- Advertisement -
- Advertisement -
জহিরুল কায়সার তালুকদার:

এসি ডানবার। দাফন করার পরেও প্রায় ৪০ বছর জীবিত ছিলেন। এ ঘটনা কাল্পনিক নয় বাস্তবেই ঘটেছিল এটি। আজও মানুষকে ভাবিয়ে তোলে এসি ডানবারের এই ঘটনা। তার নামটিই বার বার ইতিহাসের অন্যতম সৌভাগ্যবতী হিসাবে উঠে আসে।
কানাডার দক্ষিণ ক্যারোলিনার ব্ল্যাকভিলে গ্রামে ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন ডানবার। মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। ১৯১৫ সালে ৩০ বছর বয়সে একদিন হঠাৎ করে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে চোখ উল্টে পড়ে যান ডানবার। এ রোগের কারণেই তার এ অবস্থা হয়।

এ সময়ে ডানবার খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তার এ অবস্থা দেখে দক্ষিণ ক্যারোলিনার এক চিকিৎসককে ডেকে এনে দেখান। চিকিৎসক ডানবারের নাড়ি ও নিশ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।

ডানবারের পরিবারের সদস্য এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দাফনের জন্য ডানবারের মৃতদেহ একটি কাঠের কফিনে রাখা হয়।

পরের দিন বেলা ১১টার দিকে ডানবারের মৃতদেহকে ফুল, মালা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়। তখনকার সময়ে ধুমধামে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হতো না। এ কারণেই প্রস্তুতিটা ছিল অতি সামান্য। মৃতের পরিবারের লোকজন খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করতেন।

কানাডিয়ান এসি ডানবারের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তিন জনে মন্ত্র পড়েন ডানবারকে সমাধিস্থ করার সময়। এতে সমাধিস্থ করবার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত করণে বেশ সময়ের প্রয়োজন হয়।
৬ ফুট লম্বা গর্ত করা হয় ডানবারের কফিনটি সমাধিস্থ করার জন্য। মন্ত্র পাঠ সমাপ্ত হওয়ার পরেই ডানবারের কফিনটি গর্তে নামিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
পাশের শহরেই ডানবারের বোন থাকতেন। তাদের দু’বোনের মধ্যেই বেশ সখ্যতা ছিল। আর এ কারণেই ডানবারের আকস্মিক মৃত্যুর সংবাদটি অনেক দেরিতে জানানো হয়েছিল।

এসি ডানবারের দাফন কাজ সম্পন্ন করার কিছু পরে তার বোন এসে পৌঁছেন এবং অন্তত একবার তার বোনকে দেখানোর জন্য উপস্থিত সকলের কাছে অনুরোধ করেন।

গির্জার তরফ থেকে বিবেচনাপূর্বক কফিনটি খুঁড়ে বের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মাটির নীচ থেকে কফিনটি তুলে আনতে গিয়ে উপস্থিত সকলেই কফিনের ঢাকনা খোলা দেখেন!

কফিনের ডালা সড়াতেই দেখেন ডানবার তার বোনের দিকে এক প্রাণবন্ত হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন। এতে সকলে ভয় পেয়ে যান। ডানবার আদৌ জীবিত আছেন কিনা এমনই এক প্রশ্ন সকলের মনে জাগতে শুরু করে।
মৃত ডানবারকে হাসতে দেখে উপস্থিত সকলেই ভয় পেয়ে যান। এমনকি ভয়ে গির্জার তিন সদস্য কবরের ভিতর পড়ে যায়। এদের মধ্যে দু’জনের চাপে বাকী এক জনের পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়।

ডানবার জীবিতই ছিলেন। খুব ক্ষীণ ভাবে চলছিল তার শ্বাসপ্রশ্বাস। কবর থেকে উঠিয়ে পুনরায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে জানা যায় তিনি জীবিত আছেন। পরে সেই চিকিৎসক নিজের ভুল স্বীকার করেন।

এ ঘটনার পরেও ডানবার আরও ৪০ বছর জীবিত ছিলেন। বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে ১৯৫৫ সালে স্বাভাবিক ভাবেই মারা যান তিনি।

ব্ল্যাকভিলের সবাই এমন ঘটনার পর থেকেই এসি ডানবারকে সন্দেহের চোখে দেখেন। অনেকে তাকে অশরীরী বা ভূত বলে মনে করতেন।

ব্ল্যাকভিলের মানুষের গল্পে গল্পে ডানবারের কাহিনি বছরের পর বছর ধরে বেঁচে রয়েছে। ডানবারের এই কাহিনি জ্যান বন্ডেসন নামক এক লেখকের বই ‘বারিড অ্যালাইভ: দ্য টেরিফাইং হিস্ট্রি অব আওয়ার মোস্ট প্রাইমাল ফিয়ার’-এ লেখা হয়েছে। (ছবি ও তথ্যসূত্র: সংগৃহীত)
দৈনিক অন্যধারা/১৩ আগস্ট ২০২২/জ কা তা
- Advertisement -