সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার দায়ে কক্সবাজারের টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরুকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম
তিনি বলেন, টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থেকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার নির্দেশ দিয়েছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠছে। সেদিন একজন সাংবাদিকের সাথে টেকনাফের ইউএনও যে ভাষায় কথা বলেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘দেশে ৪৯২টি উপজেলা। পাঁচশ লোকের (ইউএনও) মধ্যে সবাই ভালো হবে সেটা আপনি আশা করেন কীভাবে। তাকে আমরা ওএসডি করার নির্দেশ দিয়েছি। এরপর আদালত তার বিরুদ্ধে কী নির্দেশনা দেয় সেই অনুযায়ী অ্যাকশন নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বলে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি গতকাল বিভাগীয় কমিশনারদের সম্মেলনে শক্তভাবে বলেছি, কমিশনরারা যে জেলায় যাবে সব অফিসারকে নিয়ে বসবে, তাদের আচার-আচরণ, চালচলন… এটা তো সাংবাদিকদের বিষয় নয়। এই ভাষায় তো আপনি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। আপনি যত ম্যানেজমেন্টে থাকবেন, যত উপরের দিকে থাকবেন তত মাথা রেখে কথাবার্তা বলতে হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয় একটি সংবাদ। প্রকাশিত সংবাদে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু তার অফিসিয়াল নম্বর থেকে কল করে ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। গালিগালাজের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
পরে শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে হিলডাউন সার্কিট হাউসে কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময়ে টেকনাফের ইউএনও কায়সার খসরু অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার জন্য ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধির কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।
রোববার (২৪ জুলাই) ইউএনও কায়সার খসরুর ভাষা মাস্তানের চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। সাংবাদিককে ইউএনও’র অকথ্য ভাষায় গালাগালি দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য এবং একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে এমন অশ্লীল শব্দ কাম্য নয় বলে জানান সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। এরপর সাংবাদিককে ইউএনও’র গালিগালাজের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সাথে কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিককে এ তথ্য আদালতকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
দৈনিক অন্যধারা/২৫ জুলাই ২০২২/জ কা তা