলির আঁচড়ে সযত্নে আঁকা সুনিপুণ এক চিত্রকর্ম। সে এক কাব্যিক অনুভূতি, যা কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনকে ভাবুক করে তোলে।দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততায় জানালার গ্রিলের ফাঁকে এক টুকরা গাঢ় নীল আকাশ আর শুভ্র মেঘের ছোটাছুটি। মানুষের নাগরিক চোখকে স্বস্তি দেয়, দেয় সতেজতা, প্রাণচাঞ্চল্য।

হেমন্তের সকালে শিউলির সৌরভ বাঙালির প্রাণে আনে উৎসবের আমেজ। হেমন্তে শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, ছাতিম, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, রাজঅশোক ইত্যাদি ফুল তৈরি করে প্রাণচাঞ্চল্য।

শরৎের প্রকৃতি বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতিতে যেমন প্রভাব বিস্তার করে, তেমনি হেমন্ত বাংলার সাহিত্যেও এর উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষণীয়। মধ্যযুগের কবি চণ্ডীদাস, মহাকবি কালিদাস থেকে শুরু করে আধুনিক লেখক, কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় হেমন্ত বন্দনা দেখা যায়।

অন্যধারা / ২৬ আগস্ট ২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here