অরেঞ্জকান্ত
নম্রতা সাহা
লেখালেখিতে অনিমেষবাবুর ভীষণ আগ্রহ। নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। ছোটখাট একটি পত্রিকাও চালান তিনি। মোটের উপর লেখনী শক্তির জোরে তাঁর খ্যাতি বেড়েই চলেছে।
তাঁর অনেক দিনের ইচ্ছা, আন্তর্জাতিক পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করবেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানাও জোগাড় করে ফেললেন তিনি। কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনে অফিস বন্ধ থাকায় তাঁর একটু সুবিধাও হল। আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তো আর ছোটখাটো ছড়া-কবিতা দিলে ঠিক চলে না। একটা ভাল রকমের বড় গল্প-প্রবন্ধ দিলে মন্দ হয় না- এ কথা ভেবে তিনি দেড় মাসের মধ্যে বেশ বড় একখানা গল্প লিখে ফেললেন। নাম দিলেন, ‘কমলাকান্তের ভান্ডার’।
গল্পের মূল চরিত্র ‘কমলাকান্ত’। ব্রিটিশ শাসিত ভারতের কলকাতার মধ্যবিত্ত শ্রেণির এক সামান্য মাইনের চাকুরীজীবী। তৎকালীন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ভিক্ষ, খাদ্যসঙ্কট, অসহায়তা ও এক সাধারণ মধ্যবিত্ত স্বল্পমাইনের চাকুরীজীবীর জীবন কাহিনি হল গল্পের সার। নিজের গল্প নিজে পড়ে অনিমেষবাবু নিজেরই তারিফ করতে লাগলেন। খুব হৃদয়বিদারক গল্প। গল্পটা ভাল করে দেখে নিয়ে তিনি ওই আন্তর্জাতিক পত্রিকার ওয়েবসাইটে গিয়ে লেখা পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করলেন।
মুশকিলটা বাঁধলো এখানেই। ‘এন্ট্রি ল্যাঙ্গুয়েজ’-এ ‘বাংলা’ নেই। একমাত্র ‘ইংরেজি’ ভাষায় গ্রহণযোগ্য। গল্প লেখার তাড়নায় অনিমেষবাবু এই বিষয়টিকে একদম খেয়াল করেননি। হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। এর মধ্যে লেখা না পাঠালে এ বছরের মতো আন্তর্জাতিক পত্রিকায় আর লেখা প্রকাশ করা হবে না তাঁর। আবার পরের বছরের অপেক্ষা। মাথায় তো একেবারে আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। অনিমেষবাবু বাংলায় যতটা পারদর্শী ইংরেজিতে ততটাই নাকাল। কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জেনেই তিনি কাটিয়েছেন। তাঁর এত দিনের ইচ্ছা যখন পূরণের দিকে এগোচ্ছে এই পরিস্থিতিতে তিনি কিছুতেই হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। বন্ধু ও সহকর্মী নিমাইবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। তিনি ইংরাজিতে বেশ পারদর্শী। কিন্তু এত বড় গল্প এত কম সময়ের মধ্যে ইংরেজিতে অনুবাদ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না।
দাদুকে এতটা বিষন্ন থাকতে দেখে অনিমেষবাবুর একমাত্র নাতি বছর বারোর পিকু কারণ জিজ্ঞাসা করল। এই সামান্য সমস্যার জন্য দাদুর ‘মুড অফ’ দেখে সে তো হেসে লুটোপুটি। সে বলল, “দাদু, এটা আবার কোনও সমস্যা নাকি। এক্ষুনি গুগল ট্রান্সলেট-এ আমিই ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিচ্ছি।” নিমেষের মধ্যে ওই ৫০০০ শব্দের বাংলা গল্প টানটান উচ্চাঙ্গের ইংরেজি গল্পে পরিণত হল। অনিমেষবাবু তো অবাক। সঙ্গে সঙ্গে লেখা পাঠিয়ে দিলেন। একমাস পর ইমেল এল। সেটির মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে অনিমেষবাবু নাতির কাছে ছুটলেন। ইমেলটা পড়ে নাতি লাফিয়ে উঠে। বলল, “দাদু তোমার ‘অরেঞ্জ কান্ত’ সুপার হিট। বিদেশে গল্পের এই ইউনিক নামকরণ প্রচুর সাড়া ফেলেছে। তাই তোমাকে ওঁরা পুরস্কৃত করবেন।”
– “কী বললি দাদুভাই ? ‘অরেঞ্জ কান্ত’ … সে আবার কে ?”
– “আরে দাদু! তোমার বাংলার ‘কমলাকান্ত’ই তো ইংরেজিতে ‘অরেঞ্জ কান্ত’। এ বার বুঝলে তো গুগল ট্রান্সলেটের কামাল !”
দৈনিক অন্যধারা/০২ জুন ২০২২/জ কা তা