করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেতনতার বিকল্প নেই

অন্যধারা ডেস্ক : পৃথিবীর রূপ আজ স্বাভাবিক নেই। করোনা মহামারী নামক অশুভ শক্তির কাছে বন্দি আজ সারাবিশ্ব।পরিবার,সমাজ,দেশ,রাষ্ট্র,জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সকল স্তরে বিরাজ করছে স্থবিরতা। গতবছর মার্চ মাস থেকে শুরু কোভিডের আক্রমণ আমাদের দেশে।  ধীরেধীরে আক্রমণ বাড়তেই থাকে করোনাভাইরাসের। করোনার প্রকোপ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকলে সরকার বাধ্য হয় লকডাউন দিতে। যা আমাদের মতো সদ্য নতুন উন্নয়নশীল দেশের এবং মানুষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকেই দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সরকার দফায় দফায় বাড়াতে থাকে লকডাউন।করোনা প্রকোপের প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের রাজধানী শহর ঢাকা থেকে শুরু করে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত সকল মানুষ সচেতনতা, পরিষ্কার – পরিচ্ছন্নতা ও মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।যা এক প্রকার আতঙ্কের মতো জনসমাজে প্রভাব বিস্তার করে।বাংলাদেশের বেশিভাগ মানুষ এখনো যেহেতু অশিক্ষিত, অজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন নয়, তাই তারা সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে করোনা মহামারী সম্পর্কে অসচেতন ও উদাসীন হয়ে নিজের মন মত যত্রতত্র ঘুরাফেরা করছে। আর বাস্তবিক পক্ষেই যেহেতু আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দিনমজুর ও খেটে খাওয়া শ্রমিক ও কৃষক। তারা পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ মেটাতে বাধ্য হয় সরকারের দেওয়া লকডাউন ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে উপার্জন করতে। চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনার  প্রভাব হ্রাস পেলে লকডাউন তুলে নেয় সরকার। সকল সকল পরিবহণ, অফিস, আদালত, শিল্প প্রতিষ্ঠান,গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দেয় সরকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি রোধে। কিন্তু গত দুই মাস থেকে আবারো কোভিডের আক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে তাই নয় মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাড়তে থাকে। যার অন্যতম কারণ মানুষের অসচেতনতা ও উদাসীনতা। প্রয়োজনে হক আর অপ্রয়োজনে হক সকলে তার ইচ্ছামতো ঘুরাঘুরি, আড্ডা, জনসমাগম ও গা ঘেষাঘেষি করছে হররোজ। গাড়িতে,দোকানে, বাজারে কিংবা মার্কেটে মানুষের মাঝে নেই শারীরিক দূরত্ব, মাস্ক কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবহার, সর্বোপরি সচেতনতার নেশ মাত্র পাওয়া যায়না মানুষের মাঝে। অথচ করোনার ব্যাপকতর আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা দেখে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার কথা। এখন প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ আর আক্রান্তও হচ্ছে দ্বিগুণ।
পক্ষান্তরে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ততটা নয় যতটা উন্নত থাকার কথার কথা একটি উন্নয়নশীল দেশের।আমাদের জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত হাসপাতাল নেই,ব্যাড নেই,অক্সিজেন নেই, এম্বুলেন্স নেই এবং নেই আইসিইউর সাথে উন্নত চিকিৎসা। শুধু তাই নয় যত্রতত্র বেসরকারি হাসপাতাল, ডাক্তার থাকলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব পরিলক্ষিত হয়।সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চললে অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা গিয়েছে। অন্যদিকে আমাদের অর্থনীতি করোনাকালীন সময়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।সাধারণ মানুষ কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, পরিবহণ শ্রমিক ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের ঘরে খাবার নেই। দেশের সরকার একার পক্ষে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম নয় কারণ আমরা সবেমাত্র উন্নয়নশীল দেশ। এই যেন উভয় সংকট একদিকে করোনার ভয়ঙ্কর ছোঁয়া অন্যদিকে মানুষের ঘরে খাবার নেই।সবদিক বিবেচনা করে ১১আগস্ট  থেকে লকডাউন শিথিল করে দিয়েছেন অফিস,আদালত, হাটবাজার, পরিবহণ চলবে আগের মতো স্বাভাবিক গতিতে। পরিবহণ ভাড়াও আগের মতো করেছেন সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকি কমাতে।বর্তমানে সকল শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারণের টিকা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিভার্সিটিগুলোতে ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিবন্ধন করতে বলেছেন সরকার।