চিরকুট
নম্রতা সাহা
আরোহীর এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। করোনা মহামারী – লকডাউন এসব মিলিয়ে আরোহীর পড়াশোনা তো একেবারে ডকে উঠেছে। গতবারের মত এবারো পরীক্ষা না দিয়ে পাশ করে যাবে ভেবে লেখাপড়া তো একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিল ও। ক্রমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতেই আরোহীর মাথায় তো একেবারে আকাশ ভেঙে পড়লো। এতদিন ইনস্টাগ্রাম রিলস করে অনেক ফলোয়ার বানিয়ে ফেললেও এতো বড়ো সিলেবাস কিছুতেই শেষ করতে পারছেনা ও। হাতে মাত্র আর কয়েকটা দিন – এদিকে কোন সাবজেক্টই ঠিকমত রেডি হয়নি। কী যে করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। পরীক্ষা না দিয়েই মাধ্যমিকে বেশি নম্বর পেয়ে যাওয়ায় ঝোঁকের বসে সাইন্স নেওয়ার মজা হারে হারে বুঝতে পারছে এখন। মা-বাবা-দিদি কত করে বুঝিয়ে ছিল, কিন্ত কোন লাভই হয়নি – আরোহীর জেদ ধরে। আরোহীর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল এই করোনার মধ্যে পরীক্ষা না দিয়েই সে বেশ ভালো নাম্বার নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে যাবে। কিন্ত কি থেকে কি হয়ে গেল…। “ইস… তখন যদি ওদের কথা শুনতাম…” – ভাবতে ভাবতে বইয়ের ওপরই ঘুমিয়ে পড়ে। মায়ের বকুনির ঠেলায় আবার উঠে বসে চোখে মুখে জল দিয়ে আসে। বাঁচার কোন রাস্তা নেই, এই ক’দিনের মধ্যে সিলেবাস শেষ করতে হবেই – নইলেই বিপদ। স্যারদের থেকে সাজেশন চাইলেও বিশেষ কোন লাভ নেই – সাইন্সের সাবজেক্টের সাজেশন বলে তো কিছু হয় না, সবই পড়তে হয়। পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে আসতে থাকে আরোহী তত ভয়ে শুকিয়ে যায়। মাঝে আর একটা দিন। প্রথম দিনই বাংলা পরীক্ষা। এদিকে আরোহী কোনমতে গল্প-কবিতাগুলো রেডি করতে পারলেও শিল্প-সংস্কৃতির পার্টটা কিছুতেই পারছে না। রাত বাড়তে লাগলো… পরের দিনই পরীক্ষা। কি করবে বুঝতে না পেরে আরোহী ছোট্ট ছোট্ট চিরকুটে লিখতে শুরু করে। সে জানে পরীক্ষায় এভাবে নকল করা টুকলি করা ঠিক নয়… তাও এটা করা ছাড়া আর কোন উপায়ও তো নেই। ছোট্ট ছোট্ট চিরকুটগুলো পড়ার টেবিলের এক কোণে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি স্নান–খাওয়া সেরে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। ওদিকে পরীক্ষার হলে ঢুকেই আরোহীর জামার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখে সেই চিরকুটগুলো নেই… তাড়াহুড়োতে টেবিল থেকে নিতেই ভুলে গিয়েছে। নিজেকেই নিজের মারতে ইচ্ছা করছে। আবার যে বাড়ি গিয়ে ওগুলো নেবে – সেটাও হবে না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষা শুরু। টিচারও খাতা–প্রশ্নপত্র নিয়ে হলে ঢুকে পড়েছেন। প্রচণ্ড টেনশনে ফ্যানের তলায় বসেও ঘামতে শুরু করে। চিরকুটে লেখা উত্তরগুলো মনে করার চেষ্টা করে। চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু ছাড়া আর কারোর সম্পর্কেই মনে পরছে না। তখনই বেল পড়ে… টিচার প্রশ্নপত্র দেওয়া শুরু করেন। এদিকে আরোহীর ঘাম ঝরতে থাকে… বিড় বিড় করে… “নন্দলাল কি সত্যিই তাকে বাঁচাতে পারবে?”
দৈনিক অন্যধারা/০২ আগস্ট ২০২২/জ কা তা