শেখ সাব্বির হোসাইন (সখিপুর প্রতিনিধি): টাঙ্গাইলের সখিপুর, ঘাটাইল ও মির্জাপুরে টিলা কেটে চলছে মাটি বিক্রি। এক যুগে এখানকার এক-তৃতীয়াংশ টিলা ধ্বংস হয়েছে। এখন টিলার মাটি ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটায়। এতে উজাড় হচ্ছে বন, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। স্থানীয়দের অভিযোগ, টিলা কাটায় জড়িত প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ নেতারা। আর মাসোহারা পাওয়ায় এ বিষয়ে প্রশাসন নির্বিকার।মির্জাপুরের পূর্বাঞ্চল এবং সখিপুর ও ঘাটাইলের অর্ধেকই টিলা জমি। অবৈধভাবে কেটে এসব টিলা ধ্বংস করা হয়েছে। লাল মাটির টিলায় শাল-গজারির যেসব গাছ ছিল, সেগুলোও হারিয়ে গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিলার মাটি কাটতে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক সংগঠন। এর মধ্যে সখিপুরে দুটি ‘হেভি ইকুইপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘ভেকু মালিক ব্যবসায়ী সমিতি’ আর মির্জাপুরে ‘ইটভাটা মালিক সমিতি’র নেতৃত্বে টিলা কাটার তথ্য পাওয়া যায়।হেভি ইকুইপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল হোসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তবে সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর তারেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। উপজেলা ভেকু মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রাশেদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক রোকন খানও সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে টিলার মাটি বহনে চলাচল করে ট্র্যাফে ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক।অন্যদিকে মির্জাপুরে ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃত্বে টিলার মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। এ সমিতির নেতৃত্বে আছেন মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মঞ্জুরুল কাদের বাবুল।সম্প্রতি মির্জাপুরের আজগানা, তরফপুর, বাঁশতৈল, লতিফপুর এবং গোড়াই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে টিলা কাটতে দেখা যায়। স্থানীয়দের ভাষ্য, দিনরাত টিলা কাটা হলেও উপজেলা প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর গা করছে না। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বন বিভাগ ছাড়াও ব্যক্তিমালিকানার অনেক টিলা কেটে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ মিয়া বলেন, ‘আগে সখিপুর ও মির্জাপুরে ছোট-বড় অনেক টিলা ছিল। এখন টিলা খুঁজতে হয়।’ সরকারি মুজিব ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুনির্মল চন্দ্র বসু বলেন, ‘নির্বিচারে টিলা নিধনের ফলে ভূপ্রকৃতি নষ্ট হচ্ছে। কমে যাচ্ছে গাছপালা। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। আর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ায় বাড়ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি।’অভিযোগের বিষয়ে সখিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর তারেক বলেন, ‘আমরা গাড়ির ব্যবসা করি। কেউ চাইলে ভাড়া দিই। তারা সেই গাড়ি টিলা কাটার কাজে ব্যবহার করলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা টিলা কাটার সঙ্গে জড়িত না।’সখিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী জানান, টিলা কাটা বন্ধে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। ধারাবাহিক অভিযানের ফলে টিলা কাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অন্যদিকে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম বলেন, ‘টিলা কাটার সঙ্গে যে-ই জড়িত থাক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
অন্যধারা/১৬/০৫/২০২৪/আকাশ