টিকা নিশ্চিত হলেই খোলা হবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাতে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকি কমবে অনেকটা এটা নিশ্চিত বলা যায়। আর শিক্ষার্থীদের সেশনজট রোধে অনলাইন পরিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে প্রতিষ্ঠান। তবে আরেকটি বিষয় সকলের দৃষ্টিগোচর যে গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। এদিক বিবেচনা করে গ্রামাঞ্চলের সকল মানুষের পাশাপাশি শহরাঞ্চলের সকল মানুষকে আরো বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।লকডাউন , শার্টডাউন এর বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে সরকার দেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে।বিধিনিষেধ উঠে গেছে, নেই লকডাউন। তারমানে এই নয় যে করোনা বিদায় নিয়েছে? এই মুক্ত ও স্বাধীন জীবনে আমাদের আরো বেশি সচেতনতা ও দায়িত্ববান হতে হবে।করোনার প্রভাবে অনির্দিষ্টকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ফলে ঝরে গেছে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন যা দেশ ও জাতির ভবিষ্যত উন্নয়নে একটা বড় বাধা।
অনেকের আবার সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকারের ঘনঘটা। তারা বাধ্য হয়েই চাকরির বয়স বৃদ্ধির আন্দোলন করছে।দেশের এমন প্রতিকূলতা দেখে সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক,দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহণচালক, ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি, ছাত্র ও শিক্ষক সর্বোপরি সকলের দিক বিবেচনা করে ধাপে ধাপে টিকার ব্যবস্থা করে সবকিছু স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে সরকার।দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিতে আবারো এগিয়ে নিতে লাকডাউন উঠিয়ে নেওয়া সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত ও সকলের জন্য কল্যাণকর তখন হবে যখন আমরা নিজ থেকে দায়িত্বশীল ও আরও সাবধাণতা অবলম্বন করবো। পাশাপাশি অন্যদের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল করে তুলবো। শহর কিংবা গ্রাম সকল মানুষেকে অবশ্যয় ঘর থেকে বেরুনের সময় সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। মাস্ক পড়তে হবে,পকেটে স্যানিটাইজার বা সাবান রাখতে হবে যাতে দুই হাত সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখা যায় কেননা করোনা ভাইসার হাচি -কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। আমরা ভৌগলিকভাবেই বেশি সময় জ্বর,ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে যায় ফলে সবসময় আমাদের হাত নাক ও মুখে দিয়ে থাকি। তাই হ্যান্ডশেক, গা- ঘষাঘষি আর এড়িয়ে চলতে হবে জনসমাগম। হাত পরিষ্ককার – পরিচ্ছন্নন না করে নাকে ও মুখে হাত দেওয়া যাবেনা।অপর মানুষ হতে কমপক্ষে তিনফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।বাহিরে কোন কাজ শেষকরে ফিরতে হয় আমাদের পরিবারের কাছে,তাই এসেই কাউকে না ধরে পরিচ্ছন্ন হয়ে তারপর মিশবো সবার সাথে।কেননা আপনার কারণে যেন পরিবারের কেও করোনার ঝুঁকিতে না পরে।পাশাপাশি আমাদের সকলকে সামর্থ্য অনুপাতে ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।যেমন:পানি,স্যালাইন, লেবুর শরবত,  ফলের রস, দুধ,বাদাম,ডাব,কমলা,মাল্টা ইত্যাদি।  যারফলে আমাদের দেহের রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তাহলে সহজে কোন রোগ আমাদের আক্রান্ত করতে পারবে না।যাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদে জ্বর, শরীর ব্যাথ্যা, গলাব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট হয় তাদের আতঙ্কিত না হয়ে অতিদ্রুত ডাক্তাতারের পরামর্শ নিতে হবে এবং করোনা টেস্ট করতে হবে।ডাক্তারের পরামর্শে প্রয়োজন হলে ১৪ দিন একা জীবনযাপন করতে হবে।একটি বিষয় আমাদের সকলকে গুরুত্বের সহিত চিন্তা করতে হবে যেখানে সরকার লকডাউন দিয়ে মানুষের জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল তারপরেও প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুহার ছিল অনেকবেশি। সেখানে সরকারের  নিষেধাজ্ঞা নেই,মানুষের জীবনযাপন এখন স্বাধীন ও মুক্ত।
তাই আমাদের এখন আরো বেশি দায়িত্ববান ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে আমাদের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ না করে।সরকার জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে গনটিকা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন আমাদের প্রত্যেককে এই টিকা নিতে হবে। করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের আতঙ্ক নয় বরং সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সচেতনতাই পারে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে।পরিশেষে বলতে হয় নিষেধাজ্ঞা নেই,দায়িত্ব আছে আমরা যদি সচেতন হয়,’করোনা মোরা করবো জয়’।
লুৎফর রহমান লাভলু
শিক্ষার্থী ও লেখক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
অন্যধারা/সাগর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here