গরিবের বাজারটিতে এখন আর ১০ টাকায় তেল বিক্রি হয় না

- Advertisement -

করোনাকালের দুই বছর

দেশে গত দুই বছরে অনেকটা লাফিয়ে লাফিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেল ছাড়িয়ে গেছে সবকিছুকেই। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০১৯ সালে খোলা সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল প্রতি লিটার ৮৮ টাকা। সেই দাম ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। গত সোমবারই কোম্পানিগুলো খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করেছে।

এই বাজারে তো বেশি (পরিমাণে) কেনার লোক নাই। কিন্তু তেল আর ১০ টাকায় বেচা যায় না। আয়েশা বেগম, মুদি দোকানি, রেলওয়ে মার্কেট কাঁচাবাজার ক্যাবের হিসাবে, ২০১৯ সালে মোটা দানার মসুর ডালের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৯০ টাকা। এখন সেটা ১০০ টাকা দরে বিকাচ্ছে বাজারে। দোকানিদের এক কথা, ‘নিলে নেন, না নিলে না নেন, দাম কমানো সম্ভব নয়।’ আর মোটা চাল ছিল ৪০ টাকা কেজি। এখন ছোট বাজারে তা ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। অর্থনীতিবিদেরা সব সময় বলেন, গরিব মানুষের খাদ্য ব্যয়ের বড় অংশজুড়ে থাকে চাল, ডাল ও ভোজ্যতেল। এগুলোর দাম বাড়লে তাদের কষ্ট বাড়ে। কারখানার শ্রমিক সুহেলী যেন সেই কষ্টের কথাই বলছিলেন। সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারখানায় কাজ করেও তাঁর সংসার চলছে কষ্টে।

‘দাম তো কমছেই না’

রেলওয়ে বাজারের দোকানিরা তেলের ন্যূনতম পরিমাণের দাম ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায় উন্নীত করার আগে অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা আশায় ছিলেন, দাম কমবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দাম কমছে না; বরং বাড়ছে।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ছোট ছোট প্যাকেটে রাখা ডাল, মসলাসহ নিত্যপণ্য। মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায়

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ছোট ছোট প্যাকেটে রাখা ডাল, মসলাসহ নিত্যপণ্য। মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ের তেজকুনি পাড়ায় এই বাজারে ছোট্ট একটি মুদিদোকান আয়েশা বেগমের। স্বামীহারা আয়েশার দোকানে বিভিন্ন ধরনের ডাল, ছোলা, চিনি, মসলা ও লবণ—সবকিছুর পুঁটলি ১০ টাকা। শুধু সয়াবিন তেলের পুঁটলি ২০ টাকা। আয়েশা খাতুন বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে ১৭০ টাকা হিসাব ধরে বিক্রি করেন। এ দরে ১০০ মিলিলিটার তেলের দাম হয় ১৭ টাকা। পরিমাণে কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে ছোট এক পুঁটলি তেল ২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। জানতে চাইলে আয়েশা বলেন, ‘এই বাজারে তো বেশি (পরিমাণে) কেনার লোক নাই। কিন্তু তেল আর ১০ টাকায় বেচা যায় না। বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে। বিপরীতে বেড়েছে ব্যয়। তাই আয় কাঠামোর নিচের শ্রেণিতে থাকা মানুষ কৃচ্ছ্রসাধনে ব্যস্ত। সহজ ভাষায় যাকে খরচ কমানো বলা যায়। যেমন তেজগাঁওয়ের তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা মো. আকাশ দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী ও নিজে ঢাকায় থেকে কাজ করেন। নিজের একটি চুল কাটার সেলুন আছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর ব্যবসাটি ভালো চলছে না।

নিম্ন আয়ের মানুষের বাজার ব্যয়ের বড় অংশই যায় চাল, ডাল ও তেলের পেছনে। এক ক্রেতা ২০ টাকার তেল নিয়ে ফিরছেন। মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায়

নিম্ন আয়ের মানুষের বাজার ব্যয়ের বড় অংশই যায় চাল, ডাল ও তেলের পেছনে। এক ক্রেতা ২০ টাকার তেল নিয়ে ফিরছেন। মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ের তেজকুনি পাড়ায় তাঁর ভাষ্য, করোনার মধ্যে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ঘন ঘন চুল-দাড়ি কাটাচ্ছেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের নিয়মিত চুল কাটানোর তাগিদ নেই। বয়স্করা করোনার ভয়ে ঘর থেকে বের হন না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যয় নানা ভাবে বেড়েছে। রিকশাচালক কালাম হোসেন বলছিলেন, মালিক রিকশার দৈনিক জমা ২০ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা করেছেন। এদিকে সরকারি সংস্থাগুলো পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এমতাবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষের খাওয়া থাকা কঠিন।

দৈনিক অন্যধারা/এইচ

- Advertisement -

আরো পড়ুুর