শিক্ষিকা খাইরুন নাহার (৪০) ও কলেজছাত্র মামুন (২২) (ছবি: সংগৃহীত)
ভালোবাসা কোনো বাঁধা, মানে না কোনো বয়সসীমা, ভালোবাসা মানে না কোনো জাত-ভেদ। ভালোবাসা হলো দুটি মনের এক হয়ে যাওয়া। তারই বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে কলেজছাত্র মামুন (২২) ও শিক্ষিকা খাইরুন নাহার (৪০) দম্পতি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। ২০২১ সালের ২৪ জুন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে প্রথম আলাপ হয় এক কলেজছাত্র ও শিক্ষিকার মাঝে। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মাঝে। ৬ মাস চুটিয়ে প্রেম। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। তাদের বিয়ের বিষয়টি সপ্তাহ খানেক আগে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। তারা হলেন- মামুন হোসেন (২২) ও খাইরুন নাহার (৪০) দম্পতি। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় তাদের বাড়ি। বর্তমানে তারা নাটোর শহরে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন।
জানা গেছে, গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোছা. খাইরুন নাহার। প্রথমে বিয়ে হয়েছিল রাজশাহীর বাঘায়। সেই সংসারে তার এক সন্তানও রয়েছে। পারিবারিক কলহ-বিবাদে সে সংসার আর বেশি দিন টিকেনি তার। তারপর একাকী জীবন কেটে যায় অনেক দিন। এরই ভেতর ২২ বছরের যুবক মামুনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামে বাড়ি মামুনের। নাটোর এন এস সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি।
কলেজ শিক্ষিকা খাইরুন নাহার বলেন, ‘প্রথম স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর মানষিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। মানষিক কষ্টে কাটতো প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত। একবার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম আত্মহত্যা করার। ঠিক এমন সময়ে মামুনের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়। মামুন আমাকে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে এবং আমার খারাপ সময় পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছে। আমাকে সে মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাসে। আর সেই ভালবাসা থেকেই আমরা দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের বিয়ের পর আমার পরিবার মেনে না নিলেও মামুনের পরিবার ঠিকই মেনে নিয়েছে।
খাইরুন নাহার আরও বলেন, ‘সামাজিকভাবে বিভিন্ন মহলে নানা কুৎসিত মন্তব্য থাকলেও সেসব তোয়াক্কা না করে নতুন সংসারে সুখেই দিন কাটাচ্ছি। আজীবন মামুনের সঙ্গে সংসার করে যেতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’
মামুন হোসেন বলেন, ‘মানুষের মন্তব্য কখনই গন্তব্যকে ঠেকাতে পারে না। কে কি বললো সেগুলো মাথায় না নিয়ে নিজেদের মতো সংসার গুছিয়ে নিয়ে জীবন শুরু করেছি। সকলের কাছে দোয়া চাই ‘
ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, নাটোরে থেকে এনএস কলেজে মামুনের পড়ালেখা করে সেটা জানি। কলেজ শিক্ষিকাকে বিয়ে করার বিষয়ে আজ ফেসবুকে দেখলাম। শুনেছি ওই মেয়েটাও (খায়রুন নাহার) নাটোরে বাসা নিয়ে থাকে। সেখান থেকেই কলেজ করে। তবে তারা বিয়ে করলেও সে ঘটনা এতদিন জানাজানি হয়নি।
খুবজীপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবু সাইদ বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছেন খায়রুন নাহার। রোববার (৩১ জুলাই) ফেসবুকের এই খবর দেখে ঘটনাটা জানলাম। তবে ওই শিক্ষিকা বছর খানেক আগে বলেছিলেন, তিনি নাটোর শহরে বাসা নেবেন। এতটুকুই জানতাম। কলেজে আসলে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
দৈনিক অন্যধারা/৩১ জুলাই ২০২২/জ কা তা