ছবি: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। (সংগৃহীত)
আগামী ২০২৪ ও ২০২৬ সালে বাংলাদেশের বড় বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ধাক্কা আসবে বলে জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ‘বাংলাদেশের বৃহৎ ২০টি মেগা প্রকল্প: প্রবণতা ও পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বহু মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের সময় ঘনিয়ে আসছে। অর্থাৎ সাশ্রয়ী সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে দেনা। এর মধ্যে প্রথম চাপটা আসবে চীন থেকে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, বাংলাদেশে ২০টি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৭০ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন ডলার হচ্ছে বিদেশি ঋণ। রাশিয়া, জাপান ও চীনকে দিতে হবে এসব ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ১৭ শতাংশে নিচে বৈদেশিক দায়-দেনা ও ১৭ শতাংশের ওপরে হচ্ছে অভ্যন্তরীণ দায়-দেনা। লক্ষণীয় হলো- এটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। দায় দেনা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে ২০১৮ সালের পর। ঋণের বড় অংশ হিসেবে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ যাবে রাশিয়ার কাছে, দ্বিতীয় অংশ হিসেবে প্রায় ৩৫ শতাংশ ঋণ যাবে জাপানের কাছে, আর তৃতীয় অংশ হিসেবে প্রায় ২১ শতাংশের ওপরে যাবে চীনের কাছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এই মুহূর্তে রাশিয়া, জাপান ও চীনের কাছে সব থেকে বেশি ঋণদার। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় অংকের ঋণ ২০২৪ ও ২০২৬ সালে পরিশোধ করতে হবে। অংকের হিসাবে চীন তৃতীয় হলেও ঋণ পরিশোধের সময়সূচি অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে চীনকেই। বিরাট এ ধাক্কা সামাল দেওয়ার জন্য বাড়াতে হবে কর আদায়। কারণ এখনও কর জিডিপির পরিমাণ ১০ এর নিচে। তাই অর্থনীতির জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশকে একটি সুদৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো- রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-১, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রজেক্ট, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৫, লাইন-৬, পদ্মা ব্রিজ রেল সংযোগ, ফোর্থ প্রাইমারি অ্যাডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, এক্সপানশন হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসির পাওয়ার সিস্টেম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, সেফ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প ও কভিড ইমারজেন্সি রেসপন্স ও প্যান্ডামিক প্রিপারেডেন্স প্রকল্প ইত্যাদি।
এসব প্রকল্পের ব্যয় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা (৭০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার)। যার ৬১ শতাংশ আসে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে।
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ২০টি মেগা প্রকল্পের ১৫টি প্রকল্পই সড়ক ও যোগাযোগসহ ভৌত অবকাঠামোগত খাতে। বাজেটের এক তৃতীয়াংশই মেগা প্রকল্প খাতে ব্যয় হচ্ছে। মেগা প্রকল্পগুলো যতই যৌক্তিক হোক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে অবহেলার সুযোগ নেই। সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের পর নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের হার দুর্বল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ১০ ভাগের নিচে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, বাকি থাকবে সবগুলো প্রকল্পের কাজ। সময় সময় বাড়ানো হয়েছে ২০টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি প্রকল্প ব্যয়। আমি মনে করি, ২০২৪ ও ২০২৬ সালে দায়-দেনা পরিশোধে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সাহায্য চাওয়াটা ইতিবাচক।
অনুদানের বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোতে অনুদান এসেছে জাতিসংঘ ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে।
দৈনিক অন্যধারা/২১ জুলাই ২০২২/জ কা তা