চায়ের ভরা মৌসুমে পারিশ্রমিক মোটামোটি পেলেও বছরের একটা বড় সময় নারী চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি দেয়া হয় ১৫০ টাকা। এখান থেকে একটা অংশ যায় কর্তাদের সন্তুষ্ট করতে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় শ্রমিক সর্দারকে খুশি করতে দিতে হয় উৎকোচ। অন্যথায় কাজ থেকে দেয়া হয় অব্যাহতি। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে শোষণের শিকার হচ্ছেন পঞ্চগড়ের এম. এম টি এস্টেটের নারী চা শ্রমিকরা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের পাহাড়বাড়ি এলাকার এই চা বাগানে কাজ করেন শতাধিক নারী শ্রমিক। তবে এই শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেই কারও। এই শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করেন মো. হানিফা নামের এক ব্যক্তি। শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, হয়রানি করাসহ বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তবে এম. এম টি এস্টেটের প্রভাবশালী এই শ্রমিক সর্দারের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলতে চান না অসহায় নারী চা শ্রমিকরা। প্রত্যেকেই কর্মহীন হওয়ার অজানা আতঙ্কে। অভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরে প্রকাশ করলেই তাদের পড়তে হয় তোপের মুখে। কারণ, সর্দার হানিফার সঙ্গে টি-এস্টেটের ব্যবস্থাপক সোহেল রানার সখ্যতা বেশ।
শ্রমিকদের অভিযোগ, সর্দার হানিফার কথা মতো না চললেই কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পুনরায় কাজে আসতে চাইলে তার চাহিদামত দিতে হয় উৎকোচ। তার বিরুদ্ধে ম্যানেজার বরাবর অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না; বরং নানান সমস্যার সম্মুখীন হন অভিযোগকারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে ১৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করতে হয় আমাদের। সারাদিন কাজ করে এক কেজি সয়াবিন তেল কেনার সামর্থ্য হয় না। আবার এখান থেকে সপ্তাহে ১০০ টাকা করে দিতে হতো তাকে। কিছুদিন থেকে দেই না- এজন্য আমাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন তিনি। অশালীন বাক্যে গালিগালাজও করেন। ম্যানেজারকে জানালে তিনি উল্টো আমাদেরকেই চুপচাপ থাকতে বলেন। আমরা এই হানিফার কাছ থেকে পরিত্রাণ চাই।
তারা বলেন, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। তুলনামূলক পারিশ্রমিক খুবই কম। তারপরও জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হয়। নূন্যতম ২০০ টাকা মজুরির দাবি করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। বেশি দাবি জানালে কাজ থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো. হানিফা। তিনি বলেন, ‘আমিও সেখানে কাজ করি, শ্রমিকদের কাছ থেকে আমি টাকা নিতে যাবো কেন? যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছে এগুলো ভিত্তিহীন।’
এম. এম টি-এস্টেটের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা বলেন, ‘শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। আর মজুরি ১৫০ টাকা দেয়া হয় যখন চা বাগানে পাতা থাকে না তখন। মৌসুম শুরু হলে পাতা তোলার জন্য শ্রমিকদের কেজি প্রতি ৪ টাকা দেয়া হয়। এতে একেকজন দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করেন।’
এ বিষয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে একজন শ্রমিকের মজুরি মাত্র ১৫০ টাকা হতে পারে না। এটা বাড়ানো উচিত। আর শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হবে।’
.
.
খ.র