বুদ্ধি | আবুল হাশেম

- Advertisement -
- Advertisement -

বুদ্ধি

আবুল হাশেম

বাঘ অনেক কষ্ট করে একটা হরিণ শিকার করলো সে মজা করে খাবে। বনের পাশ দিয়ে শেয়াল যাচ্ছিল, শিয়ালের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো আজ যে করেই হোক হরিণের মাংস খেতে হবে। তার তো আর বাঘের মতো অতো শক্তি নেই যে হরিণ শিকার করে খাবে।

শিয়াল মনে মনে ফন্দি আঁটতে লাগলো, আজ যে করেই হোক বাঘ মামাকে একটা ভুলভাল বুঝিয়ে তার শিকার করা হরিণটা নিজের করে নিয়ে গিয়ে মজা করে খেতে হবে তো কি করা যায়? যাক আজ যাই হোক, বাঘ মামার কানে একটা কান পোড়া দিতে হবে। শিয়ালের মাথায় বুদ্ধি এলো সে সরাসরি বাঘকে বলবে, বাঘ তখন হরিণটাকে মেরে সামনে করে হামাগুড়ি দিয়ে বসে আছে। শিয়াল হঠাৎ করে দূর থেকে বাঘকে এমন ভাবে মামা ডাক শুরু করলো তখন বাঘ শিয়ালকে বললো, সামনে আয়। শিয়াল বললো, মামা একটু এ দিকে এসো, তোমার সাথে কথা আছে। বাঘ বলছে, তুই এখানে এসে বল দীর্ঘ দিন ধরে হরিণের মাংস খাই না। আবার তুই এ মাংস ভাগ ধরতে চাস না তো…।

শিয়াল বললো, মামা শিয়াল বড় জোর গৃহের গাছল আর বন্য মুরগী ধরে খেতে পারে হরিণ নয়। বাঘ হামা গুড়ি দিয়ে উঠে একটু সামনে গিয়ে শিয়ালের সাথে কথা বলা শুরু করলো। শিয়াল বলছে মামা বনের এই হরিণটার ব্যাপারে আপনাকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম আর যাই করেন না কেন? এই হরিণটা শিকার করে খাবেন না। বাঘ বললো তো আগে বলিস নাই কেন? আজ বলছিস কি জন্য? শিয়াল বলছে, আগে বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু সময়ের কারণে বলতে পারি নাই।

বাঘ বলছে, ভনিতা না করে বল কি বলবি? শিয়াল মনে মনে বলছে মামা তুমি বনের হরিণগুলো একাই খাও, আমাদের জন্য এক টুকরো মাংস বা হাড্ডিও দাও না, আর আমরা দূর হতে জিহবার জল ফেলি। শিয়াল বললো, বাঘ মামা তুমি যে হরিণটা ধরেছো এর জটিল এক রোগ আছে, ভাইরাস নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত, এই হরিণটাকে বনের বড় বড় ডাক্তার দেখানো হয়েছে, ওর মা ওকে সুন্দরবন হতে নিয়ে গিয়ে নিঝুম দ্বীপে এক বড় হরিণ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েছেন এমনকি ঢাকা চিড়িয়াখানায় রেখে বাংলাদেশের বড় বড় পশু ডাক্তার দিয়ে দেখানো হয়েছে তারপর ওর কোনো উন্নতি হয় নাই, ডাক্তার বলেছিলো ও বনে ঘুরলে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু কেউ যদি ওর মাংস খায় সেও ঐ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।

আমি চাই তুমি এই হরিণটারে না খাও। তুমি মরলে আমরা বনের সকল পশু এতিম হয়ে যাবো। আবার কে বনের রাজা হয়? বাঘ বললো, তোর কথায় আমার বিশ্বাস হয় না। যা আরো দু’জন স্বাক্ষী নিয়ে আয়, সাথে সাথে শিয়াল আরেকটা শিয়াল এবং কুকুরকে নিয়ে আসলো, আনার সময় ওদেরকে সব বলে কয়ে নিয়ে আসলে। ওদেরকেও ভাগ দেওয়া হবে। হরিণের মাংসে কার না লোভ থাকে, তরতাজা মাংস বাঘ মামা একা একা খায়। বাঘের সামনে আসলো ওরা তিন জন। বাঘ বাকি দুজনকে জিজ্ঞেস করলো ঘটনা কি সত্য? বাকি দুজন বললো জি মামা। সব সত্য, বাঘ রেগে গিয়ে বললো, তো এতো দিন তোরা বলিস নাই কেনো?

তিন জন সমস্বরে বললো ভয়ে। বাঘ তখন ভাবলো কেবল মাত্র বিয়ে করেছি। বাসায় ছোট ছোট দু’টো বাচ্চা আর বউটার কি হবে? চিন্তা করতে করতে বাঘ থেমে গেলো আর চোখে জল চলে আসলো। শিয়ালকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো, যা তোরা তিন জনে এটাকে বনের বাইরে নদীতে ফেলে দিয়ে আয়। আর বনের সবাইকে বলে দিস, ভুলেও যেনো কেউ এই হরিণের মাংস না খায়।

শিয়াল তখন মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। তিন জন মিলে বনের বাইরে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে মজা করে খেলো। আর বাঘ মামা অনহারে রয়েই গেলো। শুধু শক্তি থাকলেই কাজ হয় না। বুদ্ধি থাকতে হবে। বুদ্ধি থাকলে শিকার না করেও শিকারীর ভাগ নেওয়া যায়। এভাবে সমাজে কিছু চতুর ব্যক্তি আছে যারা অন্যের মাথায় বুদ্ধির জোরে কাঁঠাল ভেঙে খায়। সব চেয়ে বড় কথা শক্তির শেষ যেখানে বুদ্ধির সেখান হতে শুরু হয়।

দৈনিক অন্যধারা/১০ আগস্ট ২০২২/জ কা তা
- Advertisement -

আরো পড়ুুর