কি নির্বাক এ নগরী
সুরাইয়া আক্তার চিশতী রিমা
অদ্ভূত নিঃশব্দ এক শহরে বাস করছি
এতটাই নিস্তব্ধ, নির্বাক এ নগরী
গতকাল সন্ধ্যায় পাশের বাড়ির ছয়তলা ছাদ থেকে
মাটিতে পড়ে গিয়েছে এক ত্রয়োদশী বালক।
হঠাৎ করেই এক বিকট শব্দ
তখন আমি, বাড়ি ছিলাম না
আমার কিছুই জানা হয় নি।
বাড়ি ফিরতেই আমাদের বাড়ি বুড়ো নানু খবরটা দিল
জিজ্ঞাসা করলাম তারপর কী হল?
আর কোন খরব শুনা যায়নি।
ছেলেটা মাটিতে পড়তেই মাথাটা থেতলে গিয়েছিল।
রাস্তায় ছিটকে পড়েছিল রক্তের দাগ
পর দিন সকালে রাস্তায় রক্তের দাগ দেখেছিলাম,
ছেলেটার কোন খরব জানতে পারিনি।
যে সন্ধ্যায় ছেলেটা ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল
তখন আমি সে পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম
কোন শব্দ পাইনি, একজন মানুষ পড়ে যাওয়া পর
কোন কৌতুহলি জনতা সেখানে ভিড় করেনি।
ছেলেটার কী হল? কিভাবে পড়ল তা জানার জন্য
কোন উৎসুক জনতার দল সেখানে ছিল না।
যদিও দুদিন আগে এলাকায় নির্বাচন ছিল
রাস্তার মোড়ে মোড়ে দল বেধে মানুষ আড্ডা দিত
আর এখন কি অদ্ভুদ নিরব শহর! কি নিস্তব্ধ!
একটি চঞ্চল কিশোর হারিয়ে যাচ্ছে
কোথায় তার কী হচ্ছে, কেউ জানে না
কেউ যেন জানতেও চাই না, “যার গেছে তার যাক”
আজ দেখলাম ভিক্টরিয়া পার্কের কৃষ্ণচূড়া গাছটা
লাল আগুন হয়ে আছে, কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে।
তাকাতেই জীবন বৈচিত্রের দেখা মেলে
দুদিন আগে শীতলতায় যার সব পাতা ঝরে পড়েছিল
সে আজ নতুন আমিত্বে ডালপালা ছড়িয়েছে।
কেউ দেখে না এই শহরে, এই নগরে
মানুষগুলো ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে বাসে চড়ে
ওরা উপরে তাকায় না, মাটিতে কিছু ফুল ঝরে পরে
মাটিতে মিশে যাওয়ার জন্য নয়, ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য
ওদেরকে বলার জন্য দেখ উপরে লাল আগুন,
নরক জীবন পোড়ানো শুদ্ধতা
এই যান্ত্রিক নরাদমগুলো সুন্দর বুঝে না,
বুঝে না জীবনের পবিত্রতা
তারা বুঝে আপন স্বার্থ আদায়ের কুটিলতা
নির্জনতায় খুঁজে কূরুচিপূর্ণ জটিলতা।
এদের ভীরু চোখ উপরে তাকায় না।
দেখে না খসে পড়া তারা
তৈরি হয় না শিশুর খেলার মাঠ
শৈশবের আনন্দময় জীবন পাঠ
কি নিঃস্তব্ধ এ শহর,
কি নির্বাক এ নগরী।
এমকেএ/অনধারা