শিক্ষক আপনের চেয়েও আপন
পারভীন আকতার
কয়েকদিন আগের ঘটনা।স্কুলে কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষকের অগোচরে অনেক কুকর্ম করে বেড়ায়।তা কিছু চৌকস শিক্ষক ধরে ফেলেন।আমি আবার হাবাগোবা। শিশু মানেই ভাবি অতি পবিত্র। ভাঁজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না!কিন্তু না,তলেতলে ওরা অনেক এগিয়ে দুষ্টুকূলের শিরোমণি! বিশেষ করে উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার চেয়ে স্কুলে বন্ধু সহপাঠীদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে রিপ্রেশ হতে ভালোবাসে।আজাইরা সময় কাটান কার না ভাল লাগে!স্কুলের কোন সমস্যা আমার কানে আসলে আমি দ্রুত সমাধানের পথ ধরি।কালক্ষেপণ করি না।কারণ শিশুদের ভুল পথে যেতে দেওয়া যাবে না।তখন আমি ক্ষণে মমতাময়ী মা হই আবার ক্ষণে কঠোর শাসকের অগ্নিমূর্তির রূপ ধরি।যে যাই ভাবুক আমার টার্গেট শিশুর মাথা থেকে ভূত তাড়ানো।
এতটুকু বয়সে শিশুরা প্রেমের কী বুঝে?স্যাোসাল মিডিয়া এই অবুঝ শিশুদেরও অকাল পাকনা বানাতে ছাড়ছে না।তারা ভালোবাসি বলে চিরকুট লেখে যা লিখতে পরিণত বয়সে আমাদের হাত কাঁপতো।যাই হোক প্রমাণ সাক্ষীসহ হাজির করা হলো।শিশুর অভিভাবকদের ডাকালাম। সব শুনে তারা অঝোর কাঁদলেন।না,তখনো সমাধান হয়নি।পরদিন প্রথমে আলাদা করে বুঝালাম পরে আবার সবার সামনে বুঝিয়ে কড়া ডোজ দিলাম যাতে সবাই সতর্ক হয়।কারণ ওরা এখন শিক্ষকদের নজরদারিতে আছে।ছোট মানুষ, না বুঝে ভুল করতেই পারে।
এভাবে কাটছিল দিন।পরে দেখলাম ছেলেটা অনেকটা সোজা হয়েছে মানে লাইনে চলে এসেছে। চুল টুল কেটে কাপড়চোপড়ে পুরোটা ভদ্রলোক। আমাদের কথাগুলো তার হৃদয়ে দাগ কেটেছে।মা বাবাও সচেতন হয়েছেন।কিন্ত মেয়েটা দেখি আমাকে এড়িয়ে চলে।দেখলে সালামও দেয় না পর্যন্ত! খুব রাগী ভাব।মনে হল সে আমাকে মারতে পারলে বেশি শান্তি পেতো।পারিবারিক শিক্ষার অভাব যথেষ্ট। সঠিক পথ দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের চাপে রাখা, ভাল চাওয়া,ছেলে মানুষী পরিহার করার আদেশ উপদেশ দেয়া কোন শিক্ষক মা বাবার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।নিশ্চয়ই তারা বড় হয়ে বুঝবে।আমি পাগলের মত ক্লাসে পড়াতাম আর ওরা কী করত?মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি।এতদূর থেকে শারীরিক প্রচন্ড অসুস্থতা সত্ত্বেও স্কুলে যাই।কারণ আমার হৃদয় কোষ আমার স্কুল, আমার শিক্ষার্থীরা।ওদের সাথে যতক্ষণ থাকি, আমি ভাল থাকি।আমোদে দিন কাটে আমার।পড়াতে,শেখাতে ভালোবাসি।কিন্তু সব আকামের ফ্রীর যুগে ঢুকে আমরা শিক্ষক হয়ে যেন অপরাধ করে ফেলেছি।আজ শিক্ষার্থী পেটায় শিক্ষককে!মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক।ছাত্রের হাতে শিক্ষক খুন!কী বর্বর যুগে রয়েছি আমরা!আল্লাহর দোহাই লাগে ইন্টারনেট চালানো সীমিত করে দিন, বয়স বেঁধে আইন করে দিন।ভার্চুয়াল দুনিয়ায় চলছে আজকালকার শিক্ষার্থীদের মন মেজাজ।এতে সামাজিক নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনছে ভয়াবহ রূপে। মান সম্মান ইজ্জত করাও ভুলতে বসেছে মানুষ!শিক্ষকদের সম্মান মর্যাদা ফিরিয়ে দিন।