বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ইন্তেকাল

- Advertisement -
- Advertisement -

অন্যধারা ডেস্ক:

(ফাইল ছবি: বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী)

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী আর নেই। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটের সময় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক স্বদেশ রায়।

লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন বলে পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে।

তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় ও কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা ছিলেন। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী স্বনামধন্য এই সাংবাদিক স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন।

৮৭ বছর বয়সী বর্ষীয়ান এ সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের এক জলবেষ্টিত গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৫০ সালে। তখন ‘দৈনিক ইনসাফ’ পরিচালনা করতেন মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ। ১৯৫১ সালে অনুবাদক হিসেবে ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় কাজ করেন। এছাড়াও মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।

১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে লন্ডনে যান। এরপর তার প্রবাসজীবনের ইতিহাস শুরু হয়।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান (১৯৬০), নাম না জানা ভোর (১৯৬২), নীল যমুনা (১৯৬৪), শেষ রজনীর চাঁদ (১৯৬৭), কৃষ্ণপক্ষ (১৯৫৯), সম্রাটের ছবি (১৯৫৯), সুন্দর হে সুন্দর (১৯৬০), ডানপিটে শওকত (১৯৫৩), সম্পাদনা: বাংলাদেশ কথা কয় (১৯৭২), ‘আমরা বাংলাদেশী নাকি বাঙ্গাল ‘সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’, ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি (২০০৭)’।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী।

দৈনিক অন্যধারা/১৯ মে ২০২২/জ কা তা

- Advertisement -

আরো পড়ুুর